প্যারিস হামলায় নিহত এক নারীর স্বামীর ফেসবুক পোস্ট নিয়ে তোলপাড়

গত শুক্রবারে প্যারিসের সন্ত্রাসী হামলায় নিহত এক নারীর স্বামী তার ফেসবুকে লিখেছেন আশ্চর্য সুন্দর কিছু কথা। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি জঙ্গি সংগঠন আইএস কে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ‘তোমরা যে ভয়ঙ্কর অন্যায় করেছ তার জন্য তোমরা আর যাই পাও না কেন, আমার ঘৃণা পাবেনা।’ এই ভদ্রলোকের নাম আন্টনি লিরিস। সম্প্রতি প্যারিস হামালায় যে ১২৯ জন মানুষ মারা যায়, লিরিসের স্ত্রী তাদের মধ্যে একজন। তাদের ১৭ মাস বয়সি একটি পুত্র সন্তান আছে।

স্ত্রীর মৃত্যুর পর শোকে কাতর আন্টনি লিরিস নিরুপায় হয়ে তার ফেসবুকের পাতায় আইএসকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ‘শুক্রবার রাতে তোমরা চুরি করে কেড়ে নিয়েছ একজন অসাধারণ মানুষের প্রাণ, সে আমার ভালবাসার মানুষ, আমার পুত্র সন্তানের মা কিন্তু তোমরা এত কিছুর পরেও আমার ঘৃণা পাবেনা। আমি জানি না তোমরা কারা, আমি জানতেও চাইনা, শুধু জানি তোমরা কেবল মৃত প্রাণ।’

‘আমি তোমাদেরকে ঘৃণা উপহার দেবনা। তোমরা এটা ধরেই রেখেছ। ঘৃণার জবাবে পাল্টা ঘৃণাই তোমাদেরকে বানিয়েছে এইরকম। তোমরা যদি মনে কর এতে আমি ভয় পাব, মানুষকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করব, নিরাপত্তার জন্য আমার স্বাধীনতাকে বিসর্জন দেব তাহলে তোমরা ভুল করবে।’

আইএস জঙ্গিরা প্যারিসের খেলার স্টেডিয়াম এবং থিয়েটারহল সহ আরো বেশ কয়েকটি জায়গায় একসাথে হামলা করে। বাতাক্লান থিয়েটার হলে তখন গানের কনসার্ট চলছিল। থিয়েটারের এই হামলাটাই ছিল সবচেয়ে মারাত্মক। সেখানে উপস্থিত মানুষের মধ্যে ৮৯ জন হামলায় প্রাণ হারান। আন্টনি লিরিসের স্ত্রী ছিলেন এদেরই একজন। তিনি তার স্ত্রীর মৃতদেহ দেখার বর্ণনা নিজেই দিয়েছেন-

‘রাতদিনের অনন্ত অপেক্ষা শেষে আজকে সকালে তাকে দেখতে পেলাম। বার বছর আগে আমি প্রথম যখন তার প্রেমে পড়েছিলাম তখন তাকে যতটা সুন্দর লাগছিল, শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘর থেকে বের হওয়ার সময় তাকে যতটা সুন্দর লাগছিল, এখনো তাকে ঠিক ততটাই সুন্দর লাগছে। অবশ্যই আমি শোকে কাতর, আমি তোমাদের এই সাময়িক বিজয় মঞ্জুর করলাম, কিন্তু এটা বেশিক্ষণ থাকবে না। আমি জানি আমার স্ত্রী প্রতি মুহূর্তে আমাদের সাথে থাকবে এবং স্বর্গে গিয়েও আমরা একে অন্যকে খুঁজে পাবো মুক্ত প্রাণে যা কিনা তোমরা কখনোই পাবেনা।’

‘আমি এবং আমার ছেলে, এই দুজনে এখন বিশ্বের সমস্ত সেনাবাহিনীর চাইতেও শক্তিশালী হবো। আমি আর এক মুহূর্ত সময়ও তোমাদের পেছনে নষ্ট করতে পারবো না কারণ আমার ছেলে ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। তার বয়স মাত্র ১৭ মাস, সে এখন তার খাবার খাবে ঠিক অন্যদিনের মত, তারপর আমরা একসাথে খেলব ঠিক অন্যদিনের মত এবং এই ছোট ছেলেটা তার বাকি জীবনে আনন্দিত হতে ভয় পাবে। কারণ না, তোমরা তার থেকেও কোন ঘৃণা পাবে না।’



মন্তব্য চালু নেই