পৃথিবীর বুকে মঙ্গলগ্রহ “আতাকামা মালভূমি”

চারপাশে যেদিকেই তাকান না কেন, কেবল মানুষ আর মানুষ। মানুষে মানুষে যেন একেবারে গিজগিজ করছে পুরো পৃথিবী। আর শুধু কি মানুষ? এক ইঞ্চিরও দশ ভাগের এক ভাগ প্রাণী থেকে শুরু করে বিশাল সব পশু-পাখি, কী নেই পৃথিবীতে। মাটির তলা থেকে আকাশের শেষ সীমানা অব্দিও ছড়িয়ে রয়েছে প্রাণের এই অস্তিত্ব। কিন্তু আপনি কি জানেন, এতসব প্রাণী আর প্রাণীদের আবাসের ভীড়েও এই পৃথিবীর উপরেই রয়েছে এমন একটি স্থান যেখানে আজ অব্দি মানুষ কেন, বসত গড়েনি কোন প্রাণীও! আর পৃথিবীর বুকে রয়ে যাওয়া এই সর্বশেষ প্রাণহীন স্থানটিকে নিয়েই আজকের এই আয়োজন।

বলছিলাম উত্তর চিলিতে অবস্থিত আতাকামা মালভূমির কথা।

অন্যান্য সব মরুভূমিতে মাকড়শা কিংবা ছোটখাটো প্রানী আর মানুষ বাঁচতে পারলেও আতাকামাকে পৃথিবীর সেই সবচাইতে শুষ্ক স্থান বলে ডাকা হয় যেখানটায় কখনোই দেখা যায়নি কোন প্রাণীর হৃদস্পন্দন। বছরে গড়ে এক ইঞ্চি বৃষ্টিপাত ছাড়া টানা ৫০ বছর ধরে বলতে গেলে প্রায় পুরোপুরি পানির স্পর্শ ছাড়াও এটি ঠিকই তবু টিকে আছে পৃথিবীতে ( সফটপিডিয়া ) পৃথিবীর মঙ্গলগ্রহ হিসেবে। যাকে দেখে কবিরাও লিখেছেন প্রাণহীনতার কবিতা। তবে অনেকের মতে আতাকামা একেবারে প্রাণহীন নয়। এর ভেতরে থাকা পাথরগুলোর ভেতরে রয়েছে কিছু প্রাণের অস্তিত্ব ( বিবিসি )। পাথরের ভেতরে খানিকটা ভেজা ভাব থেকেই নিজেদের পানির চাহিদা পূরণ করে এই মাইক্রোঅরগানগুলো। এটাই ধারনা এমনটা দাবী করে থাকা মানুষগুলোর।

কিন্তু এত এত তাপের ভেতরে কি করে কোটি কোটি বছর ধরে বংশবিস্তার করে যেতে পারে কোন প্রাণ?

উত্তরটা পাওয়া গিয়েছে সম্প্রতি। কিছুদিন আগে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছে এমন একটি প্রাণকে যেটি প্রচন্ড তাপ গ্রহণ করার পরেও ঠিক নিজের বংশবৃদ্ধি ও বৃদ্ধি চালিয়ে যেতে পারে। হাইপোথার্মাইল মেটাঅর্গান নামক এই প্রাণের মতনই কোন একটি প্রাণ রয়েছে এই আতাকামা মরুভূমির পাথরগুলোর ভেতরে। এমনটাই ধারনা সবার।

তবে এসব কিন্তু শুধু ধারণাই। এখনো পর্যন্ত কেউই চিলির এই প্রাণহীন স্থানটিতে কোন প্রাণের অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে পারেননি। ভাবছেন, এমন শুস্ক একটি স্থানে ঘুরতে যাওয়াটা একেবারেই বোকামি হবে। কিন্তু না! আদতে অনেকেই ভ্রমণের জন্যে বেছে নেন আতাকামাকে। বিশেষ করে আতাকামার ভেতরে থাকা পর্যটকদের জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা ছোট্ট গ্রাম “সেন পেদ্রো দে আতাকামা” খুব সহজেই আপনাকে কয়েকদিনের জন্যে অভ্যর্থনা জানাতে পারে এই মরুভূমিতে।

শুধু ছোট্ট গ্রামটিই নয়, আতাকামা মরুভূমিতে রয়েছে লবনের সমতল খাল। যেটাতে কিনা আশপাশের পাহাড়ের ছায়াও দেখতে পাবেন আপনি। তবে ভুলেও কখনো এই খালের পানি খাওয়ার চেষ্টা করবেননা। ফলাফলটা বেশ ভয়ংকরই হবে বলা যায়।

শুনতে হাস্যকর মনে হলেও, আতাকামা বসবাসের জন্যে পৃথিবীবাসীর কাজে না এলেও নাসার জন্যে বেশ ভালো সাহায্য করেছে এটি। বিশেষ করে মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে আতাকামাকে সবসময়েই ব্যবহার করে এসেছে নাসা (নিউ সাইন্টিস্ট )। তবে যেভাবেই আর যে দিক দিয়েই টিকে থাকুক না কেন আতাকামা, পৃথিবীর বুকে সত্যিই এক অনন্যতার দৃষ্টান্ত স্থাপনা করেছে এটি।



মন্তব্য চালু নেই