নোবেলজয়ী ওবামা একি করলেন!

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মডেল যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট বারাক হুসেইন ওবামা, জুনিয়র। ২০০৮ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহন করেন। শান্তি ও সুরক্ষার শপথ নিয়ে তিনি ক্ষমতায় আসার এক বছরের মাথায়, অর্থাৎ ২০০৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান তিনি। যে প্রেসিডেন্টকে নির্বাচনের এক বছর আগেও বিশ্বের মানুষতো দূরের কথা যুক্তরাষ্ট্রেরই সব মানুষ চিনতো না, তিনি কিভাবে শান্তিতে নোবেল পেলেন তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। তবে যাই হোক, শুধু মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবেই নয়, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবেও তিনি অগ্রগন্য। কিন্তু শান্তিতে নোবেল পাওয়ার আগে তিনি কি করেছেন সেটা না হয় আলোচনা নাই করলাম, কিন্তু নোবেল প্রাপ্তির পরবর্তী সময়ে তিনি শান্তির পক্ষে কতটুকু করলেন তার হিসেব করা যায় সহজেই।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্র শান্তির উদ্দেশ্যে মোট ছয়টি দেশের উপর ২৩ হাজার ১৪৪টি বোমা নিক্ষেপ করেছে। চলতি মাসের ৭ তারিখ মিকা জেঙ্কো নামের এক সংবাদিক যুক্তরাষ্ট্র কোন কোন দেশে কি পরিমান বোমা নিক্ষেপ করেছে তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছিলেন। সেই তালিকায় দেখা যায়, ২০১৫ সালে ইরাক এবং সিরিয়ায় ২২,১১০, আফগানিস্তানে ৯৪৭, ইয়েমেনে ৫৮, সোমালিয়ায় ১৮ এবং পাকিস্তানে ১১টি বোমা নিক্ষেপ করেছে। পরিসংখ্যানটি দেখে সহজেই বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র তার বোমা হামলার শতকরা ৭৭ ভাগই ইরাক এবং সিরিয়ার উপর চালিয়েছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত দেশগুলো যেখানে বোমা নিক্ষেপ করেছে ২৮ হাজার ৭১৪টি।

গত ১৭ মাসে ওয়াশিংটন দশ হাজারের বেশি বোমা নিক্ষেপ করেছে স্রেফ দায়েশ(ইসলামিক স্টেট) এবং অন্যান্য ইসলামি সশস্ত্র দলগুলোকে ধ্বংস করার জন্য। যদিও কৌশলগত দিক দিয়ে এই পরিমান বোমা নিক্ষেপ করার পরেও যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী দমনে ব্যর্থ। কারণ পরিসংখ্যান বলছে, ২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তানে মার্কিন আধিপত্যবাদিতা শুরু হলেও, এখনও তালেবানদের দখলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অঞ্চল দখল হয়ে আছে। শুধু দখলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, নতুন নতুন এলাকায় তাদের কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হচ্ছে। পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে সংস্কার ও দায়েশের সঙ্গে প্রত্যক্ষ লড়াইয়েও অংশগ্রহন করছে তালেবানরা।

ওয়াশিংটন সন্ত্রাস বিরোধী কৌশল নির্ধারণের ক্ষেত্রে কথিত জিহাদিদের হত্যাকেই এগিয়ে রেখেছিল। যে কারণে সশস্ত্র দলগুলোর মধ্যে এর বাইরেও যে পরিবর্তন আসছে এবং তারাও যে নতুন কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছে তা বুঝে উঠতে পারেনি ওয়াশিংটন। আর যে কারণে এত বোমা নিক্ষেপ করার পরেও দায়েশের তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি ওয়াশিংটন এবং দায়েশের অভ্যন্তরে যে ঠিক কি চলছে তারও কোনো তথ্য নেই ওবামা প্রশাসনের কাছে।

২০১৪ সালে সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স এজেন্সি(সিআইএ) জানিয়েছিল যে দায়েশের সদস্য সংখ্যা কমবেশি বিশ হাজার থেকে একত্রিশ হাজার। যদি ভুল না হয়ে থাকে, তাহলে ওই তথ্য প্রদান করেছিলেন কর্ণেল স্টিভ ওয়ারেন। অবশ্য পরবর্তী সময়ে পেন্টাগন দাবি করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৫ হাজার দায়েশ সদস্য মারা যায়। শুধু তাই নয়, পেন্টাগন তখন দাবি করেছিল যে, তাদের বোমা হামলায় জঙ্গিদের পাশাপাশি মাত্র ছয়জন বেসামরিক নাগরিক মারা গিয়েছিল। কিন্তু ওবামা প্রশাসনের কথাই যদি সত্যি হয়, তাহলে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে দায়েশের নামে যারা লড়াই করছে তারা কারা?

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কথা বাদ দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের আভ্যন্তরীন রাজনীতিতেও ওবামা প্রশাসন খুব একটা সফল নয়। ক্যালিফোর্নিয়া, মিশিগান থেকে শুরু করে কলোরাডো পর্যন্ত বর্ণবাদ ইস্যুতে ওবামা প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ দেখিয়েছে। বিনা অপরাধে এক কৃষ্ণাঙ্গ শিশুকে গুলি করে হত্যার পরেও সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে কোনো সাজা না দিয়েই ছেড়ে দেয়া হয়। একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে গণতন্ত্র রপ্তানির নামে যে সহিংসতা চালানো হচ্ছে তাতেও মার্কিন প্রশানের বেশ উস্কানি রয়েছে। এমনকি নিজের দেশে বন্দুক নিয়ন্ত্রন আইনটি পর্যন্ত তিনি পাশ করতে পারেননি, উল্টো প্রত্যেক মার্কিন নাগরিক যাতে অস্ত্র বহন করতে পারে সেবিষয়টি নিশ্চিত করলেন তিনি।

উপরোক্ত প্রত্যেকটি তথ্য শুধু ইন্টারনেট নয়, বিভিন্ন সময় অনেক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সাবেক বুশ প্রশাসন আমলে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছিল বিশ্বব্যাপী, সেই রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেছেন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তাহলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে কোন শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। যেখানে তাদেরই অন্যায্য যুদ্ধের কারণে সিরিয়ার চার লাখ মানুষ স্রেফ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। সোমালিয়ায় এখনও না খেতে পেয়ে কোলের সন্তানকে মরুভূমিতে ত্যাগ করতে হচ্ছে মাকে। বিশ্ব শান্তিতে নোবেল আজ বিশ্ব প্রহসন হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ শান্তিতে নোবেল ও বারাক ওবামার কর্মকাণ্ড নিয়ে তাই বিশ্ব বিবেকের কাছে প্রশ্ন থেকেই যায়।



মন্তব্য চালু নেই