নিয়ম লঙ্ঘন করে রাজধানীতে জমজমাট পশুহাট

রাজধানীতে কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাটের ইজারাদারদের যেন তর সইছে না। ইজারা পেতে না পেতেই নিয়ম লঙ্ঘন করে নির্ধারিত সময়ের আগেই রাজধানীর প্রায় সবকটি হাটে পশু তোলা শুরু করে দিয়েছেন তারা।

ইতোমধ্যে বেশকিছু পশুও এসেছে সেখানে। খালি জায়গা আর মাঠে সীমাবদ্ধ নেই কোনো পশুর হাট। হাটের আশপাশের সড়কে বাঁশ পুঁতে তৈরি করা হয়েছে পশু রাখার জায়গা। পাশাপাশি প্রচারণাও চলছে পুরোদমে।

রোববার সরেজমিন ঘুরে গেছে, রাজধানীর লালবাগ শ্মশানঘাট এলাকায় হাজী দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ ও আশপাশের এলাকায় পশু বাঁধার জন্য বাঁশের খুঁটি পোতা হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাসহ আশপাশের খালি জমিতেও বাঁশ পোতা হয়েছে।  মাঠের পূর্বগেটের বাইরে হাট নিয়ন্ত্রণের জন্য মাইক, লাইট, টাওয়ার স্থাপনের কাজ শেষ করা হয়েছে।

আরমানিটোলা হাটের বিকল্প হিসেবে এই হাটটি এবারই নতুন চালু করা হয়েছে। এই হাটটি তৃতীয়বার দফা টেন্ডারে ১ কোটি ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দর উঠেছে। কাঙ্ক্ষিত না হলেও গত বৃহস্পতিবার এই দরেই হাটটি ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত কতৃপক্ষ। কিন্তু আজ রোববার পর্যন্ত এ হাটের কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। তার আগেই হাট বসানোর কাজ শেষ করছেন ইজারাদার।

উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারসংলগ্ন মৈত্রী সংঘের মাঠ, ধুপখোলার ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ, খিলগাঁও মেরাদিয়া বাজারের হাট, মিরপুর ৬নং ওয়ার্ড ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, আগারগাঁও বস্তির খালি জায়গায় অস্থায়ী পশুর হাট এবং গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট ইতোমধ্যে বাঁশ পুঁতে, ময়লা পরিষ্কার করে প্রস্তুত করা হয়েছে।

আবার কোনো কোনো হাটে গরু, মহিষ, ছাগলসহ বিভিন্ন পশু হাটগুলো উঠতে শুরু করেছে। সারাদিন ধরেই ট্রাকে পশু আসতে শুরু হয়েছে এসব হাটে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজধানীতে গাবতলীর স্থায়ী হাট ছাড়া কোরবানি পশুর ১৬টি অস্থায়ী হাট বসছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ৯টি ও উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় সাতটি। ডিএসসিসির ১১টি হাট বসনোর জন্য দরপত্র আহ্বান করলেও কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় দুইটি হাট বসানো হচ্ছে না। এই হাট দুইটি হচ্ছে, গোলাপবাগ এবং ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ।

সূত্রে জানা গেছে, নিয়মানুযায়ী ঈদের তিন দিন আগে কোরবানির পশুর হাট বসানোর কথা। ঈদের দিনসহ মোট চার দিন। সেই হিসাবে আগামী ৩ অক্টোবর থেকে হাটগুলোতে পশু বিকিকিনির কথা। কিন্তু অতীতের ন্যায়ে এবার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঈদের ৭ দিন আগেই অনেক অস্থায়ী হাট প্রস্তুত করে পশু তোলা হচ্ছে। আগাম হাট না বসাতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইজারাদারদের।

কিন্তু সেটা মানতে নারাজ ইজারাদাররা। তাদের অভিযোগ, আগাম হাট না বসালে দূরদূরান্ত থেকে আসা বেপারিরা বিপাকে পড়বেন। একসঙ্গে বিভিন্ন জেলা থেকে পশু আসা শুরু করলে ঢাকা শহর অচল হয়ে যাবে। পশুগুলো সুশৃঙ্খলভাবে রাখাও মুশকিল হবে। মহাসড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। সিটি করপোরেশনের বেধে দেওয়া হাটের সীমানা নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন তারা।

তাদের দাবি, সিটি করপোরেশন থেকে হাট বসানোর জন্য যে সীমানা বেধে দেওয়া হয়, তা স্বল্প। আর পশুর সরবরাহ অনুযায়ী এত স্বল্প জায়গায় সঙ্কুলান হয় না। যে কারণে সীমানা ছাড়িয়ে হাট পাড়া-মহল্লার সড়কে বিস্তৃত হয়। এর ফলে জনভোগান্তি বেড়ে যায়। অনেক টাকা দিয়ে ইজারা নিয়ে ব্যবসায় লোকসান দেওয়া সম্ভব নয়।

এদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিনই ঢাকায় আসছে পশুবাহী ট্রাক। রাস্তায় তোরণও নির্মাণ করা হয়েছে। প্রচারণার কাজে মাইকের পাশাপাশি পোস্টার সাঁটানো ও লিফলেট বিতরণ চলছে। পাড়া-মহল্লার অলিগলি ছাড়িয়ে রাজধানীর ব্যস্ত সড়কের দেয়ালে দেয়ালে এখন শোভা পাচ্ছে পশুর হাটের প্রচারণার পোস্টার। ইজারাদাররা পশু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত আগেই করে রেখেছে। ইতিমধ্যে প্রত্যেক হাটে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পশুর হাটে ঢাকার বাইরে থেকে যেসব গরু ব্যবসায়ী ট্রাকে করে পশু আনছেন তাদের থাকা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছে হাট কর্তৃপক্ষ। সেই সাথে অনেক হাটে ব্যবসায়ীদের টাকা জমা রাখার বিশেষ ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা  আমিনুল ইসলাম বলেন, ইজারার শর্ত অনুযায়ী আগে থেকে হাটের প্রস্তুতি চলতে পারে। কিন্তু হাট বসানোর কোনো নিয়ম নেই। এরপরও যদি কেউ শর্ত ভঙ্গ করে আগাম হাট বসায়, তবে তার বা তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদও একই কথা বলেছেন।



মন্তব্য চালু নেই