‘নারী সন্ত্রাসীরা পুরুষের চেয়ে বেশি দুর্ধর্ষ’

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে পোস্ট করা দুটি ক্ষুদে বার্তার একটিতে একজন নারী বলছেন, ‘টেক্সাস ও বোস্টনে তোমাদের ভাইয়েরা যা করেছে, তা অনুসরণ কর, ভয় করোনা, আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন।’ অন্যটিতে আরেক নারী লিখেছেন, ‘হ্যাপি নাইন ইলেভেন, এটি আমার জীবনের সবচাইতে সুখের দিন, আশা করি এমন দিন আরো আসবে, ইনশাআল্লাহ—হ্যাশট্যাগ আইএস’।

সিরিয়া এবং ইরাকে কথিত সুন্নীপন্থি সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক স্টেট অধিকৃত এলাকা থেকে এসব ক্ষুদে বার্তা টুইটারে পোস্ট করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পোস্টগুলোর সাথে ছবিও রয়েছে, যাতে যুদ্ধের পোশাক পরিহিত সশস্ত্র নারীদের দেখা যাচ্ছে। আর তাদের মনোবাঞ্ছা কি, সেটাতো তাদের বার্তার ভাষাতেই স্পষ্ট।

আইসিস বা আইএস নামের সুন্নীপন্থি সশস্ত্র ইসলামী সংগঠনটিতে যোগ দিতে যাওয়া পশ্চিমা নারীদের অনলাইন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এমন একটি সংস্থা ইন্সটিটিউট ফর স্ট্রাটেজিক ডায়লগের এরিন সল্টম্যান বলনে, ‘এরা এমনই একদল নারী, যারা রাগান্বিত এবং আক্রমণাত্মক ছিল কিন্তু কোনও কার্যকর ভূমিকা পালন না করতে পেরে এখন হতাশ হয়ে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে আমরা দেখলাম, এদেরকে হালকা ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হল। এখন এদের ভূমিকা সময়ের সাথে সাথে বিবর্তিত হবার একটা ব্যাপক সুযোগ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে’।

মিজ সল্টম্যান আরো জানান, বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যকলাপ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নারীদের সমর্থক থেকে সক্রিয় হয়ে ওঠার যে কর্মকাণ্ড ও পর্যায়ক্রম তা সবার ক্ষেত্রেই কম বেশি একই।

হেন্ডার সেন্টার ফর স্টাডি অব টেরোরিজম অ্যান্ড পলিটিকাল ভায়োলেন্সের গবেষক রিচার্ড ইংলিশ বলেন, নারীরা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে আরো কার্যকর হাতিয়ারেও পরিণত হয় বৈকি।

সম্ভবত এই বক্তব্যের সবচেয়ে বড় উদাহরণ লায়লা হালাড, যিনি ১৯৬৯ থেকে ৭০ সালের মধ্যে প্যালেস্টাইনের একটি মুক্তিকামি সংগঠনের হয়ে বিমান ছিনতাই করতেন। মেকআপ বাক্সের মধ্যে বিষ্ফোরক লুকিয়ে নিরাপত্তা রক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে বিমানে উঠতেন তিনি। সম্ভবত নারী হবার সুবিধাকেই এক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারতেন।

যাই হোক ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমস্টারডাম থেকে তেল আবিব গামী একটি বিমান ছিনতাইয়ের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় তাদের। মিজ হালাড আহত হয়ে ধরা পড়েন আর তার সহকর্মীরা নিহত হন। ঘটনাটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দিনের পর দিন শিরোনাম ছিল।

সেসময়কার তরুণ সাংবাদিক এবং এখনকার জনপ্রিয় ব্রিটিশ টিভি উপস্থাপক পিটার স্নো বলেন, ‘সে খুবই আকর্ষণীয় ছিল। অনেকটা নায়িকা সুলভ। তার দারুণ সব ছবি আমরা সংগ্রহ করলাম এবং প্রকাশ করলাম। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি লক্ষ্য করলাম, প্রতিদিন গণমাধ্যমে তার এই উপস্থিতি বিশ্বের দরবারে প্যালেস্টাইনের মানচিত্রটিকে প্রতিষ্ঠিত কর দিল এবং এর প্রতিনিধিত্ব করল লায়লা’।

ওই ঘটনার ৪৫ বছর পর এসে, সংবাদমাধ্যমগুলোতে সিরিয়ার ইসলামিক স্টেট গ্রুপে পশ্চিমা নারীদের যোগদানের খবর প্রমাণ করছে যে রাজনৈতিক সহিংসতায় মহিলাদের যুক্ত থাকার ঘটনা এখনো আগের মতোই মানুষের মনে সমান অভিঘাত সৃষ্টি করছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা



মন্তব্য চালু নেই