নাটোরের কৃতি সন্তান সোহানী হোসেন ১৪৭ দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত
নাটোরের কৃতিসন্তান ও ইউনিভার্সাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহানী হোসেনকে ‘সোশ্যাল ওয়ার্কার অব দ্যা ইয়ার’ ২০১৬ হিসেবে ১৪৭তম দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে । রবিবার বিকেলে দাদাসাহেব ফালকে ফাউন্ডেশন ভারতের মুম্বাইয়ে তাঁকে এই পুরস্কার প্রদান করে । দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারে ভ’ষিত করায় নাটোরের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন সোহানীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন । ইতিপূর্বে তিনি মহাত্মাগান্ধী পুরস্কারে ভ’ষিত হয়।
এই পৃথিবীতে যা কিছু চির সুন্দর ও কল্যাণকর। অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, আর অর্ধেক তার নর। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই বিখ্যাত উক্তির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পাবনার সোহানী হোসেন। শিল্প, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি যে ক’জন মহীয়সী নারী বিশেষ অবদান রেখেছেন তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। বলছি ইউনিভার্সাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নারী শিল্প উদ্যোক্তা সোহানী হোসেনের কথা। যিনি উদ্যমতা ও দক্ষতা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। সঠিক পথ-নির্দেশনা দিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজের প্রতিষ্ঠানকে। কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন শত শত মানুষের। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে জাগিয়ে তুলেছেন বহু প্রতিভাকে। সদালাপ, মিষ্টভাষা আর উচ্ছলতা দিয়ে জয় করেছেন হাজার হাজার মানুষের মন। তিনি একেধারে সফল শিল্পউদ্যোক্তা , কবি ,সাহিত্যাক ,চলচ্চিত্র নির্মাতা
১৯৬৭ সালের ২২শে জুন নাটোর জেলা সদওে কানাইখালীতে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । শিক্ষাজীবন শেষ করার আগেই তিনি ১৯৮৯ সালে পাবনার বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শ্যুটার আলহাজ মোবারক হোসেন রতœর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সংসার জীবনে হয়ে ওঠেন একজন সফল মা। সাথে দায়িত্ব পান ইউনির্ভাসাল গ্রুপের। সে সময় থেকে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বেও পাশাপাশি বাচ্চাদের স্কুলের পড়ালেখা তাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ নানাবিধ দায়িত্ব পালন করেন। অপরদিকে পাবনার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েন।
কিন্তু হঠাৎ করেই তাঁর জীবনে নেমে আসে এক কালো অধ্যায়। স্বামী মোবারক হোসেন রতœ দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য যান সিঙ্গাপুরে। ব্যাবসা ও সন্তানদের যে দায়িত্ব দু’জন একসাথে পালন করতেন সে দায়িত্ব এসে পড়ে একা সোহানী হোসেনের কাঁধে। তিনি দায়িত্ব পালনে পিছপা হননি। সে দায়িত্ব আর তার কাঁধ থেকে নামেনি। ২০০৭ সালের ১৯শে মার্চ আলহাজ মোবারক হোসেন রতœর অকাল মৃত্যুর পর তাঁর দেয়া দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেন তিনি। অল্পদিনেই নারী শিল্পউদ্যোক্তা হিসেবে দেশে ও বিদেশে প্রতিষ্ঠিত করেন নিজেকে। এখন তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী, সফল মাতা এবং সফল সমাজকর্মী।
তিনি পাবনায় নিজ উদ্যোগে শুরু করেন মাশরুম চাষ। মাশরুম পাবনায় জনপ্রিয় করে তোলেন তিনি। মাশরুম চাষের জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছ থেকে অভিনন্দিত হন। তবে শুধু ব্যবসার মধ্যে আটকে রাখেননি নিজেকে। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি পাবনা ও পাবনার বাইরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও ক্রীড়া সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এবং সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে জোরালো ভূমিকা পালন করেছেন। ব্যক্তিগতভাবেও হাত বাড়িয়েছেন বহু মানুষের সহযোগিতায়। তাঁর সহযোগিতায় বেশ কয়েকজন অদম্য মেধাবী শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছেন। যুবসমাজকে সময়-উপযোগী করে গড়ে তুলতে তিনি বহু প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়েছেন। কারো দুঃখ, কষ্ট, দুর্দশা দেখলেই তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। বন্যা, খরা, শীতে অসহায় মানুষের পাশে থাকছেন। খাদ্য, বস্ত্র নিয়ে ছুটে গেছেন তাদের কাছে। পঙ্গু, অসহায়দের অসহায়ত্ব দূর করতে হুইল চেয়ার, রিকশা-ভ্যান কিনে দিয়েছেন। রোদ বৃষ্টিতে ভিজে পাবনা নার্সিং ইনস্টিটিটিউটের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে আসতো। তাদের চলাচলের সুবিধার্থে তৈরি করে দিয়েছেন ফুট ছাউনি। মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতি স্তম্ভ তৈরিতে তিনি প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করেছেন। পাবনা জেলা কারাগারে শিশু ও নারীদের উন্নয়নে সহযোগিতা করছেন নিয়মিত। এছাড়া বহু মসজিদ, মন্দির, এতিমখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
শোভা নামে একটি মেয়ে এক সময় মাদকাসক্ত ছিল। মাদক বেচাকেনা ও সেবন ছিল তার নিত্য দিনের কাজ। একপর্যায়ে মেয়েটি ধরা পড়ে জেলহাজতে যায়। জেল পরিদর্শনে গিয়ে সোহানী হোসেনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তিনি মেয়েটির দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনে সহযোগিতার হাত বাড়ান। মাদকাসক্ত ভয়াল জীবন থেকে ফিরিয়ে আনেন স্বাভাবিক জীবনে। কর্মস্থানের ব্যবস্থা করে দেন। সোহানী হোসেনকে নিয়ে শোভার মূল্যায়ন; তিনি আমার দেবতা। আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন।
সর্বোপরি সোহানী হোসেন মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। নিজেকে সঁপেছেন মানুষের মাঝে। তিনি বলেছেন- নিজের অর্জন দিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা তাঁর আগামী দিনের সংকল্প। সে চেষ্টাই করছেন।
তিনি কবিতা, গান, গল্প লিখে, ছবি এঁকে জয় করতে চেয়েছেন মানুষের মন। অভাবনীয় সাড়াও পেয়েছেন তাতে। তাঁর লেখা কবিতার বই ‘সমুদ্র’, ‘সমুদ্র তরঙ্গ’ ও ‘তৃতীয় একজন’ ,বিদায় ছুটিপুর ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে পাঠক সমাজে। লেখা কবিতা নিয়ে দেশের নন্দিত শিল্পী বাপ্পা মজুমদারের সুরে এবং জনপ্রিয় আবৃত্তিকার শিমুল মুস্তাফা ও ঈশিকা আজিজের কণ্ঠে তৈরি হয়েছে আবৃত্তির সিডি ‘তৃতীয় একজন’। তাঁর আঁকা ছবি নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ছবি গ্রন্থ ‘কষ্টগুলো আটকে থাকে দুই মলাটের ভাঁজে’। গীতিকার ও গল্পকার হিসাবেও তিনি নিজেকে তুলে ধরেছেন মানুষদের মাঝে। তার লেখা বেশ কয়েকটি গান এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে। তার ‘মা’ গল্প থেকে তৈরি হচ্ছে চলচ্চিত্র ‘সত্ত্বা’।
নিজের কর্মদক্ষতা ও উদ্যমতা দিয়ে তিনি বহু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িত রয়েছেন। চার্টার্ড প্রেসিডেন্ট হয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে রোটারি ক্লাব অব রূপকথা পাবনা। রূপকথার মতোই সাজিয়েছেন তিনি ক্লাবটিকে। ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ক্লাবটি পেয়েছে বেশকিছু স্বীকৃতি। তিনি নিজেও কম যাননি। পেয়েছেন এওয়ার্ড। এছাড়াও তিনি পাবনা রাইফেল ক্লাবের আজীবন সদস্য, পাবনা বনমালী ইনস্টিটিউট আজীবন সদস্য, পাবনা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভানেত্রী, পাবনা কারাগারের বেসরকারি কারা পরিদর্শক, পাবনা সরকারি শিশু পরিবার পরিচালনা কমিটির সদস্য, পাবনা মহিলা ক্লাবের কার্যকরি সদস্য, পাবনা সদর উপজেলা খাসজমি বন্দোবস্ত কমিটির সদস্য, পাবনা লাগসই প্রযুক্তি জাদুঘরের সদস্য সচিব, পাবনা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কার্যকরি সদস্য, আজীবন সদস্য বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পাবনা শাখা। আজীবন সদস্য ও কার্যকরি সদস্য, সদর উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি সদস্য, আদর্শ মহিলা কলেজ, পাবনা বিদ্যোৎসাহী সদস্য পরিচালনা কমিটি, শহীদ রফিক আহম্মেদ বালিকা বিদ্যালয়, পাবনা পরিচালনা পরিষদের বিদ্যোৎসাহী সদস্য ও জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ পাবনাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে সক্রিয় সদস্য হিসাবে জড়িত থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন পরামর্শ ও আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছেন।
ব্যবসায়িক সফলতা: সফলতা দিয়ে গড়ে তুলেছেন ইউনিভার্সাল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটিড, ইউনিভার্সাল ফার্মাসিউটিক্যালস্ (ইউনানী), ইউনিভার্সাল ফুড লিমিটেড, ইউনিভার্সাল ওয়েল মিল, গ্রিনার রাইস মিল, গ্রিনার মশলা মিল, অনন্ত সিনেমা লিমিটেড, রূপকথা সিনেমা, প্রেরণা সিনেমা, তরঙ্গ প্যাকেজিং, তরঙ্গ ট্রান্সপোর্ট ও রতœদীপ রিসোর্টসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান।
মন্তব্য চালু নেই