নতুন জীবনের সন্ধানে সবুজ চোখের অধিকারী সেই ‘আফগান’ শরবত গুলা

কম বয়সে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রচ্ছদ কন্যা হয়ে খ্যাতি পাওয়া সবুজ চোখের অধিকারিণী শরবত গুলা পাকিস্তান থেকে বহিষ্কৃত হবার পর নতুন জায়গায় নতুন করে জীবন শুরু করবার আশায় আছেন। পাঁচ বছর বয়সী ছেলে এবং আরো তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি এখন আফগানিস্তানের কাবুলে বসবাস করেন। বহু বছর ধরে কষ্ট করবার পর তিনি এখন চাইছেন একটি স্বাভাবিক, সুন্দর জীবন পেতে।

বিবিসিকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব জানান শরবত গুলা। দশ বছর বয়সে তার তোলা একটি ছবি যুদ্ধপীড়িত আফগান শরণার্থীদের আইকন হয়ে দাঁড়ায়।
এর আগে একবারই গণমাধ্যমে কথা বলেছিলেন তিনি।

স্টিভ ম্যাককারি, যিনি তার দশ বছর বয়সের ছবিটি তুলেছিলেন, তিনিই তাকে খুঁজে বের করেন এবং ২০০২ সালে একটি প্রামাণ্যচিত্রে তার সাক্ষাৎকার নেন।
১৭ বছর ধরে যে বিশ্বজুড়ে শরবত গুলার ছবি কতটা বিখ্যাত ছিল সে সম্পর্কে তার কোন ধারণাই ছিল না। অনেক আফগান যুদ্ধপীড়িতের মত শরবত গুলাও পাকিস্তানে আশ্রয় চান এবং ৩৫ বছর ধরে বসবাস করেন।

কিন্তু গত বছর পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ তাকে ধরে জেলে পাঠায়, কারণ তার কাগজপত্র ‘অবৈধ’ ছিল। পর তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে আফগানিস্তানে পাঠিয়ে দেয় পাকিস্তান।
কাবুলের এক সাময়িক বাসস্থানে বসে শরবত গুলা বিবিসিকে বলেন, “সেখানে ভাল সময় কেটেছে আমাদের, ভাল প্রতিবেশী ছিল, পশতু ভাইদের সাথেই বাস করতাম আমরা। আমি কখনো আশা করিনি শেষমেষ এই আচরণ আমার সাথে করবে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ”।

মধ্য চল্লিশের শরবত গুলা এখন অসুস্থ ও দুর্বল। কিন্তু তার সবুজ চোখ এখনো তীক্ষ্ম। সেই চোখে রয়েছে একই সঙ্গে ভয় এবং আশা। পাকিস্তানে পুলিশের হাতে ধরা পড়বার আগেই তিনি আশঙ্কা করছিলেন তিনি হয়তো সে দেশে আর থাকতে পারবেন না। এজন্য বাড়িটি বেচে দেন তিনি।

দেশ ছাড়ার ঠিক দুদিন আগে তার বাড়িতে পুলিশ হানা দেয়। “আমি পুলিশকে বলেছিলাম এই আইডি কার্ডটি আমি বানিয়েছি বাচ্চাদের লেখাপড়া করাতে আর আমার বাড়িটি বিক্রি করবার জন্য। আইডি ছাড়া এর কোনটিই সম্ভব নয় পাকিস্তানে”। তাকে দু সপ্তাহের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। এর এক সপ্তাহ তিনি ছিলেন কারাগারে। আরেক সপ্তাহ ছিলেন কারা হাসপাতালে। তার হেপাটাইটিস সি হয়েছিল।

“এটা ছিল আমার জীবনের কঠিন এবং দুঃসহ এক ঘটনা,” বিবিসিকে বলছিলেন শরবত গুলা।
ছবির কপিরাইট রয়টার্স তাকে আটকে রেখে কি পরিমাণ বদনাম হয়েছে সেটা বুঝতে পেরে শরবত গুলাকে পরে পাকিস্তানে থেকে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। “আমি তাদের বলেছি, তোমরা আমাকে ৩৫ বছর থাকতে দিলে, কিন্তু দিন শেষে এমন আচরণ করলে! যথেষ্ট হয়েছে”।

শরবত গুলার স্বামী ও বড় মেয়ে মারা গেছে, তাদের কবর রয়েছে পেশোয়ারে। পাকিস্তানের সরকার দেশটিতে বসবাস করা কুড়ি লাখ আফগানকে চলে যাবার নির্দেশ দিয়েছে।

‘আফগান গার্ল’ শিরোনামের ছবিটি তোলা হয় ১৯৮৪ সালে, স্টিভ ম্যাককারি পেশোয়ারের এক শরণার্থী শিবিরের কাছ থেকে দশ বছরের শরবত গুলার ছবিটি তোলেন।
তিনি সেসময়ে তাঁবুতে পরিচালিত শরণার্থীদের এক স্কুলে পড়তেন। শরবত গুলার কোন ছেলেমেয়ের চোখের রঙই মায়ের মত নয় তবে তার নানীর চোখ ঠিক একই রকম ছিল, তিনি জানান।-বিবিসি



মন্তব্য চালু নেই