দু’দেশের সীমান্ত থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে স্থানীয়দের

নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মিরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানের পর দুই দেশেরই সীমান্তের অনেক জায়গায় সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গ্রামবাসীদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ভারতীয় পাঞ্জাব রাজ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্তের দশ কিলোমিটার এলাকার গ্রামগুলো থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে।

পাকিস্তান শাসিত কাশ্মিরে ভারতীয় সেনার হামলার পরে এখন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে দেখা দিয়েছে পাকিস্তানের পাল্টা হামলার আশঙ্কা।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে বা গোটা জম্মু-কাশ্মির রাজ্যে এ ধরনের কোনো সরকারি নির্দেশ না দেওয়া হলেও জম্মু এলাকার সীমান্তবর্তী গ্রাম থেকে বহু মানুষ নিজ-উদ্যোগেই সরে যাচ্ছেন। পাকিস্তান সীমান্তের কিছু এলাকা থেকে মানুষজন সরে যাচ্ছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।

ভারতীয় সামরিক বাহিনী বলছে, নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে তাদের কথায় `সার্জিকাল স্ট্রাইক` চালানো হয়েছিল বুধবার রাতে, তারপরে নিয়ন্ত্রণ রেখার অন্য দিক থেকে গুলিবর্ষণ হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে।

জম্মু পুলিশের উপকমিশনার সীমারণদীপ সিং বলেছেন, পাল্লানওয়ালা এলাকার চাপরিয়াল ও স্যামওয়ানের নিরাপত্তা চৌকিতে রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ গুলিবর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনারা। রাত দেড়টা পর্যন্ত গোলাগুলি চলে। তবে এ ঘটনায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে।

তবে পাঞ্জাব ও জম্মু এলাকায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি গ্রামগুলো থেকে সাধারণ মানুষদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদল বলেছেন, বৃহস্পতিবার সকালেই যখন সার্জিকাল স্ট্রাইকের ব্যাপারে জানানো হয়, তারপরেই সীমান্ত থেকে গ্রামবাসীদের সরিয়ে দেওয়া শুরু করেছে সরকার। ছয়টি সীমান্তবর্তী জেলার অন্তত এক হাজার গ্রাম খালি করানো হচ্ছে। স্থানীয় গুরুদোয়ারাগুলি থেকে গ্রাম খালি করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে মাইকে। প্রতিটি জেলায় গ্রাম খালি করা এবং মানুষদের দেখভালের জন্য একেক জন করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্কুলবাড়ি বা গুরুদোয়ারাগুলোতে রাখা হচ্ছে সীমান্ত অঞ্চল থেকে চলে আসা মানুষদের।

তবে যেসব মানুষদের গ্রাম থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের অনেকে বলছেন যে পেকে ওঠা ফসল ক্ষেতেই ফেলে রেখে তাদের চলে যেতে হচ্ছে। যদিও পাঞ্জাব সরকার বলছে, ফেলে যাওয়া ঘরবাড়ি বা ফসলের ক্ষেত পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে তারা। সব পুলিশকর্মীর ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের সীমান্ত অঞ্চল থেকেও মানুষজন হামলার আশঙ্কায় ঘর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছেন। বিএসএফ-এর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারিভাবে সরে যাওয়ার কোনও নির্দেশ জারি হয়নি, কিন্তু অনেকেই আতঙ্কে ঘর ছাড়ছেন। বিশেষত জম্মু অঞ্চলে গতকাল থেকে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

সীমান্তে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ অভিযানের পর পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের উত্তেজনার মাঝে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার ভারতীয় সেনাবাহিনী পাক অধিকৃত কাশ্মিরে গভীর রাতে ঢুকে সাতটি সন্ত্রাসী আস্তানায় অভিযানের দাবি করেছে। অভিযানে অন্তত দুই পাক সেনা ও ৩৮ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।

তবে পাকিস্তানের ভেতরে ভারতের সেনা অভিযানের খবর নাকচ করে দিয়ে পাকিস্তান বলছে, কাশ্মিরে ঢুকে পড়ায় পাক সেনাবাহিনীর গুলিতে ৮ ভারতীয় সেনা নিহত ও এক সেনা সদস্যকে আটকের দাবি করেছে ইসলামাবাদ।



মন্তব্য চালু নেই