দরজা নেই যে গ্রামে
পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্রের এক ছোট্ট গ্রাম শনি সিংনাপুর। গ্রামের বাসিন্দা প্রায় পাঁচ হাজার। তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে এ গ্রামের কোন বাড়িতে কিংবা ঘরে দরজা নেই। পুরো পরিবারের সব সদস্য বেড়াতে গেলেও খোলা থাকে বাড়ি-ঘর। কারণ এই গ্রামে নেই কোনো চোর। আর এই গ্রাম নাকি পাহাড়া দিচ্ছেন স্বয়ং শনি দেবতা।
গ্রামবাসির বক্তব্যে জানা যায় আজ থেকে প্রায় তিনশ বছর আগে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট নদীতে ভেসে যাচ্ছিল এক টুকরো পাথর ও আরেক টুকরো লোহা। গ্রামের রাখালরা এটি দেখতে পেয়ে লাঠি দিয়ে টেনে আনে। এরপরই নদী দিয়ে রক্ত বইতে শুরু করে। রাতেই পাথরের টুকরাটি দেবতা শনির মূর্তিতে রুপান্তরিত হয়। সকালে গ্রামবাসি মূর্তিটিকে গলায় মালা পড়ানো অবস্থায় গ্রামের খোলা চত্বরে দেখতে পায়। পরবর্তীতে এক ভক্তকে দেবতা শনি জানান, গ্রামবাসির ঘরে আর দরজা লাগানোর প্রয়োজন নেই। তিনিই তাদের রক্ষা করবেন। সেই থেকে গ্রামবাসি দেবতার এই নির্দেশ মেনে আসছেন।
বালাসাহেব বারদি নামে গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, দেবতা শনির ক্ষমতা এমন যে, কেউ চুরি করার পর সারারাত হাটার পর তার মনে হবে সে ওই গ্রাম ফেলে এসেছে। কিন্তু সকাল হলেই দেখতে পাবে রাতে যেখানে ছিল সে সেখানেই আছে।
চোর আসবে না এ ধারণা এই গ্রামে এতোটাই প্রবল যে, গ্রামটিতে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ইউসিও ব্যাংকের যে শাখা রয়েছে সেটির দরজাও খোলা থাকে। ব্যাংকে গচ্ছিত সব টাকাপয়সা রাখা হয় একটি ভল্টে। আর কাঁচ ঘেরা অফিসটিতে যে দরজা রয়েছে সেটিও খোলা রাখা হয়। রাতে যাতে কুকুর প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য দরজাটি চাপিয়ে রাখা হয়।
এ ব্যাপারে ব্যাংকটি কমকর্তা নাগেন্দর শেরাওয়াত জানান, ‘আমাদের কোন সমস্যাই হয় না।’
৯০ দশকে গ্রামটিতে একটি হিন্দু ছায়াছবি নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকেই গ্রামটির নাম ছড়িয়ে পড়ে ভারতজুড়ে। সিয়ারাম ব্যাংকার নামে দেবতা শনির মন্দিরের একজন ট্রাস্টি জানান, পুরো বিশ্ব জানে শনি সিংনাপুর নামে একটি গ্রাম আছে যেখানে বাড়িতে কোন দরজা নেই, গাছ আছে কিন্তু ছায়া নেই, দেবতা আছে কিন্তু মন্দির নেই।
পুরো ভারত থেকে ভক্তরা এই অলৌকিক গ্রাম দেখতে আসে।
মন্তব্য চালু নেই