ডায়নোসরের চেয়েও প্রাচীন প্রাণী
প্রাচীন প্রাণী বলতেই আমাদের সামনে ডায়নোসরের চেহারা চলে আসে। যদিও পৃথিবীতে এখন এদের কঙ্কাল ছাড়া প্রাণের অবশিষ্ট নেই। কিভাবে এই বৃহদাকায় প্রাণী পৃথিবীর বুক থেকে বিলীন হয়ে গেছে তা নিয়ে চলছে গভীর গবেষণা। কখনও গবেষকরা বলছেন, উল্কা ঝড়ের কারণে ডায়নোসর বিলীন হয়ে গেছে। আবার আরেক দল জানাচ্ছে, প্যানজিয়া বিভক্ত হওয়ার সময় ডায়নোসররা ক্রমশ বিলীণ হতে শুরু করে। হয়তো নিকট ভবিষ্যতেই আমরা জানতে পারবো ডায়নোসর ঠিক কিভাবে বিলীন হয়েছিল এই পৃথিবী থেকে। তবে আজ জেনে নেই এমন সাতটি প্রাণীর কথা যারা ডায়নোসরের আমল এবং তারও আগে থেকে এখনও বহাল তবিয়তে টিকে আছে। ডায়নোসর বিলীন হলেও তারা কিন্তু দিব্যি নিজেদের জগতে ঐতিহ্য হয়ে আছে।
প্লাটিপাস
স্তন্যপায়ী প্রানী হয়েও ডিম পাড়ার কারণে বিখ্যাত প্লাটিপাস। বাংলায় ‘হংসচঞ্চু’ বলা হলেও এদের বৈজ্ঞানিক নাম Ornithorhynchus anatinus। নিশাচর এই প্রাণীরা দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়া এবং তাসমানিয়ার উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে বাস করে। ২০০৮ সালে টেক্সাস ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী টিম রো আবিষ্কার করেন যে প্লাটিপাসরা জুরাসিক সময়কার প্রাণী, যারা এখনও টিকে আছে। অর্থাৎ প্লাটিপাসের আনুমানিক বয়স প্রায় ১২২ মিলিয়ন বছরেরও বেশি। প্রাপ্তবয়স্ক একটি প্লাটিপাস লম্বায় ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি হয়।
তেলাপোকা
আপনি নিশ্চয়ই জানেন তেলাপোকা কখনো মারা যায় না। পৃথিবীর প্রাণীকূলের মধ্যে এই প্রাণীটিই সবচেয়ে আধিপত্য বিস্তারকারী প্রাণী হিসেবে আজও টিকে আছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে পাওয়া বিবরণ ঘেটে জানা যায়, ৩৬০ মিলিয়ন বছর আগেও তেলাপোকার অস্তিত্ব ছিল। অথচ আমাদের হাতে ডায়নোসর সম্পর্কে যে তথ্য আছে তাতে দেখা যায় পৃথিবীতে ডায়নোসরের প্রথম উপস্থিতি ছিল ২৪০ মিলিয়ন বছর আগে। তবে বর্তমানে তেলাপোকার আয়তনের তুলনায় আগেকার তেলাপোকা নিদেনপক্ষে দ্বিগুন ছিল।
ক্ষুরাকৃতি কাঁকড়া
মানুষ এদেরকে চেনে জীবন্ত ফসিল হিসেবে। যদিও এদের আসল নাম ক্ষুরাকৃতি কাঁকড়া। মানুষ এদেরকে জীবন্ত ফসিল বলার অন্যতম কারণ এর গতি এবং আকৃতি। প্রাণীকূলের সকল প্রাণীর তুলনায় এর গতি কম এবং আকৃতিতেও অনেকটা ঘোড়ার ক্ষুরের ন্যায়। পূর্ববর্তী সময়ে পৃথিবী যখন চারবার ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যায় তখনও বহাল তবিয়তেই ছিল এই কাঁকড়া। এদের নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণার পর দেখেছেন যে, এদের শরীরে এমন কিছু উপাদান আছে যা ডাক্তারি শাস্ত্রের যন্ত্রাংশ জীবানুমুক্ত করতে কাজে লাগে এভং ফাংগাসজনিত ইনফেকশন দূর করতেও সাহায্য করে।
সবুজ কচ্ছপ
জুরাসিক সময় থেকে আজও বেঁচে এবং টিকে থাকা প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম সাগরের সবুজ কচ্ছপ। পৃথিবীব্যাপী কচ্ছপ-কাঁকড়া নিধনযজ্ঞ চালানোয় কচ্ছপের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। তাই হয়তো ইউনিভার্সিটি অব টুবিগ্রানস ইন্সটিটিউট ফর আর্থ সায়েন্সের শিক্ষক ওয়াল্টার জয়েস, সাগরের এই সবুজ কচ্ছপদের হত্যা না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
হাঙ্গর
মানুন বা নাই মানুন সাগর পানিতে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ধরে টিকে আছে হাঙ্গর। বিভিন্ন সময় সাগরের তলদেশ অনেক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাওয়ায় অনেক প্রাণীই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু হাঙ্গর পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের দ্রুত পরিবর্তিত করে নেয়ার সক্ষমতা অর্জন করে। যে কারণ বর্তমানের হাঙ্গরদের মাথার দুপাশে নিশ্বাস নেয়ার আলাদা অঙ্গ দেখতে পাওয়া গেলেও প্রাচীন আমলের হাঙ্গরদের ওই বাড়তি কানকো ছিল না। এমনকি তাদের দাতের মাড়িতেও পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে হাঙ্গরদের মাড়িতে দাত থাকে প্রায় ৩০০ সেট।
কুমির
ডায়নোসরদের সরাসরি বংশধর বলা হয় কুমিরদের। কিন্তু জেনে অবাক হবেন যে, ডায়নোসরদেরও আগে থেকে পৃথিবীতে কুমিরদের অস্তিত্ব ছিল। শুধু তাই নয় বর্তমানের কুমিরদের তুলনায় অনেক বেশি আয়তনে বড় ছিল প্রাচীন কুমিরেরা। পাঠ্য বইয়ে যদিও লেখা থাকে যে উষ্ণমন্ডলীয় পানিতেই কুমিরদের বসবাস কিন্তু গবেষকরা জানাচ্ছেন যে, একটা সময় ছিল যখন কুমিরেরা শীতল পানিতেই বাস করতো। প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তারা শারীরিক আকৃতি পরিবর্তন করে টিকে থাকার অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মৌমাছি
২০১৩ সালে এক গবেষণায় দেখা যায় পৃথিবীব্যাপী অতিদ্রুত প্রাণীরা বিলুপ্ত হতে শুরু করবে। আর এই বিলুপ্ত হওয়ার প্রথম ধাপ হবে মৌমাছি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। কারণ মৌমাছি না টিকলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পরবে। বর্তমানে মৌমাছিরা সবচেয়ে কঠিন সময় অতিক্রম করছে। পৃথিবীব্যাপী শিল্পায়নের ফলে মৌমাছি হারাচ্ছে তার বাসস্থান। প্রকৃতির পরাগায়নের নীতি পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে মৌমাছির অস্বাভাবিক আচরণের ফলে।
মন্তব্য চালু নেই