ট্রাম্প ফল না মানলে আইনগত সমাধান কী?

মার্কিন নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার শেষ ও তৃতীয় বিতর্কে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবেন না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিতর্কে সঞ্চালকের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, নির্বাচনের পরেই দেখা যাবে। আমি আপনাদেরকে রহস্যের মধ্যেই রাখতে চাই। ট্রাম্পের এ ধরনের মন্তব্যকে তার প্রতিপক্ষের অনেকেই ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সে সময় ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আল গোর ফ্লোরিডার ফলাফল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। গোরের এ সিদ্ধান্তকে ‘মার্কিন গণতন্ত্র পদ্ধতির’ প্রতি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অনেকেই। নির্বাচনে ফলাফল জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন এবং গণতন্ত্রের মূলনীতি। নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক বা রিপাবলিকান যেই পরাজিত হোক, ভোট গ্রহণ শেষে কিভাবে নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন- এ নিয়ে আইনি ব্যাখ্যা দিয়েছে সিএনএন।

প্রার্থীরা কি ভোট চ্যালেঞ্জ করতে পারেন?
হ্যাঁ, চ্যালেঞ্জ করতে পারেন, তবে জাতীয় পর্যায়ে নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিটি রাজ্যের ফলাফল ভিন্ন ভিন্ন ঘোষিত হয়। রাজ্যের নির্বাচন আইনানুসারে প্রাইমারি ফলাফলে প্রার্থীরা খুব কাছাকাছি অবস্থান করলে পুনরায় গণনা করা হয়। প্রতিটি রাজ্যের জন্য প্রয়োজন আলাদা আলাদা চ্যালেঞ্জ করা। কোনো প্রার্থী চ্যালেঞ্জ করলে সে জন্য ব্যতিক্রম হিসেবে ৩৬ দিন পর ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালে আল গোর চ্যালেঞ্জকে নেয়া হয়েছিল এজন্য যে, ফ্লোরিডায় যেই জিতবে সে ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজের সমর্থন পাওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়েছিল। তবে কোর্ট জর্জ বুশের পক্ষেই রায় দেয়।

চ্যালেঞ্জ প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে?
প্রতিটি রাজ্যের নির্বাচন আইন ভিন্ন ভিন্ন। সাধারণত দুই নিয়মের অনুসরণ করা হয়। প্রথমত, কোনো প্রার্থী ভোটকে চ্যালেঞ্জ করলে ব্যালট পুনরায় গণনা করা হয়। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন আইন সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে ভোট গণনার অনুমোদন দিতে পারে। ইলেক্টোরাল কোর্ট আইন-১৮৮৭ অনুসারে, কংগ্রেস স্বীকৃত একজন ইলেক্টরকে নির্বাচন করে ৩৫ দিনের মধ্যে ফলাফল নিশ্চিত করা। অর্থাৎ কোনো চ্যালেঞ্জ প্রমাণের জন্য রাজ্য ৫ সপ্তাহের সময় নিতে পারবে।

কে সিদ্ধান্ত নেবে?
প্রাইমারি ফলাফলের ওপর করা চ্যালেঞ্জের সমাধান রাজ্যের নির্বাচন আইন অনুসারে সমাধান হবে। সংবিধান অনুসারে মার্কিন কংগ্রেসের বিচারক ৬ জানুয়ারি কোর্টের যৌথ সেশনে তার সমাধান করবেন। কোর্টের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। তবে ইলেক্টোরাল ভোট গণনার ক্ষেত্রে কোনো প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি বলে বিবেচিত হবে। ১৮০১, ১৮২৫ ও ১৮৭৭ সালের নির্বাচনে এ রকম হয়েছিল। মার্কিন সংবিধান অনুসারে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা তার সমাধান করবেন।

সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা কী?
প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের কোনো ভূমিকা নেই। রাজ্যের নির্বাচন আইনেই মূলত এসব বিষয়ের সমাধান করে। তবে ২০০০ সালের বিষয়টি ব্যতিক্রম। কারণ মার্কিন সংবিধানকে লংঘন করে ১৪তম সংশোধনীর অপব্যবহার করে পুনরায় ভোট গণনার অনুমোদন দিয়েছিল রাজ্যের নির্বাচন আইন। ফলে সুপ্রিম কোর্ট ভোট গণনা বন্ধ করে বুশকে বিজয়ী ঘোষণা করে।

প্রার্থীরা ফল না মানার অর্থ কী?
এটা ফলাফল ও প্রার্থীর ওপর নির্ভর করছে। যদি নির্বাচনের রাতেই ফলাফল ঘোষিত হয়, তবে কোনো প্রার্থী তা মেনে নিতে বাধ্য নন। এছাড়া অধিক পরিমাণে ভোটের ব্যবধান থাকলে পুনরায় গণনার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। সহজ কথায়, যদি প্রার্থীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান কাছাকাছি থাকে, তবে রাজ্যের আইন এমনিতেই পুনরায় ভোট গণনার অনুমোদন দেয়। তবে প্রত্যেক রাজ্যের চূড়ান্ত ফলাফল কোনো প্রার্থী মেনে না নিলে মার্কিন কংগ্রেস তার চূড়ান্ত সমাধান দেবে। যদিও এটা মার্কিন নির্বাচনের ইতিহাসে নজিরবিহীন।



মন্তব্য চালু নেই