ট্রাম্পের বক্তব্য মুসলিম বিদ্বেষ আরও উস্কে দিচ্ছে

একদিন এক মার্কিন নাগরিক সারা ইব্রাহিম যখন তার ছেলেকে স্কুলে দিতে আসে তখন তিনি শুনতে পান ছোট ছেলেমেয়েরা নিজেদের মধ্যে বলছে কি হবে যখন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হবে? তখন কি সে আমাদের এখান থেকে চলে যেতে বলবে। ইব্রাহিমের মতে সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পের মুসলমান বিদ্বেষী মনোভাবই সবার মনে এমন প্রশ্নের সৃষ্টি করছে যেখান থেকে বাদ পরছে না ছোট শিশুরাও। আর এমনটি হয়েছে ট্রাম্প যেখান থেকে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে মনোনিত হয়েছে। মুসলিমদের ওপর তার প্রথম আক্রমণ ছিল শরণার্থী ইস্যুতে। তিনি সব দেশকে শরণার্থী না নেয়ার প্রতি আহ্বান জানান। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মসজিদগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করার প্রতি আহ্বান জানান। এরপর একের পর এক ইসলাম বিদ্বেষি মতবাদ দিয়েই যাচ্ছেন তিনি। তার এরকম মন্তব্যের পরেই সান বার্নারদিনোতে একটি অনুষ্ঠানে হামলায় ১৪ জন মানুষ নিহত হয়। পরে জানা যায় হামলাটি করেছিল একজন মুসলিম দম্পতি।

ট্রাম্পের মুসলিম বিরোধী মতবাদের প্রভাব আরো তীব্রতর হয়ে দেখা দেয় সম্প্রতি অরলান্ডোতে ঘটে যাওয়া সমকামি নৈশক্লাবের হামলার মধ্যে দিয়ে। ওই হামলায় কমপক্ষে ৪৯ জন মানুষ নিহত হয়। আমেরিকার ইতিহাসে এমন নৃশংস হামলা আগে কখনো হয়নি। এরপরই দেয়া বক্তব্যে ট্রাম্প মসজিদগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, ‘মুসলিমরা আমাদের সন্তানদের নিঃশেষ করে দিতে চাইছে।’

তবে ট্রাম্পের মুসলিম বিরোধী মন্তব্য থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিচ্ছে কিছু রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতারা। তারা মনে করেন ট্রাম্পের মুসলিমবিরোধী মন্তব্য আমেরিকাতে ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনবে। ট্রাম্প তার ব্যক্তিগত মতবাদ জনসম্মুখে প্রকাশ করে বেড়াচ্ছেন এবং জনগণকে উসকানি দিচ্ছেন। কোনরকম শাস্তির ভয় না করে তিনি মুসলিমদের ওপর হামলা করতে বলেন। এভাবেই একটি ইফতারির অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ জানাচ্ছিলেন ইব্রাহিম। তিনি বলেন, মানুষ এখন সহজেই অন্যায় করবে কারণ তারা জানে এর জন্য তাকে কোন শাস্তি পেতে হবে না। এবং বার্তা সংস্থা রয়টার্সকেও ট্রাম্পের কোন মতবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। কারণ ট্রাম্প প্রায়ই মিডিয়ার সামনে তার বর্ণবাদী আচরণ প্রকাশ করে মুসলিম বিরোধী মতবাদ প্রকাশ করে।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনের করা সোমবার প্রকাশিত একটি জরিপে দেখা গেছে ২০১৫ সালে দেশটিতে ৭৮ টি মসজিদে হামলা হয়েছে। যা গত দু’বছরের তুলনায় অনেক বেশি। আর এর পেছনে ট্রাম্পের বর্ণবিরোধী মতবাদকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে সব হামলাই যে শারীরিক তা কিন্তু নয় এর মধ্যে বেশ কিছু চিঠি দিয়েও হামলা হুমকির দেয়া হয়েছে। সিএআইআর’র ইসলামফোবিয়া বিভাগের প্রধান নির্বাহী পরিচালক কোরি সেইলর বলেন, অরলেন্ডো হামলার মধ্যে দিয়ে মানুষের মধ্যে ইসলামবিদ্বেষ আবার জাগ্রত হয়েছে তার উপর ট্রাম্পের এসব অমূলক বক্তব্য চললে তা নিশ্চয়ই দেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। তিনি আরো বলেন, ট্রাম্পের এসব বক্তব্য আমেরিকার জন্য হুমকিস্বরূপ। তিনি মূলধারার সংবিধানের বাইরে যেয়ে কথা বলছেন। তার এসব কথায় অনেক মানুষ আইন তার নিজের হাতে তুলে নেবে এবং মুসলিম না হয়েও হামলার পর নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করবে।

এদিকে ট্রাম্পের বর্ণবাদী বক্তব্যে ক্ষুব্ধ ইহুদি ধর্মযাযকরাও। তারা বলেন দেশটিতে অ্যান্টি সেমেটিক ঘটনা দিন বেড়েই চলেছে। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালে তা ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা আরো বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানরা নিরাপদ এবং মুক্ত না হয় তাহলে খ্রিষ্টান এবং ইহুদিরাও দেশটিতে মোটেও নিরপদ নয় এমনটিই বললেন ইহুদিদের প্রধান রাব্বি এরিক উফি। ট্রাম্প শুধু যে দেশটির মধ্যে বসবাসরত মুসলিমদের অবমাননা করছে তা কিন্তু নয়। শরণার্থী ইস্যুতেও তার বক্তব্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে।

নিউ মেক্সিকোতে নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি বলেছিলেন, শরণার্থীরাই মুলত প্রধান অপরাধী। তারা সীমানা অতিক্রম করে এসে অপরাধ করে চলে যায়। ট্রাম্পকে নিয়ে দেশটির একজন মুসলিম কবি মানাল ওমর বলেছেন ট্রাম্পের কণ্ঠে ভাঙ্গনের সুর। এছাড়া দেশের মুসলিম কিছু নাগরিককে ট্রাম্প সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তারা খুব হতাশ হয়ে বলেন, জানি না ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে আমরা তার কাছ থেকে কি আশা করতে পারি। তিনি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে। তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে। তিনি সবাইকে ঐক্যের নয় ভাঙ্গনের বার্তা দিচ্ছে যা আমেরিকার পরিবশেকে দিনকে দিন বিষাক্ত করে তুলবে।



মন্তব্য চালু নেই