জাফলংয়ের অনত্যম আকর্ষণ ‘পিয়াইন’ যেন এক মৃত্যুপুরী!

প্রকৃতিকন্যা জাফলং অপার সৌন্দর্যের এক মনোমুগ্ধকর লীলাভূমি। প্রতিবছর দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক জাফলংয়ের অপূর্বতায় মুগ্ধ হতে ছুটে আসেন। জাফলংয়ের সৌন্দর্যের অনত্যম আকর্ষণ হচ্ছে স্বচ্ছ জলের পিয়াইন নদী। তবে তা যেন এক ‘আকর্ষণীয় মৃত্যুপুরী’তে পরিণত হয়েছে!

গত প্রায় ১৩ বছরে পিয়াইন নদীর বুকে লাশ হয়েছেন ৩২ জন পর্যটক। নদীর জিরো পয়েন্টে সাঁতার কাটতে গিয়ে কিংবা নৌকা চড়তে গিয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছেন তারা।

সর্বশেষ সোমবার পিয়াইন নদীতে সাঁতার কাটতে গিয়ে পানিতে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছে কুমিল্লা থেকে আসা ইব্রাহিম আলী নামক এক পর্যটকের।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গত এক যুগে পিয়াইন নদীতে কতজন পর্যটক মৃত্যুবরণ করেছেন, তার কোনো হিসেব নেই। তবে স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মীর সঙ্গে কথা বলে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৩ সাল থেকে এ বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পিয়াইন নদীতে লাশ হয়েছেন ৩২ পর্যটক।

২০০৩ সালের ১৫ আগস্ট পিয়াইন নদীতে সাঁতার কাটতে গিয়ে সলিল সমাধি ঘটে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেজাউর রহমান ফয়সাল ও রাজন আহমদের।

২০০৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পিয়াইনের বুকে লাশ হন গোয়াইনঘাট উপজেলার মুসা মিয়া, একই বছরের ১৬ আগস্ট একই উপজেলার ফখরুল ইসলাম, ২০০৮ সালের ৯ নভেম্বর ঢাকার পল্লবীর দিলশাদ আহমেদ, ২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বানিপুরের ইউনুস মিয়া, ৮ মে ঢাকার মিরপুরের ফারুক আহমদ, ২১ জুন নরসিংদীর সদর এলাকার সজিব মিয়া।

২০১০ সালের ২৩ মার্চ ঢাকার খিলগাঁওয়ের তারেক আহমদ, একই বছরের ২০ মে গোয়াইনঘাট উপজেলার রফিকুল ইসলাম ও গৌরাঙ্গ কর্মকার, ২২ মে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জের মুস্তাকিন তালুকদার ও ঢাকার শাহরিয়ার আহমদ রাব্বি, ১২ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠির রুহুল আমিন খান রুমি পিয়াইনের বুকে লাশ হন।

২০১২ সালের ২২ আগস্ট ঢাকার ফাহাদ উদ্দিন, ৩০ আগস্ট মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার হিমেল রাজ, ২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকার শনির আখড়ার শুভ আহমদ, ২৫ অক্টোবর ঢাকার যাত্রাবাড়ির ইমরান হোসেন সাঁতার কাটতে গিয়ে পিয়াইনে লাশ হন।

২০১৪ সালের ৩০ মে মাদারিপুর জেলার সদর উপজেলার চলকিপুরের মোহাম্মদ ইব্রাহিম, আগস্টে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার শাকিল মিয়া, মামুন হোসেন, সাদেক হোসেন এবং সিলেটের কামরুল ইসলাম পিয়াইনের বুকে লাশ হন। ওই মাসে অজ্ঞাতনামা আরেকজনের লাশ উদ্ধার করা হয় পিয়াইন থেকে।

চলতি বছরের ২৪ ও ২৫ জুলাই পিয়াইনের বুকে লাশ হন ঢাকার কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগ ঘোষ ও অন্তর।

মেঘালয় পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত অপরূপ সৌন্দর্যের আধার জাফলংয়ে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসেন। বিশেষ করে শীত মৌসুমে এবং দুই ঈদের মৌসুমে হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে জাফলংয়ে।

পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জলরাশিতে জলকেলিতে মাতেন দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। কিন্তু পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেই বললেই চলে সেখানে। মাইকিং করে পর্যটকদের সাবধান করার মধ্য দিয়েই দায় সারছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

তবে বিষয়টি মানতে নারাজ গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা পর্যটকদের সতর্ক করার জন্য নানা পন্থা অবলম্বন করি। মাইকিং করা হয়। সাইনবোর্ড লাগানো হয়। যারা সাঁতার জানেন না, তাদেরকে বেশি পানিতে নামতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু অনেকেই সতর্কবাণী আমলে নেন না।’

তিনি জানান, নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই