জমকালো নাইট-বরণের আবেগে ভাসল ইডেন, বাদশার নাচের ছন্দ

দিলীপ মজুমদার (কলকাতা): জমকালো নাইটবরণের সাক্ষী থাকল কলকাতা৷ টিম শাহরুখকে নিয়ে সকাল থেকেই আবেগে ভাসল তিলোত্তমা৷ কলকাতার বুকে আবার একবার নাইটরাইডার্সের বিজয় উত্সবের উন্মাদনা৷ইডেনে ভক্তদের আবেগেকে সঙ্গে নিয়েই জয়ের কাপ হাতে গোটা মাঠ পরিক্রমণ করলেন শাহরুখ ও টিম কেকেআর l বিমান দেরির জন্য অনুষ্ঠানে আসতে কিছুটা দেরি হয় কিং খানের l তার আগেই অবশ্য টিম কেকেআরের ছেলেদের সম্বর্ধনা দিতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় l তাঁর নেতৃত্বেই একে একে উপহার তুলে দেওয়া হয় বিজয়ী দলের খেলোয়াড়ের l তারপর তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় আলফানসো আম, লিচু, মিষ্টি, দই, সন্দেশ-কেক, উত্তরীয়, হস্তশিল্পের স্মারক ও পুষ্পস্তবক৷ ছিল ব্যাট-বলের প্রতিকৃতিও৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাইটবাহিনীর হাতে তুলে দেন নীল-সাদা শার্ট, ঘন নীল স্যুট-টাই, সুগন্ধী৷ সিএবির তরফ থেকে খেলোয়াড়-সহ কর্মকর্তাদের দেওয়া হয় এক ভরি করে সোনার আংটি৷ কলাকাতা পুলিশের তরফ থেকে নাইটদের দেওয়া হয় রুপোর স্মারক৷ইডেন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিলেন, “এই জয় আমাদের জয়, গোটা বাংলার জয়৷” নতজানু হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগকে স্বাগত জানাল শাহরুখের নাইটবাহিনী৷ শাহরুখের উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কাটা হল কেক ও l সঙ্গে ছিল টিম কেকেআরের সদস্যরা l
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ-৭ জয়ী কলকাতা নাইট রাইডারের বিজয় উত্সবে শামিল হতে মঙ্গলবার ভোররাত থেকেই উত্তেজনায় টগবগ করছিলেন লক্ষ লক্ষ ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার, কলকাতা পুলিশ ও সিএবির উদ্যোগে কেকেআরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাজ্যবাসীর ‘ক্রেজ’ ছিল চোখে পড়ার মতো৷ সোমবার উত্তরবঙ্গে যাওয়ার আগে দুপুরে কলকাতা বিমানবন্দরে এবং পরে শিলিগুড়িতে নাইটদের সংবর্ধনার কথা নিজেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর কথায়, “রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতর, কলকাতা পুলিশ এবং সিএবি যৌথভাবে সংবর্ধনা দেবে৷ ইডেনে ঢুকতে কোনও টিকিট লাগবে না, বিনাখরচে পাস পাওয়া যাবে৷”
এদিন সর্বত্র একটাই রব৷ টিকিট চাই, ফ্রি পাস চাই৷ শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, আকাশে বাতাসে শুধু নাইটদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার হুড়োহুড়ি৷ ট্রেনে-বাসে-ট্রামে, গোটা শহরে একটা উত্সবের মেজাজ৷ ইডেন চলো হুল্লোড়৷ বেলা বাড়তেই মাঠে আসতে শুরু করেছেন টলি থেকে বলি স্টাররা৷ তাঁদের দেখতে ফ্রি পাসের জন্য হাহাকার৷ শহরের ৬৯টি থানা থেকে সোমবার রাত থেকেই দেওয়া হচ্ছিল মাঠে ঢোকার ফ্রি পাস৷ তারপর সকাল থেকেই যেভাবে ফ্রি পাসের জন্য লাইন উপচে পড়েছে তা সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকে৷ কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে সেই পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ কলকাতা পুলিশ৷ বেলার দিকে থানার সামনে আমন্ত্রণপত্রের জন্য বিশৃঙ্খলা শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করল পুলিশ৷ কলকাতার বেশ কয়েকটি থানার সামনে নিজেরাই দাঁড়িয়ে থেকে ফ্রি পাস বিলি করলেন রাজ্যের মন্ত্রীরা৷ সোমবার থেকেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে সফল করতে যোগ্য অবদান রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র থেকে শুরু করে ফিরহাদ হাকিম ও অরূপ বিশ্বাসদের৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে নেতা-মন্ত্রীরা ফ্রি পাস বিতরণ করেন সকাল থেকেই৷ গতকালই বেঙ্গালুরু থেকে নাইটদের সঙ্গে শহরে ফিরেছেন রাজ্য সরকারের এই দুই প্রতিনিধি৷ বিশেষ তত্পরতা দেখান নগরপাল সুরজিত্‍ করপুরকায়স্হ, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ দু’বছর আগে নাইটরা যখন প্রথম আইপিএল জিতেছিল, ইডেনে তাদের সংবর্ধনা মেগা ইভেণ্টের চেহারা নিয়েছিল৷ হাজরা মোড় থেকে হুড খোলা বাসে ইডেন পৌঁছেছিলেন গম্ভীর, কালিস, নারিনরা৷ কিন্ত্ত মারাত্মক গরমে সেবার অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন৷ এবার তাই কোনও রোড শো-র ব্যবস্থা নেই৷ বিনামূল্যের পাস থাকছে ইডেনে প্রবেশের জন্য৷ কিন্তু তাতেও যাতে নিয়ন্ত্রণ থাকে, তার জন্য সোমবার রাতে সিএবি – পুলিশ বৈঠক হয়৷ যাতে নির্ধারিত আসনের থেকে বেশি মানুষ মাঠে না ঢোকেন৷ কিন্তু মঙ্গলবার সকালের চিত্রটাই ছিল অন্যরকম৷ জোগানের চেয়ে বেশি চাহিদায় হিসাবের বাইরে চলে যায় সব পরিকল্পনা৷ বাধ্য হয়ে ইডেনের গেট খুলে দেওয়া হয় সবার জন্য৷ শাহরুখ-জুহিদের দেখার জন্য ফুটছে গোটা রাজ্য৷ আগেরবার এই মঞ্চে শাহরুখ-জুহির পাশে গানের সঙ্গে তাল মিলিয়েছিলেন টলিউডের তারকারাও৷ এবারও তার ব্যতিক্রম হল না৷মাঠ পরিক্রমা করার জন্য মাঝমাঠে এলেন শাহরুখ ও তাঁর টিম l
বাকিরা তখন মঞ্চে l প্রথম মঞ্চে আসেন উষা উত্থুপ৷ তাঁর গানের তালে মাতোয়ারা হল গোটা ইডেন৷ এরপর একে একে মঞ্চ মাতাতে আসেন উজ্জ্বয়িনী, অনীকরা৷ মাঠে তখন নাইটপ্রেমীদের চিত্কারে কান পাতা দায়৷ শুধুই কেকেআর, কেকেআর এবং করবো-লড়বো ধবনিতে মুখর ক্রিকেটের নন্দনকানন৷ তারপর আসেন ভূমির সৌমিত্র রায় এবং ইন্দ্রনীল সেন৷ জুন মালিয়া, হিরণ, সোহম , মিমি , শুভশ্রী সহ টলিউড ও টেলিউডের একাধিক তারকা তখন মাঠে৷ মাঠের বাউন্ডারি লাইনের পাশ দিয়ে শাহরুখ-গম্ভীরদের ভিকট্রি ল্যাপকে কাছ থেকে দেখার জন্য পুলিশের বেষ্টনী এড়িয়ে চলে আসেন বহু মানুষ৷ দর্শনীয় ছিল শাহরুখের বিখ্যাত সেই সামারসল্ট৷
ক্লাব হাউসের সামনের লনে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়৷ ৬৪ ফুট লম্বা আর ৩২ ফুট চওড়া পাটাতন৷ যার উচ্চতা চার ফুট৷ সেই মঞ্চে দুপুর থেকেই গানের ছন্দে পায়ে পা মেলান শাহরুখ-জুহি-সহ অন্যান্য টলি তারকারা৷ দর্শকরা যাতে মাঠে না গিয়েও সরসারি অনুষ্ঠান দেখতে পান সেজন্য রেড রোডে বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে এবং বাবুঘাটে জায়াণ্ট স্ক্রিনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷



মন্তব্য চালু নেই