ছেলের যৌন সম্পর্কে বাধা দেয়ায় খুন হয়েছিল রাব্বি দম্পতি
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি দম্পতিকে হত্যার ঘটনায় তাদের দুই ছেলে হাসিব আর ওমরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে স্যান হোসে শহরের পুলিশ। কিন্তু কেন তারা নিজের বাবা-মাকে এভাবে গুলি করে হত্যা করলো, তার কারণ এখনো অস্পষ্ট। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং কোম্পানি সংক্ষেপে এনবিসি একটি অজ্ঞাতনামা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বড় ছেলে হাসিব বিন গোলাম রাব্বির অবাধ যৌন সম্পর্কের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তার বাবা-মা। এ কারণে তাদের গুলি করে হত্যা করেন বড় ছেলে ২২ বছরের রাব্বি । তবে তার অবাধ যৌনতার বিষয়টি খোলসা করেনি এনবিসি।
গত মাসের শেষ নাগাদ নিহত স্যান হোসে শহরের নিজের বাড়িতে খুন হয়েছিলেন ওই দম্পতি। এ হত্যার ঘটনায় গত শুক্রবার মার্কিন প্রসিকিউটররা রাব্বি ও তার ছোট ভাই ওমর গোলাম রাব্বির (১৭) বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। গত ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত গোলাম রাব্বি (৫৯) ও তার স্ত্রী শামিমা রাব্বির (৫৭) মৃতদেহ স্যান হোসে শহরে তাদের নিজ বাড়ি থেকে উদ্ধার করেন স্বজনরা। কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে তারা বাড়িতে ঢুকে মৃতদেহ দুটি দেখতে পায়। এ সময় বাড়ির জিনিসপত্র ছিল ছড়ানো ছিটানো। সারা ঘরের দেয়ালে কালো কালিতে লেখা ছিল নানা কথা বার্তা। একটিতে লেখা ছিল: ‘দুঃখিত, প্রথম খুনটা ঠিকঠাক করতে পারিনি (সরি, মাই ফার্ষ্ট কিল ওয়াজ ক্লামজি)।’ আর একটিতে লেখা ছিল,‘তোমার ভাইয়ের খেয়াল রেখো(টেক কেয়ার অফ ইউর ব্রাদার)।’
এ সম্পর্কে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি ডিস্ট্রিক অ্যাটর্নি ম্যাট ব্রেকার বলেছেন,‘শনিবার ২৩ এপ্রিল গোলাম রাব্বি ও শামিমা রাব্বি তাদের দুই ছেলের হাতে খুন হয়েছেন। গোলাম রাব্বিকে লক্ষ্য করে এক ডজনের বেশি বার গুলি করা হয়েছিল। তবে মাথায় একটি মাত্র গুলিতেই মারা যান শামিমা।’ জোড়া খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে গত বুধবার রাতেই তাদের দুই ছেলেকে আটক করেছে পুলিশ। হাসিবকে ক্যালিফোর্নিয়ার ট্রাসি এবং ওমরকে স্যান হোসে এলাকা থেকে আটক করা হয়েছিল। পরে হাসিব তার বাবা-মাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
তবে এ ঘটনায় তারা অনুতপ্ত নয় বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা। শুক্রবার দুই ভাইকে আদলতে হাজির করা হলে তারা ছিল স্বাভাবিক। এ সম্পর্কে ওমর বলেছে, বাবা-মাকে খুন করার পর হাসিব তাকে ঘরের জানালা বন্ধ করে দিতে বলে। এছাড়া গ্যারেজের নিচ দিয়ে রক্ত দেখা যাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরই তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।
তাদের বাড়ির দেয়ালে যেসব লেখা পাওয়া গেছে তা দুই ব্যক্তির বলে তদন্তকারী কর্মকর্তারা দাবি করেছে। একটি হাতের লেখার সঙ্গে ওমরের হাতের লেখার মিল রয়েছে। ফলে দেয়ালের কিছু লেখা ওমরের বলে তারা দাবি করেছে। খুনের পর হাসিব দিন কয়েক ম্যাথিউ কুচ নামের এক বন্ধুর সঙ্গে ছিল। ওই বন্ধুটি এ খুনের বিষয়ে আগে থেকেই জানত।
এখন পর্যন্ত এই খুনের কোনো মোটিভ মেলেনি। তবে অজ্ঞাতনামা সূত্রের বরাত দিয়ে এনবিসি জানিয়েছে, এই খুনের পিছনে হাসিবের যথেচ্ছা যৌন জীবনযাপনের একটি ভূমিকা রয়েছে। কেননা তার এই উদ্দাম জীবন তার বাবা-মায়ের পছন্দ ছিল না।’ এ কারণে দেয়ালে একটিতে লেখা ছিল,‘আমি তোমাদের মিথ্যা বলতে পছন্দ করি না। আমি তাদের অগোচরে কারো সঙ্গে সম্পর্ক করতে পারি না।’
এদিকে গত বৃহস্পতিবার জেলখানা থেকে হাসিব রাব্বি বলেছেন, ‘আমি সবাইকে আসল ঘটনা খুলে বলতে চাই। কিন্তু আইনজীবী ছাড়া আমি কোনো কথা বলব না।’ এ সময় তিনি আরো জানান, এই খুনের সঙ্গে তার ছোট ভাই ওমরের কোনো সম্পর্ক নেই। সে সম্পূর্ণ নির্দোষ।
মন্তব্য চালু নেই