মালয়েশিয়ার বন্দিশিবির থেকে দেশে ফিরছেন ১২০ বাংলাদেশি

বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় দীর্ঘ এক বছর মালয়েশিয়ার বুকিত জিলিল বন্দিশিবিরের গ্লানি টেনে দেশে ফিরছেন ১২০ জন বাংলাদেশি।

গত বছরের শেষের দিকে ভাগ্য ফেরানোর আশায় দালালদের প্রলোভনে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন নিয়ে স্বল্প খরচে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় এসেছিলেন তারা। তবে মালয়েশিয়া যাত্রা শুরুর আগে তারা উপলব্ধি করতে পারেননি, কী আছে সামনে। ভাগ্য বদলের আশায় তারা বিভোর তখন।

স্বপ্নের দেশে যাত্রা শুরুর পরপরই খুলতে থাকে তাদের চোখ। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। দুর্গম সাগর পথে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, অবর্ণনীয় অত্যাচারে হঠাৎ চোখ খুলে যাওয়া এই যুবকদের সামনে তখন না আছে সামনে যাওয়ার পথ, না আছে পেছনে ফেরার পথ।

থাইল্যান্ডের জঙ্গল আর মালয়েশিয়ায় বন্দিজীবন কাটিয়ে দূতাবাসের সহযোগিতায় আগামী ৭, ১৪ ও ২১ ডিসেম্বর মালিন্দো ও মালয়েশিয়ান এয়ার লাইনসে ওরা ফিরছেন বাংলাদেশে।

দূতাবাসের শ্রম শাখার প্রথম সচিবের পিএ মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এসব বন্দি অবৈধ পথে মালয়েশিয়া প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। মানবপাচারের একটি মামলার সাক্ষী হিসেবে তাদের বন্দিশিবিরে আটক রাখা হয়েছিল।

তিনি জানান, দীর্ঘ এক বছরে মামলার নিষ্পত্তি না হলেও সম্প্রতি দেশটির আদালত ১২০ জন বাংলাদেশি বন্দিকে দেশে পাঠাতে এক আদেশ জারি করেন। আদেশের পরপরই ১২ নভেম্বর দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) শাহিদা সুলতানা বুকিত জলিল ক্যাম্পে গিয়ে ওই ১২০ জনের তালিকা সংগ্রহ করে গত ২৯ নভেম্বর ট্রাভেল পাস ইস্যু করে ক্যাম্পের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছেন।

এসব বন্দি বাংলাদেশি দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল করতে এবং পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে ভিটেমাটি-সহায়সম্বল বিক্রি করে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পরিবারে হাসি ফোটানো তো দূরে থাক, পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বন্দিশিবিরে অসহায়ত্বের গ্লানি টেনেছেন তারা।

জীবিকার তাগিদে স্বজনদের ফেলে জীবনবাজি রেখে কতো লোক সাগর পাড়ি দিতে নৌকায় চড়েছেন? তাদের মধ্যে পথেই মারা গেছেন কতজন? এসব প্রশ্ন এখন ঘুরে-ফিরে আসছে।

প্রবাসীরা বলছেন, অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করতে উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে তা জনশক্তি রফতানির পথকেই রুদ্ধ করতে পারে।

এদিকে অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য বিভাগের সদস্যরা প্রতিদিনের চিরুনি অভিযানে এ পর্যন্ত কতজন বাংলাদেশিকে আটক করেছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

তবে ইমিগ্রেশন বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, সিমুনিয়া, লেঙ্গিং, লাঙ্গ, জুরুত, তানাহ মেরায়, মাচাপ উম্বু, পেকা নানাস, আজিল, কেএলআইএ সেপাং ডিপো, ব্লান্তিক, বুকিত জলিল ও পুত্রজায়ায় সাম্প্রতিক অভিযানে আটককৃত বাংলাদেশির সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।

এর মধ্যেই গত মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার স্থানীয় গণমাধ্যম সেখানকার উপকূলীয় এলাকায় নতুন করে ৭০০০-রও বেশি অবৈধ বাংলাদেশিকে আটকের খবর জানায়।

মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশের উপসহকারী পরিচালক জোসামি মাস্তান বলেন, বিভিন্ন কারাগার ও ক্যাম্পে যারা আটক আছেন, তাদের বেশিরভাগই অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ কিংবা অবৈধভাবে থাকার কারণে গ্রেফতার হয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইন, ১৯৫৯-এর ধারা ৬(১) সি/১৫ (১) সি এবং পাসপোর্ট আইন, ১৯৬৬-এর ১২(১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এদিকে হাইকমিশনের শ্রম শাখার প্রথম সচিব শাহিদা সুলতানা জানান, বন্দিশিবিরে যারা আটক রয়েছেন দূতাবাসের শ্রম শাখার সচিবরা প্রত্যেকটি বন্দিশিবির পরিদর্শন করে বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব যাচাই এবং শনাক্ত করে পর্যায়ক্রমে তাদের দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি আরো জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ৬ হাজার ৭৯৭ জনকে বিভিন্ন বন্দিশিবির থেকে ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে দেশে পাঠানো হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই