প্রবাসের বুকে কষ্টের অসহ্য যন্ত্রনা প্রবাসী ছাড়া আর কেউ বুঝবে না

এ.আর রনি, দুবাই থেকে : আমাদের প্রতিদিনের কষ্ট কাহিনীঅনেকেই জানে না, বেশীর ভাগ সময় আমরা নিজেই প্রকাশ করতে সাচ্ছন্দ বোধ করি নাকারন কষ্টের কথা যন্ত্রনার কথা প্রকাশ করাও এক ধরনের কষ্ট।

আমাদের বুকের যন্ত্রনা প্রতিটি ক্ষন মূহুর্তে অন্তরে অন্তরে অবলীলায়আমাদেরকে কাঁদিয়ে যায়। আমাদের চোখের জল চোখেই শুকায়, কেউ আদর করে মুছে দেয়না। বেঁচে থাকার জন্য, ভালো থাকার অভিনয় করে নিজেই নিজের সাথে ছলনা করি।দেশের পরিবার পরিজন যাহাতে ভালো থাকতে পারে এই চিন্তা মাথায় রেখেই আমাদেরকেঅভিনয় করে হলেও সুখের হাসি হেসে বলতে হয় ‘আমি ভালো আছি মা, ভালো আছি বাবা’।

একজন প্রবাসী আরো একজন প্রবাসীর সাথে যেভাবে জীবনের দুঃখ যন্ত্রনাভাগাভাগি করে আপন পরিবার পরিজনের সাথে এই ভাবে প্রান খোলে কথা বলতে পারেনা। কারন মাত্র একটা “পিছনে রেখে আসা মানুষ গুলো সুখে থাকুক আমাদের কষ্টযেন ওদেরকে স্পর্শ করতে না পারে” দেশের মানুষ শুধুই আমাদের সুন্দর সাস্থ্যআর হাসি মাখা মুখটাই দেখে, তাই আসল সত্যটা হাসি আর চোখে দেখা সুখের আবরনে ঢাকাপড়ে যায়। আর এক ধরনের ভূ্ল ধারনা বদ্ধমূ্ল হয়। প্রবাসের বাস্তব চিত্র আমিযেভাবে দেখেছি তার সাথে দেশের মানুষের অনেক দ্বিমত থাকতে পারে, তবে যাদেখেছি তা কাগজ কলমের সাহায্যে আপনাদের কাছে প্রকাশ করার চেষ্টা করবো।তির্থের কাকের মত আশায় চেয়ে থাকা প্রবাসী জীবনের এক একটি দিন যা কাউকে সহজেবুঝাতে পারি না।

প্রবাসে টাকা আছে তবে সুখ যে নেই তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সবার ধারনা প্রবাসমানেই হলো সুখ আর সুখ। বাস্তব সত্য হলো আমরা নামে মাত্র শুধু বেঁচে থাকিতবে বেঁচে থাকার স্বাদ আমাদের ভাগ্যে নেই। ভালোবাসাহীন জীবন নিয়ে বুক ভরাকষ্টের পাহাড় নিয়ে সুখের আশে পাশেও যাবার ভাগ্য হয় না আমাদের। মাঝে মাঝেমনে হয় আমরা বেঁচে নেই যাকে বলে জিন্দা লাশ। আমরা প্রবাসীরাও এক একটাজিন্দা লাশ। যে সুখের আশায় রক্ত বাঁধনের মানুষ গুলোকে পিছনে রেখে একদূর পথপাড়ী দিলাম কিন্তু সুখের মুখ দেখা হলো না।

বুক ভরা শুন্যতার শুন্যস্থান সঠিক ভাবে পুর্ণ হলোনা। কষ্ট আর হাহাকারবুকে নিয়ে সুখের আশায় বৃথা এই দৌড় ঝাঁপ দিতে দিতেই আমাদের জীবনে প্রদীপনিভে যায়। (প্রবাসে কিছু মানুষ আছে যারা আমাদের মত অসুখী নয়, তাদের টাকাপয়সা সবই আছে তবে ওরা সংখ্যায় খুবই কম ওদের কথা আলাদা। আবার এই সুখীমানুষের অসুখের কাহিনীরও শেষ নেই) টাকা পয়সা সব সময় অসুখীর মূল বষ্য নয়।জীবনে টাকার প্রয়োজন তা আমি অস্বীকার করবো না, জীবনে টাকার প্রয়োজন আছে, জীবনকে সুন্দর ভাবে সাজাতে হলে টাকা অগ্রনী ভূমিকা পালন করে থাকে। টাকা যেআবার সব সমস্যার সমাধান তাও স্বীকার করবো না। যেখানে মানুষের প্রয়োজনসেখানে টাকা একেবারে অর্থহীন হয়ে যায়। জীবনে সুখী হবার জন্য হিসাবের কিছুবিষয় আছে আমাদের জ়ীবনে প্রতিফলিত না হলে আমরা সুখের মুখ দেখতে পাই না।প্রবাসীরা কোন সময় পরিপূর্ন সুখী হবার স্বপ্ন দেখে না।

আমাদের চাহিদা একেবারে সিমীত, পরিবার পরিজন নিয়ে এক চিলতে হাসি ভাগাভাগিকরে একই ছাদের নিচে হাতে হাত ধরে বসবাস করা। সুখে দুঃখে ভালোবাসার মানুষেরবুকে মাথা রেখে আগামীদিনের স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসআজ আমরা প্রবাসী, হিসাবের সুখটুকু আমাদের ভাগে আর পড়ে না। কাংগালের মতমানুষের সুখ দেখে দেখেই বেঁচে থাকতে হয়, চোখের জলে বুক ভাসাতে হয় দিনের পরদিন রাতের পর রাত।

অনিশ্চয়্তার মাঝে কেটে যায় আমাদের জীবনের এক একটি দিন রাত বড়ো অবহেলায়বড় অনাদরে। বুকের মাঝে সমাহীত কষ্ট গুলো বুকের মাঝেই কেঁদে কেঁদে মরে।আমাদের চারপাশে শান্তনা দেবার কেউ নেই, আমাদের মা নেই ভাই বোন কেউ নেই যারসাথে এক দুঃখ কষ্টের কথা বলবো। সারাদিন কাজ শেষে বাসায় ফিরে যখন শুন্য চারদেয়ালের মধ্যে রাত পোহাতে হয় তখন শুরু হয় কাংখীত জীবনের চুলছেড়া হিসাবকিতাব। যোগ বিয়োগের হিসাব আর মিলে না, বড় ধরনের গড়মিল দেখা দেয়, হাহাকারভরা অশান্ত মন হু হু করে কেঁদে উঠে গন্ড বেয়ে যন্ত্রনার বিষাক্ত জল ঝরতেথাকে। যন্ত্রনা ভূ্লে থাকার এই সহজ উপায় প্রতিটি প্রবাসী ভাই বোন বেশ ভালোকরে রপ্ত করেছেন যা অনেকেই জানে না । ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে লুকিয়ে রেখে হাসির মুখোস পড়ে বলতে হয় ভালো আছি মা, তোমরাও ভালো থেকো।



মন্তব্য চালু নেই