ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীদের লাঠিপেটা : পুলিশের নায়েক বরখাস্ত

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে ছাত্র ইউনিয়নের ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশি তাণ্ডবের পর আজ সেমাবার এই বাহিনীর এক নায়েককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

গতকালের ওই ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে হাইকোর্টে একটি রিটও দায়ের করা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ সোমবার এ রিট আবেদনটি দায়ের করেছেন।

বরখাস্ত হওয়া নায়েকের নাম আনিস। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম আনিসকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গতকালের ঘটনায় পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটার পাশাপাশি গণমাধ্যমে বিশেষ আলোড়ন তোলে ইউনিয়নের এক নেত্রীর সঙ্গে পুলিশের আচরণের বেশ কিছু ছবি। যে ছবিগুলোতে দেখা যায় ইসমাত জাহান জ্যো নামের ওই নেত্রীকে পুলিশের এক সদস্য লাথি মারতে উদ্ধত হয়েছেন, কেউ তার গলা ধাক্কা দিচ্ছেন, কেউ বা তার চুলের মুঠি ধরে আছেন।

রোববার দুপুরে ব্যাপক পুলিশি অ্যাকশনে ছাত্র ইউনিয়নের ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে মঙ্গলবার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়।

রাতের মধ্যে এই ঘটনার নিন্দা জানানো হয় বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে। সোমবার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চাও।

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ ৬ দফা দাবিতে রোববার দুপুরে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও করতে যায় ছাত্র ইউনিয়ন। দুপুর ১২টার দিকে মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপুর্ণ সড়ক প্রদিক্ষণ করে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ের দিকে যায়।

ছাত্র ইউনিয়নের এ কর্মসূচি ঠেকাতে পুলিশ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। বিশেষ করে ঢাবি ক্যাম্পাস ও শাহবাগ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। ব্যারিকেড দেয়া হয় শাহবাগে। তবে ছাত্র ইউনিয়নের মিছিলটি শাহবাগের দিকে না গিয়ে উল্টোপথে টিএসসি-কার্জন হল হয়ে ডিএমপি কার্যালয়ের দিকে চলে যায়। প্রধান বিচারপতির বাসভবনের কাছে পুলিশি বাধায় পড়ে মিছিলটি। বাধা পেয়ে ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীরা রাস্তায় অবস্থান নেন এবং নেতারা বক্তব্য দিতে শুরু করেন। অবস্থানের প্রায় আধা ঘণ্টার মাথায় বিনা উসকানিতে পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ করেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা। এতে ৩৩ জন আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আটক করে ৫ জনকে।

ওই ঘটনায় ৬ পুলিশ আহত হন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রমনা থানার ওসি মশিউর রহমান গতকাল বলেন, ‘ছাত্র ইউনিয়ন স্মারকলিপি দেয়ার কথা বলে মূলত নাশকতা সৃষ্টির জন্য এসেছিল।’

তিনি বলেছিলেন, ‘তারা পুলিশের তিনটি ব্যারিকেড (দোয়েল চত্বর, মৎস্যভবন, কাকরাইল মসজিদ মোড়) ভেঙে সর্বশেষ বেইলি রোডের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে। এখানে তারা ব্যর্থ হয়ে রাস্তায় বসে পড়ে। তাদের উঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এসময় তিন রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে পুলিশ। অন্যদিকে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইপ-পাটকেল ছোড়ে। এতে ৬ পুলিশ আহত হন।’

কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর ছাত্র ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক লাকী আক্তার বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপর পুলিশের এই নারকীয় তাণ্ডব প্রমাণ করে তারা দোষীদের আড়াল করতে চায়। রাষ্ট্রের এমন ফ্যাসিবাদী আচরণ রুখে দিতে দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’



মন্তব্য চালু নেই