ছবি ছেঁড়ায় এক বছরের জেল

প্রতিনিয়ত বিশ্বের বিচারিক ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছে। সংবিধানকে আইন হিসেবে ব্যবহার করে দেশে দেশে বিচারব্যবস্থা বাড়তি সুবিধা গ্রহন করছে ধনীক শ্রেণির স্বার্থে। দেশ-কাল-পাত্র ভেদে তাই বিচারের নামে ঘটছে প্রহসন ও রাজনীতি। যেমনটা আমরা বাহারাইনের মানবাধিকারকর্মী জয়নব আল খাজার ক্ষেত্রে দেখতে পাই। দেশের বাদশার ছবি ছেঁড়ার কারণে দেশটির আদালত থেকে তাকে এক বছরের কারাভোগ দণ্ড দেয়া হয়েছে।

আর কয়েকদিন পরেই জয়নব খাজার বয়স হবে ৩২ বছর। ২০১২ সালেও তাকে এমনই এক ছবি ছেড়ার কারণে আদালতের মুখোমুখি দাড় করানো হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে যখন তাকে ইসলামিক আদালতে হাজির করা হয়, তখন তিনি প্রতিবাদ হিসেবে আরও একটি ছবি ছেঁড়েন। আর তাতেই চটেছেন দেশের বাদশাহ ও তার আজ্ঞাধীন বিচারব্যবস্থা। বাহরাইনের রাজপ্রশাসন ছবি ছেঁড়ার ব্যাপারটিকে বাদশাহর জন্য চরম অপমান হিসেবে দেখছেন।

জয়নব খাজার বোন মরিয়ম আল খাজার মতে, আদালত জয়নবের বিরুদ্ধে আট হাজার ডলার জরিমানাও ধার্য করেছে। যদি এই পরিমান অর্থ পরিশোধ করা না হয় তাহলে তাকে আরও অতিরিক্ত দেড় বছর কারাগারে কাটাতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, দেশটির কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার চেষ্টা করলে আদালতের পক্ষ থেকে সেই আপিল গ্রহন করা হয়নি।

এদিকে অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মুখপাত্র জেমস লিঞ্চ এক বিবৃতিতে জানান, ‘এটা সত্যিই হাস্যকর যে, রাষ্ট্রের প্রধানের ছবি ছেঁড়ার কারণে জয়নব আল খাজাকে এক বছর কারাগারে কাটাতে হবে।’ বিবৃতির পাশাপাশি জেমস এই ঘটনাকে বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবেও অভিহিত করে আদালতের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, বাহরাইনি কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরেই ভিন্নমতকে দাবিয়ে রাখার জন্য বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করছে।

সিরিয়া এবং ইরাকে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে চালানো আমেরিকার সামরিক অভিযানের অন্যতম অংশীদার হলো এই বাইরাইনি সুন্নি বাদশা। এছাড়াও দেশটির উপসাগরেই অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের পঁঞ্চম নৌবহর। বাহরাইনে রাজতন্ত্র থাকার ফলে দীর্ঘদিনের মানবাধিকার বিবর্জিত কার্যক্রম নিয়ে কোনোদিন যুক্তরাষ্ট্র বাহরাইনকে চাপ না দিলেও, সম্প্রতি জয়নব আল খাজার বিষয়টি নিয়ে নিন্দাজ্ঞাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

উল্লেখ্য, গত বছর বাহরাইনে নিযুক্ত এক মার্কিন কর্মকর্তা মানবাধিকার ইস্যুতে দেশের বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে। এর প্রেক্ষিতে বাদশাহর বিশেষ নির্দেশে ওই মার্কিন কর্মকর্তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই