চিতাবাঘের দখলে রেলের কন্ট্রোল রুম, অতঃপর

আসামের গোহাটিতে ঘটল এক লঙ্কাকাণ্ড। এখানে ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের সদর দফতরজুড়ে এক চিতাবাঘের তাণ্ডব এখন রীতিমতো আলোচনায় পরিণত হয়েছে। পাঁচ ঘণ্টার জন্য এখানের কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুমের ‘কন্ট্রোল’ চলে গিয়েছিল ওই চিতাবাঘের কবলে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার প্রাণান্তকর চেষ্টায় ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে তবেই চিতাবাঘটিকে কাবু করা সম্ভব হয়।

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের সদর দফতরটি গোহাটির মালিগাঁও এলাকায় পাহাড়ের কোলে। এখানে কামাখ্যার উল্টোদিকে থাকা পান্ডু ও মালিগাঁও এলাকায় চিতাবাঘের বিচরণ নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু উঁচু পাঁচিলঘেরা রেলের সদর দফতরে এভাবে বাঘ ঢুকে পড়ার ঘটনা নজিরবিহীন। ঘটনাটি শুক্রবারের।

ঘটনাটি এ রকম- রেলকর্মীরা সিসি ক্যামেরার রেকর্ডিং চালিয়ে দেখেন দফতর চত্বরে ঘুরছে বিরাটাকৃতির একটি চিতাবাঘ। খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশপাশের মানুষ দফতরের বাইরে ‘বাঘ দেখতে’ ভিড় জমান। ক্যামেরার চোখে ধরা পড়া চিতাবাঘকে খুঁজে বের করতে আসরে নামেন আরপিএফ ও রেলকর্মীরা।

গোটা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখপাত্র নৃপেন্দ্র ভট্টাচার্য জানান, প্রথমে দফতরের ভেতরে থাকা স্টেট ব্যাংক শাখার সিঁড়িতে বসে থাকা অবস্থায় চিতাবাঘটির দর্শন মেলে। সকাল ৯টা নাগাদ কর্মীদের আনাগোনা ও গাড়ি চলাচল শুরু হতেই গোলমালে বিরক্ত চিতাবাঘ এক লাফে দফতরের ভেতরে চলে আসে। সদর দফতরের বারান্দা বরাবর আসতে থাকে সে। চিতাবাঘের সামনে পড়েন আরপিএফ ইন্সপেক্টর টিংকু আলি। তার মুখে থাবার আঘাত করে সে। চোখ বাঁচলেও কান ও মাংস উপড়ে আসে। রক্তাক্ত ওই জওয়ানকে কোনোমতে বের করে আনা হয়।

মানুষের দৌড়াদৌড়ি চেঁচামেচিতে চিতাবাঘও ঘাবড়ে যায়। আরো দুই রেলকর্মীকে জখম করে বাঘটি বারান্দা বরাবর দৌড়াতে থাকে। সামনেই ছিল ‘সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম’-এর দরজা। ওই ঘর থেকে রেলের সমস্ত গতিবিধিতে নজর রাখা হয় বলে ২৪ ঘণ্টাই সেখানে অনেক কর্মী কাজ করেন। প্রবেশপথ দিবারাত্র খোলা থাকে। দফতরের অন্য সব ঘরের কর্মীরা ভয়ে দরজা বন্ধ করলেও, কন্ট্রোল রুমের দরজা খোলাই ছিল। দরজা খোলা পেয়েই চিতাবাঘটি সেখানে ঢুকে পড়ে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ভেতরের কর্মীরা।

নৃপেন্দ্র ভট্টাচার্য জানান, ঘর থেকে বেরোবার একটাই দরজা। কপাল ভালো, কর্মীদের আক্রমণ না করে চিতাবাঘটি কন্ট্রোল রুমের ভেতরের টিফিন রুমে ঢুকে পড়ে। ১২ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট চওড়া ওই ঘরে চিতাবাঘ ঢুকে পড়তেই কমার্শিয়াল সুপারভাইজার শুভঙ্কর রায় বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে ছিটকিনি টেনে দেন। কিন্তু ক্রুদ্ধ চিতাবাঘ সজোরে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে। প্লাইউডের দরজায় পলকা ছিটকিনি যে চিতাবাঘকে আটকে রাখতে পারবে না, তা বুঝেই রেলকর্মীরা প্রথমে দরজার বাইরে দুটি তালা ঝুলিয়ে দেন। তার পর বড় লোহার আলমারি টেনে এনে দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে দেন তারা।

খবর পাওয়ার প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পরে গোহাটি বন্যপ্রাণ, অভয়ারণ্য ও চিড়িয়াখানা ডিভিশনের কর্মী ও চিকিৎসকরা যৌথভাবে চিতাবাঘ ধরতে আসেন। কিন্তু জনতার অতি উৎসাহে কাজে সমস্যা হচ্ছিল। বনকর্মীরা দীর্ঘ চেষ্টার পরে জানালা দিয়ে চিতাবাঘটিকে লক্ষ্য করে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়ে। বেলা পৌনে দুটো নাগাদ অবসন্ন হয়ে পড়া চিতাবাঘটিকে বের করে গাড়িতে তোলা হয়। আপাতত চিড়িয়াখানায় তার চিকিৎসা চলছে।

তথ্যসূত্র : আনন্দবাজার অনলাইন



মন্তব্য চালু নেই