ক্লিনিক আছে, ডাক্তার নেই
এই এলাকাটিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোগীদের উপচে পড়া ভিড় লেগেই থাকে। তারা সবাই দীর্ঘ সারিতে দাড়িয়ে অপেক্ষা করে এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার একহাত দিয়ে চোয়াল চেপে ধরে বসে থাকে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যে রোগীদের কথা বলছি তারা সবাই দাঁতের চিকিৎসার জন্য দন্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছে। কিন্তু এ কেমন দন্ত চিকিৎসকের চেম্বার! দেখতে চুল কাটা সেলুনের চেয়ে কোনো অংশে কম না। আমরা বলছি পাকিস্তানের করাচির সাদ্দার শহরের কথা। এখানে রাস্তার পাশে সারি বেধে গড়ে ওঠেছে এরকম অসংখ্য চীনা দন্ত চিকিৎসালয়। একটি চেয়ার ও সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি দিয়ে কিভাবে হয় এখানে দন্ত চিকিৎসা? প্রশ্ন যদি থেকেই থাকে তাহলে একটু বিস্তারিত জানা যাক।
করাচির সাদ্দার শহরে রাস্তার পাশে সাড়ি বেধে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য চীনা ডেন্টাল ক্লিনিক। এসব ডেন্টাল ক্লিনিকের সংখ্যা পুরো সাদ্দার শহরে ২০ থেকে ৫০টির মতো হবে। প্রতিদিন এখানে দাঁতের চিকিৎসার জন্য ভিড় জমান বিপুল সংখ্যক রোগী। চোখের নিমিষেই এখানে দেয়া হয় দাঁতের চিকিৎসা। দাঁত মুক্তোর মতো সাদা এবং মাড়ি গোলাপি করা থেকে শুরু করে সব রকম দাঁতের চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় এখানে। চীন থেকে আনা পণ্য দিয়ে চীনের ট্রেডমার্ক লাগিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে এখানে। আপনি পান, মিষ্টি খেতে ভালোবাসেন তাতে দাঁতের কোন প্রকার সমস্যা নেই বরং কম খরচে সব সবরকম দাঁতের চিকিৎসা পাওয়া যাবে এখানে। এখন প্রশ্ন হলো কারা দিচ্ছেন এরকম চিকিৎসা।
এসব দন্তচিকিৎসালয়ে যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন বলতে গেলে তারা শহরের নামিদামী দন্ত চিকিৎসক থেকেও বেশ অভিজ্ঞ। একটি চেয়ারে বসিয়ে নিমিষেই তারা বিপুল সংখ্যক রোগীকে সেবা প্রদান করে থাকেন। তবে এই চেম্বারগুলোকে চীনা ডেনটিস্ট ক্লিনিক এর জায়গায় চায়না ডেন্টাল সেুলন বললেও ভুল হবে না। তবে মজার বিষয় হলো, নামে চীনা ডেনটিষ্ট ক্লিনিক হলেও সেখানে দেখা মিলবে না কোন চীনা ডাক্তারে। স্থানীয় হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে প্রতিদিন হচ্ছে অসংখ্য দন্ত রোগীর চিকিৎসা। আর এসব চিকিৎসার জন্য নামিদামী ক্লিনিকগুলোতে যেখানে নেয় পাঁচ থেকে সাত হাজার রুপি সেখোনে চীনা ডেন্টাল ক্লিনিকগুলোতে নেয়া হয় সব রোগের চিকিৎসার জন্য মাত্র এক হাজার রুপি।
সাদ্দার শহরের এরকমই একটি ক্লিনিকের নাম হলো রিচার্ড হুস ক্লিনিক। নামে রিচার্ড হুস হলেও সেখানে গিয়ে দেখা মিললো না রিচার্ডের। তার সহকারি ডাক্তার শেখকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, রিচার্ড বড়দিনের জন্য কানাডায় আছেন। এদিকে অন্য ক্লিনিকগুলোতে যেয়ে চীনা ডাক্তারদের সন্ধান করা হলে বলা হয় তারা সবাই চীনা নববর্ষের জন্য বর্তমানে চীনে আছেন। নববর্ষ শেষেই দেশে ফিরে আসবেন।
সারা বিশ্ববাজার যখন চীনের দখলে তখন করাচির সাদ্দার শহরটি বা বাদ পড়বে কেন। চীনা পণ্য শুধুমাত্র পাকিস্তানে নয় সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে এর বেশ চাহিদা। আর এই কারণে ঝাকঝমকপূর্ণ করে সাজানো ক্লিনিকগুলো এবং তাদের বিজ্ঞাপনের বিশাল আয়োজন খুব সহজেই রোগীদের সেখানে সেবা নিতে আকৃষ্ট করে। তবে এতোকিছুর পরেও এই ক্লিনিকগুলোর গুনগত মান নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়।
মন্তব্য চালু নেই