কেজরিওয়াল আবারো দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী!

দিল্লির মসনদে ফের বসতে চলেছেন আম আদমি পার্টির (এএপি) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। শনিবার অনুষ্ঠিত দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ১০ জানুয়ারি প্রকাশের আগেই তিনি কীভাবে মুখ্যমন্ত্রী হলেন- পাঠকের কাছে একটু বিস্ময়কর মনে হতে পারে! তবে কেন্দ্রফেরত ভোটারদের নিয়ে করা সব জরিপে কেজরিওয়ালের দল এএপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে- এমন আভাসই পাওয়া গেছে।

২০১৩ সালে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল রাজনীতিতে নবাগত মুখ এএপি। তবে ভোটে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও তৎকালীন কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে নিয়ে সরকার গঠন করে দলটি। আর মুখ্যমন্ত্রী হন কেজরিওয়াল। কিন্তু সে সময় কংগ্রেস সরকার দুর্নীতিবিরোধী জন লোকপাল বিল পাস না করায় শপথগ্রহণের ৪৯ দিনে মাথায় বিধানসভা ভেঙে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

শনিবার মহা ধুমধামে অনুষ্ঠিত হয় ভারতের দিল্লির বিধানসভার ভোট গ্রহণ। উৎসবমুখর পরিবেশে দিল্লিবাসী ভোট কেন্দ্রে যান। এতে বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর শোনা যায়নি।

দিন শেষে কেন্দ্রফেরত ভোটারদের ওপর জরিপ (এক্সিট পোল) চালিয়ে যে ফলাফল দিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এতে বিজেপি ও কংগ্রেসের অবস্থা খুবই খারাপ। জরিপের ফলাফলে বড় পার্থক্য রেখে এগিয়ে রয়েছে এএপি। সাতটি মধ্যে পাঁচটি জরিপে বলা হয়, বিধানসভায় এএপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে।

সাতটি জরিপের ফলাফল গড় করে দেখা যায়, এএপি বিধানসভার মোট ৭০ আসনের মধ্যে পেতে পারে ৪৩টি আসন। যেখানে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ৩৬টি। ভারতের কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি পাবে ২৫ আসন। অর্থাৎ এবার নয়াদিল্লিতে এককভাবে সরকার গঠনের দ্বারপ্রান্তে এএপি।

জরিপে এএপি, সর্বনিম্ন ৩১ থেকে সর্বোচ্চ ৫৩টি আসন পাবে। অন্যদিকে, বিজেপি পাবে ১৭ থেকে ৩৫ আসন।

আসন পাওয়ার সম্ভাবনার ভিত্তিতে ছয়টি কেন্দ্রফেরত জরিপের ফলাফল এক নজরে দেখে নেওয়া যাক-

সি-ভোটার : এএপি ৩১-৩৯, বিজেপি ২৭-৩৫, কংগ্রেস ২-৪
এবিপি-নিয়েলসেন : এএপি ৩৯, বিজেপি ২৮, কংগ্রেস ৩
সিসেরা : এএপি ৩৯, বিজেপি ২৬, কংগ্রেস ৩, অন্যান্য ২
নিউজ নেশন : এএপি ৩৯-৪৩, বিজেপি ২৫-২৯, কংগ্রেস ১-৩
ইন্ডিয়া নিউজ : এএপি ৫৩, বিজেপি ১৭, কংগ্রেস ০০
নিউজ২৪-টুডেস’স চাণক্য : এএপি ৪৪, বিজেপি ২২, কংগ্রেস ০০, অন্যান্য ৪

ইন্ডিয়া টুডে: এএপি ৩৮ থেকে ৪৬, বিজেপি ১৯ থেকে ২৭, কংগ্রেস ৩ থেকে ৫ আসন পাবে

সাতটি জরিপের কোনো কোনোটিতে দেখা যায়, এএপি ৪০টির বেশি আসন পাবে। কিন্তু বিজেপির সম্ভাবনা কোনোটিতে এমন নেই। তাই জরিপের ফলাফল যদি ৭০ থেকে ৮০ ভাগও সত্য হয়, তবে এএপির সরকার গঠন করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

এদিকে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কিরণ বেদী জরিপের ফলাফলকে প্রত্যখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, বিকেল ৩টার পরে ভোটারের উপস্থিতি বেশি ছিল। আর ওই জরিপগুলো তার আগেই করা হয়েছে। ফলে জরিপের ফলাফলের সঙ্গে ভোটের ফলাফল মিলবে না।

এই প্রতিষ্ঠানগুলোই গত লোকসভা নির্বাচনের সময় জরিপ করেছিল এবং ভোটের ফলাফলের সঙ্গে জরিপের ফলাফল কিছুটা কম-বেশি হয়েছিল।

নয়াদিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে এবার ৬৭ দশমিক ২১ শতাংশ ভোট পড়েছে। এর আগে কখনো এত বেশি ভোট পড়েনি। ২০১৩ সালের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬৬ শতাংশ। ওই নির্বাচনের পর সরকার গঠন করে এএপি, মুখ্যমন্ত্রী হন কেজরিওয়াল। কিন্তু মাত্র ৪৯ দিন ক্ষমতায় থাকার পর জোট-শরিকের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় সরকার ভেঙে দেন তিনি। এবারের নির্বাচনে হয়তো আর সেটি হবে না। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই সরকার গঠন করতে পারবেন কেজরিওয়াল।

১০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ভোটের ফল ঘোষণা করা হবে। এএপির কেজরিওয়াল নাকি বিজেপির কিরণ বেদী, শেষ হাসি কে হাসতে যাচ্ছেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো তিন দিন।

তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া, জিনিউজ।



মন্তব্য চালু নেই