‘সৌদি গেজেট’ পত্রিকার প্রতিবেদন

উভয় নেত্রীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর যুক্তি প্রযোজ্য

দুটি অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া দেখানো ছাড়া বাংলাদেশে আর কিছুই অগ্রাধিকার পেতে পারে না। একটি রাজনৈতিক দাঙ্গায় একটি বাসে আগুনে বোমা ফেলা হয়েছে। এতে সাত জন মানুষ জীবন্ত দগ্ধ এবং আরো ১৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। আরেকটি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ঢাকার একটি প্লাস্টিক কারখানায় এবং এতে ১৩ জনের মৃত্যু ঘটেছে। বিষাক্ত ধোঁয়া ও গলিত প্লাস্টিক থেকে আরো বিপুলসংখ্যক লোক আহত হয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে হামলার ঘটনায় উস্কানি দানের জন্য সরকার বিরোধীদলীয় নেত্রীকে অভিযুক্ত করেছে। নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে সহিংস দাঙ্গা বাধানোর দায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিএনপি নেতা খালেদা জিয়াকে অভিযুক্ত করেছে। জিয়া ও তার দল গত বছর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে সরকার কারচুপি করবে- এই অভিযোগ এনে বয়কট করেছিলেন।

এই ঘটনা দুই নেতার মধ্যকার দীর্ঘকালীন তিক্ত উপাখ্যানের সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। তাদের মধ্যকার বৈরিতার তল মাপা সাধারণ জ্ঞান দিয়ে অনুভব করা যাবে না। তাদের দেশের উত্তম স্বার্থের নিরীখে বিবেচনা করলেও তাদের বৈরিতা যে কারো বর্ণনা শক্তির সীমা ছাড়িয়ে যাবে। হাসিনা বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে দেন। এই নির্বাচনকালীন সরকার আমলা ও টেকনোক্রাটদের নিয়ে গঠন করা হতো। যারা নির্বাচন অনুষ্ঠানকালে কেবল দৈনন্দিন কার্যাবলী সম্পাদন করতো এবং নির্বাচনের আয়োজন করতো। খালেদা জিয়া তখন প্রতিবাদ করেছিলেন যে, এই ব্যবস্থা বিলোপ করার লক্ষ্য হচ্ছে হাসিনা নির্বাচনে কারচুপি করবেন। আইনি চ্যালেঞ্জ ব্যর্থ হয়েছিল। এর ফল হিসেবে খালেদা জিয়া ও তার দল নির্বাচনে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং হাসিনা ক্ষমতায় থেকে যান।

যখনই ব্যালটবাক্স অপসারণ করা হয়েছে, তখনই সহিংস রাজনৈতিক প্রতিবাদ দারুণভাবে অবধারিত হয়ে ওঠে। হাসিনা যখন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছিলেন তখনই এটা জানতেন। খালেদা জিয়াও এটা জানতেন যখন তিনি নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থেকেছিলেন।

এই দুইয়ের মাঝামাঝি বেছে নেয়ার সুযোগ ছিল খুবই সীমিত। যদি সত্যিই বাসে হত্যাকাণ্ডের জন্য খালেদা জিয়ার কাঠগড়ায় দাঁড়ানো উচিত বলে গণ্য হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর যুক্তি প্রযোজ্য। হতাশাগ্রস্ততা এবং আরো বেশি রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে নাগরিকের ভঙ্গুর অবস্থা নিয়ে খেলা করার চলমান নৈরাশ্যকর চেষ্টা থেকে উভয় রাজনীতিকের বিরত থাকা উচিত।

বিয়োগান্তুক দিক হলো প্রকৃত ইস্যুর দিকে নজরদারি উপেক্ষিত হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দেশটির ভিড় উপচে পড়া বহুতলবিশিষ্ট গার্মেন্ট কারখানাগুলোর নিরাপত্তা। এসব কারখানা কলঙ্কিত অবমাননা হিসেবে বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের জন্য মৃত্যু ও জখম হওয়ার ফাঁদে পরিণত হয়ে আছে।

সর্বশেষ নাসিম প্লাস্টিক হাউসে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডে বিরাট ক্ষয়ক্ষতি ঘটেছে। আগেই যেমনটা বহু কারখানায় ঘটেছে, তেমনি এখানেও অগ্নি নির্বাপনী ব্যবস্থাদি সম্পূর্ণরূপে অপ্রতুল এবং জরুরি নির্গমন ব্যবস্থা অকার্যকর বলেই প্রমাণিত হয়েছে। বহু শ্রমিক আতঙ্কে ছুটোছুটি করে কারখানা থেকে বেরিয়ে প্রাণে বাঁচতে চেয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, ওই কারখানায় এর আগে একটি বারের জন্যও অগ্নিনির্বাপণ সংক্রান্ত কোন মহড়া অনুষ্ঠিত হয়নি। বসদের কাছে এমনকি কোন রেকর্ডও পাওয়া যায়নি যে, যা থেকে ওই কারখানায় কর্মরতদের সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যাবে। এখনও পর্যন্ত এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হয়নি যে, ওই অগ্নিকাণ্ডে কত জনকে হত্যা করা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডই এই ঘটনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত শব্দ। ২০১৩ সালে রানা প্লাজায় ১১শ’ কর্মী জীবন্ত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল। এটাই আমাদের জানা মতে ইতিহাসের বৃহত্তম কর্পোরেট হত্যাকাণ্ড। যেসব কারখানার মালিক খরচ কমানোর জন্য বেপরোয়া, যেসব পরিকল্পনাবিদ দুর্নীতিগ্রস্ত তাদের বিরুদ্ধে ক্রাকডাউন চালাতে সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও আজও বাংলা দেশের বহু সংখ্যক কারখানা মৃত্যু ফাঁদ হয়ে আছে।

কারণ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া ক্ষমতার জন্য অশোভন ঘুষাঘুষিতে লিপ্ত। তাই প্রকৃত ইস্যুগুলো যা জরুরি মনোযোগ দাবি করে তা উপেক্ষিতই থাকছে। বাংলাদেশ তার রাজনীতিকদের কাছ থেকে উত্তম কিছু লাভ করার যোগ্যতা রাখে।

সূত্র: গত ৬ই ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সৌদি আরব থেকে প্রকাশিত ‘সৌদি গেজেট’ পত্রিকায় ‘তিক্ত বৈরিতায় বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দ অন্ধ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সম্পাদকীয়টির হুবহু অনুবাদ।



মন্তব্য চালু নেই