কাজের সময় পাথরে বেঁধে রাখি সন্তানকে

বৈদ্যুতিক তার স্থাপনের জন্য রাস্তা খননের কাজ চলছে। অনেক নারী পুরুষ নিজেদের ঘাম ঝড়িয়ে প্রখর রোদের মধ্যেও বিরামহীনভাবে করে চলেছে সেই খোড়াখুড়ির কাজ। নির্মান শ্রমিকরা বৈদ্যুতিক তার স্থাপনের জন্য রাস্তা খননের কাজ করে যাচ্ছে। এরই মাঝে হঠাৎ চোখ পড়ে রাস্তার ফুটপাতে একটি শিশু পাথরের সঙ্গে বাধা। শিশুটির বয়স প্রায় ১৫ মাস হতে চলছে। চোখ পড়তেই কাছে গিয়ে দেখা গেল একটি পাথরের সঙ্গে শিশুটিকে বেধে রাখা হয়েছে। আর সেই পাথরটিও প্রখর রোদে তেতে উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার শহরটির এই রাস্তাটিতে রোজ শিশুটিকে এভাবে নয় ঘণ্টা বেধে রাখা হয়। কিন্তু কেন কারণ জানতে চাইলে পাশ থেকে একজন নারী কাজ থামিয়ে এগিয়ে আসে। সে আর কেউ নয় শিশুটির মা সারতা কারালা।

তার কাছে জানতে চাওয়া হলে কেন সে শিশুটিকে এভাবে উত্তপ্ত একটি পাথরের সঙ্গে বেধে রেখেছেন। জবাবে তিনি বললেন, ‘এটা করা ছাড়া তার আছে আর কোন উপায় নেই। আমার দুটি সন্তান একজন সাড়ে তিন বছর আর অপর জন ১৫ মাস। বড়জন নিজের খেয়াল রাখতে পারে এবং বুঝতে পারে কিন্তু ছোট জন সবে মাত্র হাঁটতে শিখেছে। কাজের সময় তাকে বারবার খেয়াল করে রাখতে হয়। তাই সে যেন কোথাও না যেতে পারে তাই তাকে পাথরের সঙ্গে বেধে রাখি।’

সারতা এবং তার স্বামী দুজনই নয় ঘণ্টা করে রাস্তা খননের কাজ করে। তাই কারো পক্ষেই সম্ভব হয় না বাচ্চা দুটির খেয়াল রাখা। কাজে এসেই তারা ছোট বাচ্চাটিকে পাথরের সঙ্গে বেধে কাজ শুরু করে। সারতা আরো বলেন, ‘সকালে রাস্তায় যানবাহন কম থাকলেও বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহন বাড়তে থাকে। তাই সুরক্ষার জন্যই আমাকে রোজ তাকে এভাবে বেধে রাখতে হয়। দুজনের আয় ছাড়া আমাদের সংসার চলে না। তাই আমার ঘরে বসে সন্তানদের যত্ন করা সম্ভব হয় না।’ এদিকে রোজ এভাবে উত্তপ্ত পাথরের মধ্যে শিশুটিকে বাধার ফলে তার পিঠে গরমে লাল হয়ে যায়। যা একটি শিশুর পক্ষে সহ্য করা কখনোই সম্ভব নয়।

এতো গেল একজন হতভাগা মায়ের কথা। ভারতে এমন ৪০ মিলিয়ন নির্মান শ্রমিক আছে যারা সামান্য মজুরির জন্য দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তাদের সবারই আছে সন্তান সন্ততি ও পরিবার। সেভ দ্য চিল্ড্রেন অব ইন্ডিয়ার কর্ণধার পারবত ঝা এ বিষয়ে বলেন, ‘শিশু সুরক্ষার জন্য অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আর এটা একমাত্র দায়িত্ব সরকারের এবং নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর। তাদের উচিত যেসব মায়েরা তাদের ছোট সন্তানটি নিয়ে কাজে আসে তাদের নিরাপদ জায়গা করে দেয়া। যাতে করে মা সন্তানটিকে রেখে কাজ করতে পারে। এতে করে সন্তানদের কোন ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে না।’

2016_05_19_12_51_46_YcwzjomZFjG6iA8UohFHhjdBg2fWH6_original

তবে সরকারেরই যেখানে নেই কোন দৃষ্টি সেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন চোখ থেকেও অন্ধ। এসব কিছু তারা কোনভাবেই আমলে নেয় না। কাজ করতে এসে নির্মান শ্রমিকদের অনেকেরই সন্তান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু এব্যপারে কোন উদ্যোগ নেয়ার কথা বলে সাইট ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বললে তারা সন্তান নিয়ে কাজে না আসতে সাফ মানা করে দেয়। আর যেসব নারীদের সন্তান ছোট অনেকক্ষেত্রেই তাদের কাজ দেয়া হয় না বলেও জানা যায়। আর এজন্য অনেকে আবার সন্তানকে গ্রামে দাদা-দাদি বা আত্মীয়ের কাছে রেখে আসে। বয়স সাত কিংবা আট বছর হলেই তবে প্রিয় সন্তানটিকে গ্রাম থেকে এনে নিজের কাছে রাখতে পারে। এরপরও একটি কথা থেকে যায় যে, যারা দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিভিন্ন বহুতল ভবন গড়ে তুলতে সাহায্য করে তাদের আর্তনাদ কতটুকুইবা শুনতে পায় ভবনে থাকা মানুষেরা।



মন্তব্য চালু নেই