ওবামা, একটা রাত গাজার হাসপাতালে কাটিয়ে যাও
প্রিয় ওবামা,
তোমার কি হৃদয় বলে কিছু আছে? আমি জানি না আছে কিনা! যদি থাকে, আমি তোমাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, তুমি একটা রাত- শুধু একটা রাত- আমাদের সঙ্গে এই শিফা হাসপাতালে কাটিয়ে যাও। একবার আসো ওবামা! অন্তত কোনো পরিচ্ছন্নকর্মীর ছদ্মবেশে হলেও হাসপাতালের ভেতরটা একটু দেখে যাও।
একবার যদি তুমি এই যন্ত্রণাক্লিষ্ট মানুষদের দেখ, অসহায় নারী-শিশুর মুখের দিকে তাকাও, আমি নিশ্চিত! শতভাগ নিশ্চিত- ইতিহাস বদলে যাবে, পৃথিবী পাল্টে যাবে। যার ভেতরে হৃদয় আছে আর পৃথিবী বদলে দেয়ার ক্ষমতা আছে, সে শিফা হাসপাতালে রাত কাটানোর পর কখনোই ভালো থাকতে পারে না। ফিলিস্তিনি জনগণের গণহত্যা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ছাড়া সে স্বস্তিতে থাকতে পারে না। এই দুদর্শা লাঘব না হলে সে কখনোই ভালো থাকতে পারে না।
কিন্তু হৃদয়হীন, মনুষত্বহীন নেকড়েরা গাজায় আরও, আরও হত্যার আয়োজন করছে, চোখে নতুন দখলদারিত্বের লালসা।
আমি জানি, সামনের রাতগুলোতেও রক্তের সে াত বইবে। দূর কোনো গ্রামে বেজে উঠবে মৃত্যুবাঁশির সুর- আমি শুনতে পাব। ট্যাংক কামানের বীভৎস উল্লাস আমার কানের পর্দায় আঘাত করবে।
ওবামা, দোহাই তোমার, কিছু একটা করো! তুমি চাইলেই পারবে। এই অবস্থা চলতে পারে না, কখনোই না…
তুমি জানো ওবামা? আমি যখন একা একা হাসপাতালের বেডে শুয়ে তোমাকে এই চিঠি লিখছি, আমার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। সেই আশ্র“তে গড়িয়ে পড়ছে দুঃখ-বেদনা-ক্ষোভ-ভয়। কিন্তু চোখের এই গরম পানির কোনো মূল্য নেই। এত অশ্র“ সত্ত্বেও এগুলো কি ঘটছে না!
একটু পরে, হ্যাঁ এখনই ইসরাইলের যুদ্ধবাদ্যে বিভীষিকার তরঙ্গ উঠবে। আবার এখনই শুরু হবে মৃত্যুর গান। উপকূলের নৌবহরে শুরু হবে গোলাবারুদের আড্ডা। জমে উঠবে তোপধ্বনির পার্টি। ইসরাইলের যুদ্ধব্যান্ড আগ্রাসী গর্জনে হাঁকডাক ছাড়বে এফ-১৬। আরও আছে ড্রোন, অ্যাপাচি। এসবের জন্মদাতা কে? তোমার দেশ- যুক্তরাষ্ট্র।
গত রাত ছিল আরও ভয়ংকর। ইসরাইলের স্থল আক্রমণে গাজায় গাড়ি ভর্তি, ঘর ভর্তি, রাস্তা ভর্তি মানুষের আর্তনাদ আহাজারি। এখানে-ওখানে লাশ, টুকরো টুকরো দেহ, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন মাথা, রক্ত আর রক্ত- সবাই ফিলিস্তিনি। নির্দোষ নারী-পুরুষ, শিশু-বুড়ো, সব ধরনের মানুষ- সবাই বেসামরিক। তবু মানুষরা, নায়করা- মানুষের সেবার ছোটাছুটি আর ছোটাছুটি। করছে তো করছে। বিরাম নেই, ক্লান্তি নেই। হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা অমানবিক কাজের চাপ (গত চার মাস তাদের কোনো বেতন দেয়া হচ্ছে না)- তারা সেবা করছে, চিকিৎসা দিচ্ছে। কত ক্ষতবিক্ষত ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন দেহ, কেউ হাঁটতে পারছে, কেউ পারছে না; কেউ দেখতে পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না; কেউ শ্বাস নিচ্ছে, কেউ নিচ্ছে না… আহারে মানুষ! আহারে…!
(ফিলিস্তিনি ক্রোনিক্যালে প্রকাশিত ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল অব নরওয়ের ক্লিনিক অব ইমারজেন্সি মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ম্যাডস গিলবার্টের খোলা চিঠি।
আর্তমানবতার ডাকে যুদ্ধপীড়ত গাজার মানুষের সেবা প্রদানে ছুটে এসেছেন গিলবার্ট। বর্তমানে তিনি গাজার আল শিফা হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবক চিকিৎসক হিসেবে নিয়োজিত)
ম্যাডস গিলবার্ট, গাজা, ফিলিস্তিন
মন্তব্য চালু নেই