প্রাকৃতিক ভূস্বর্গ ভারতের কাশ্মির : পর্ব-৩
এশিয়ার বৃহত্তম শ্রীনগর জামে মসজিদ, ঐতিহাসিক নিদর্শন হযরত বাল দরগাহ শরিফ মসজিদ
ভারত শাসিত কাশ্মিরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগর শহরের প্রাণকেন্দ্র ‘ডাল লেকে’র পাশেই মূলত বুলভার্ড এলাকাতেই টুরিস্টদের জন্য বড়বড় আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট গুলো রয়েছে। পাশের এলাকাতে রয়েছে বেশ কয়েকটি বাঙালী হোটেলও। খাওয়ার এসকল রেস্টুরেন্ট গুলোকে স্থানীয়রা সাধারণত ‘ধাবা’ বলে থাকে। ‘ধাবা’ কথাটির অর্থ খাওয়া দাওয়া করার স্থান।
শহরের ডাউন টাউন এলাকায় রয়েছে এশিয়ার সবচেয়ে বড় জামে মসজিদ ‘শ্রীনগর জামে মসজিদ’। স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড আবু জাফর জানালেন, এটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় জামে মসজিদ। এ মসজিদে স্বাভাবিক অবস্থায় মুসল্লী ধারণ ক্ষমতা ‘একসাথে’ ১লাখ লোকের। আর শবে কদর, জুম্মাতুল বিদাসহ অন্যান্য বিশেষ দিনে এ মসজিদের অভ্যন্তর চত্ত্বর ও পাশ্ববর্তী স্থানে একসাথে দুই লক্ষাধিক মুসল্লী ‘একসাথে’ নামাজ আদায় করতে পারেন। ১লাখ ৪৬ হাজার বর্গফুটের এ মসজিদটি ফাদার অব সুলতান বাদশাহ জায়নুল অবেদিন, সুলতান সিকান্দার শাহ কাশ্মিরি শাহমিরি (রাঃ) ১৩৯৪ (এ.ডি) সালে তৈরি করেন। মসজিদটিতে ৩৭৮টি সম্পূর্ণ গাছের ন্যায় কাঠের পিলার রয়েছে। যার মধ্যে ২১ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট পিলার ৩৪৬টি ও ৪৮ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট পিলার রয়েছে ৩২টি। একতলা বিশিষ্ট চারদিক দিয়ে মসজিদটির ঠিক ভিতরের মাঝখানে ফাকা আকাশে নিচে ফুল বাগানের চত্বর, ওজুর জন্য স্থান ও সবুজের সমারোহ। মসজিদের ভিতরে জায়গা না হলে এ স্থানেও নামাজ আদায় করেন মুসল্লীরা। হাজার হাজার কবুতর ওই ফাঁকা জায়গা ও মসজিদের টিনের ছাদে এবং ভিতরে অবস্থান করতে দেখা যায়।
স্থানীয় তথ্য মতে, ফার্স্ট ফ্যামিলির ওমর ফারুক বর্তমানে শ্রীনগর জামে মসজিদে ইমামতি করেন। বংশ পরম্পরায় ফার্স্ট ফ্যামেলির পুরুষেরা এখানে ইমামতি করে থাকেন।
শ্রীনগরে রয়েছে মখদুম শাহর দরবার। পাশেই কেল্লা হরি পর্বতে রয়েছে প্রাচীন রাজাদের দূর্গ। রাজা গোলাপ শিং, রাম শিং-এর সৈন্যরা ওই দূর্গে অবস্থান করে শহর নজরদারিতে রাখতো। ওই দূর্গকে সুরক্ষিত রাখতে এখনো বিদ্যমান রয়েছে কেল্লা হরি পর্বতের পাদদেশ এলাকায় বড় বড় প্রাচীর ও গেট।
শহরের মধ্যেই ঐতিহাসিক ও দৃষ্টিনন্দন মুঘল গার্ডেন, শালিমার গার্ডেন, নিশাতবাগের নিশাত গার্ডেন, চিশমা শাহী পার্ক, নেহেরু পার্ক, মোঘল পার্ক ইত্যাদি। ১৬৩২ সালে মোঘল সম্রাট শাহজাহান ‘চিশমা শাহী’ পার্ক গড়ে তোলেন। আলী মর্দনের তত্ত্বাবধায়নে গড়ে উঠা ওই চিশমা শাহীতে পাহাড় বা মাটি থেকে অনবরত পানি বের হয়। সেখান থেকে দর্শনার্থীদের পানি পান ও নেয়ার প্রচলন রয়েছে। ওই পানিকে স্থানীয়রা ‘সুপ্রিংক’ বলে থাকে। অনেককে ১০রূপি টিকিট কেটে বড় বড় ড্রামে করে ওই পানি নিতে দেখা গেছে। ওই পানিকে স্থানীয়রা হজম শক্তির কার্যকর পানীয় ও শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের নিয়ামক মনে করেন। সমস্ত শ্রীনগর ও পাশের এলাকা জুড়ে পাহাড় থেকে অত্যন্ত ঠান্ডা পানি বের হতে দেখা যায়। আর ওই পানি এতোটাই পরিষ্কার, ঠান্ডা ও স্বাস্থ্যকর যে তা পান করলে যেন প্রাণ জুড়ে যায়।
চিশমাশাহী গার্ডেনের পাশের পাহাড়ে ‘পারি মহল’ নামের ঐতিহাসিক স্থাপনাটি রয়েছে। সম্রাট শাহজাহানের পুত্র দারা শিখোর তত্ত্বাবধায়নে এ্যাসট্রোলজির একটি স্কুল এখানে স্থাপিত হয় বলে জানা গেলো।
‘নিশাতবাগ’র ব্লিস গার্ডেনটি ১৬৩৩ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীরে স্ত্রী নূর জাহানের ভাই আসাফ খান তৈরী করেন। জাবারওয়ান পাহাড়ের পিছনের এই গার্ডেনটি বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে শ্রীনগরের সবচেয়ে বড় গার্ডেন।
‘শালিমারবাগ’ সম্রাট জাহাঙ্গীর তার প্রিয়তমা স্ত্রী নূর জাহানের জন্য গড়ে তুলেছিলেন। ফুলের বাগান, পানির স্রোতধারার ক্যানেলসহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন পার্কটি।
এছাড়া রয়েছে ‘নেহেরু বোটানিক্যাল গার্ডেন’, পাশেই রয়েছে ‘রাজভবন’ যেখানে রাজ্যপাল থাকেন।
বৃহৎ এলাকা জুড়ে অতিশয় সুন্দর ‘কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয়’ ক্যাম্পাস দেখলে সেখানে কিছু সময় অবস্থান না করলে যেন ভুল হবে।
পাশের এলাকাতেই রয়েছে দরগাহ শরীফ ‘হযরত বাল মসজিদ’। ডাল লেকের কূলে অবস্থিত পুলিশ প্রোটেকশনে থাকা ওই হযরত বাল দরগাহ শরীফ মসজিদে রয়েছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)’র কিছু ‘চুল’, ‘মাই মুকাদ্দাস’, হযরত আলী (আঃ)’র ‘পাগড়ি’, তার ঘোড়া জুলফিকারের ‘পায়ের নাল’ ও ৫/৭ফুট বিস্তৃতির বৃহতাকৃতির ‘কোরআন শরীফ’।
হযরত বাল মসজিদে কোরআন শরীফটি জনসম্মূখে রাখা থাকলেও বাকিগুলো দেখার সৌভাগ্য হয়নি। এই দরগাহ শরীফের কারণেই কাশ্মির টিকে আছে ও ভালো থাকে বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস।
চলবে… ৬টি পর্ব…
লেখক:
আরিফ মাহমুদ
সম্পাদক
আওয়ার নিউজ বিডি ডটকম
মন্তব্য চালু নেই