ইসরায়েল ইতিহাসের অপবিত্র অধ্যায় : ইরান

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, ধৈর্যশীল ও সংগ্রামী ফিলিস্তিনিরা মানবজাতির ইতিহাসের সবচেয়ে মজলুম জাতিতে পরিণত হয়েছে। তাদের অশেষ দুঃখ-দুর্দশা প্রত্যেক মুক্তিকামী, সত্যান্বেষী ও ন্যায়বিচারকামী মানুষকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। ইসরায়েলকে ইতিহাসের অপবিত্র অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এর অবসান ঘটবে।

মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ইরানের তেহরানে ‘ফিলিস্তিনের ইন্তিফাদা বা গণ-সংগ্রামের প্রতি সমর্থন’ শীর্ষক ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন।

ইরানের এ সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, ফিলিস্তিনে সারা বিশ্ব থেকে কিছু লোককে এনে জবরদখলের মাধ্যমে একটি অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সেখানকার স্থানীয় জাতিকে পুরোপুরি বিতাড়িত করার আন্তর্জাতিক চক্রান্তটি ইতিহাসের অন্যতম অপবিত্র অধ্যায়। এর অবসান ঘটবে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ও তাঁর সহায়তায়। কারণ, অতীতেও মহান আল্লাহর ইচ্ছায় ও সহায়তায় অবসান ঘটেছে এ জাতীয় অপবিত্র অধ্যায়ের।

তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর নৃশংস দমন-অভিযান, বন্দি করে হত্যাযজ্ঞ, লুণ্ঠন করছে ইসরায়েল। ভূখণ্ডগুলো জবর-দখল করে সেখানে অবৈধ উপশহর নির্মাণ, পবিত্র শহর কুদস ও মসজিদুল আকসাসহ ইসলামের এবং খ্রিস্ট ধর্মের নানা পবিত্র স্থানের পরিচিতি বদলে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। নানা অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠী। আর এইসব অপরাধ ঘটছে মার্কিন ও কয়েকটি পশ্চিমা সরকারের সর্বাত্মক মদদে এবং দুঃখজনকভাবে বিশ্ব এসব অপরাধের ব্যাপারে উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না।

আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী আরো বলেছেন, তেহরানের এই সম্মেলন সবচেয়ে কঠিন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কারণ আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মোকাবেলায় লড়াইরত ফিলিস্তিনি জাতির সব সময়ের সাহায্যদাতা আমাদের এই অঞ্চল এখন নানা সংকট ও অশান্তির শিকার হয়েছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এ প্রসঙ্গে আরো বলেছেন, কয়েকটি মুসলিম দেশের চলমান সংকটের কারণে ফিলিস্তিন ও পবিত্র কুদসকে মুক্ত করার সংগ্রামের প্রতি সমর্থন ম্লান হয়ে পড়েছে। এইসব সংকটের ফলে লাভবান হচ্ছে সেইসব শক্তি যারা এ অঞ্চলে ইসরাইলকে জন্ম দিয়েছে। এই সংকটকে দীর্ঘকাল ধরে জিইয়ে রেখে এ অঞ্চলের শান্তি ও অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে তারা বলে তিনি মন্তব্য করেন।

মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে স্বাভাবিক কিছু মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও ফিলিস্তিন প্রসঙ্গটি মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত। মুসলিম বিশ্ব ছাড়াও ন্যায়বিচারকামী ও সত্যান্বেষী সব মহলের পক্ষ থেকেই ফিলিস্তিন ইস্যুকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মঙ্গলবার তেহরানে ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদাকে সমর্থন দেয়া বিষয়ক ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়। দুই দিনের এই সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ইরানের জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. আলী লারিজানি। ইসলামী ইরানের সংবিধানে বিশ্বের মজলুম ও বঞ্চিত জাতিগুলোকে সহায়তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে বলে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।

এবারের সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অন্তত ৮০টি প্রতিনিধিদল অংশ নিয়েছে। সব মিলিয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানানোর জন্য তেহরান সম্মেলনে ৭০০ বিদেশি অতিথি উপস্থিত হন। সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন ফিলিস্তিনপন্থি বহু সংগঠনের প্রতিনিধি।



মন্তব্য চালু নেই