আরব জাহানে মাওলিদ উৎসব

২০১৩ সালের শেষের দিকে। কিছুদিন আগেই মোসায়েব এলশামি একটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থায় যোগ দিয়েছেন। চাকরিতে যোগ দেয়ার আগে নিজের দাদিকে নিয়ে পুরাতন কায়রোর আল হুসেইন মসজিদে যান মোসায়েব। মহানবী মোহাম্মদ (সা:) এর নাতি হুসেইনের মাজারে ঢোকার পর অনেক ক্রন্দনরত মানুষকে দেখতে পায় মোসায়েব। আবার কেউ কেউ মাজারের এক কোনো বসে নীরবে কোরান পাঠ করছিল। মোসায়েবের জন্য এই দৃশ্য অপরিচিত না হলেও হাতে ক্যামেরা নিয়ে এই দৃশ্য অবলোকন করা তার জন্য সহজ ছিল না। কারণ মিসরে তখনও অসন্তোষ আর দাঙ্গা অব্যাহত ছিল বর্তমানের মতো। তাই সেসময় মোসায়েব এমন কিছু ছবি তুলতে চাচ্ছিল যাতে কায়রোর রাস্তার বিদ্রোহের উত্তাপ থেকে কিছুটা দূরের জনজীবন দেখানো যায়।
SUFI-11অবশ্য এই চেষ্টা যে মোসায়েব হুট করে শুরু করেছেন বিষয়টা তা নয়। দীর্ঘ এক বছর ধরে তিনি ‘মাওলিদ’ বা ‘ধর্মীয় উৎসব’কে কেন্দ্র করে বিপ্লব মধ্যবর্তী মিসরের ধর্মীয় অনুভূতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করেন। মাওলিদগুলোতে মিসরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক সুফী দরবেশ এসে জমায়েত হয় এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দিনরাত আলোচনা চলে তাদের মধ্যে। মিসরের ৯০ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মানুষ ইসলামের সুফী দর্শনে বিশ্বাস করে। এই দর্শনে বিশ্বাসীরা বিভিন্ন মাজারে যাতায়াত করে এবং নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। পাশাপাশি এখানে কেউ আসেন সন্তান লাভের আশায়, আবার কেউ আসেন ভালো চাকরি পাওয়ার আশায়। অবশ্য অনেকেই এই ধর্মীয় দর্শনকে শিরক বলে থাকেন, তাদের মতে ইসলামে এই দর্শনের কোনো স্থান নেই।
SUFI-9এই মাজারগুলোর অবস্থান আর দশটা দর্শনীয় স্থানের মতো শহরের কাছাকাছি বা গ্রামাঞ্চলে নয়। শহর থেকে অনেকদূরে কোনো পাহাড়ের চূড়ায় কিংবা দুর্গম কোনো স্থানে একেকটি মাজারের অবস্থান। মিসরের সর্বশেষ স্থাপিত মাজারের নাম রাখা হয়েছে আবুল হাসান আল শাহজলি’র নামে। এই বিজ্ঞ মানুষটিকে যেখানে কবর দেয়া হয়েছে সেই কবরকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে মাজার ও মসজিদ। প্রতিবছর তাকে সম্মান জানাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ হাজির হয় এখানে। শুধু মিসর থেকেই নয় আবর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই এই মাজারে আসেন বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়। সূর্য ডুবে যাওয়ার ঠিক আগে প্রার্থনা আর গানে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরো মাজার প্রাঙ্গন। এরপর গোটা রাত জুরে চলে নানান সুফী গান আর দরবেশদের বাহাস।
SUFI-8মোসায়েবের জন্য এই উৎসবগুলোর ছবি তোলা অতটা সহজ ছিল না। প্রথম মাজারগুলোর ভেতরে ছবি তুলতে প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়েছে তাকে, দ্বিতীয়ত সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অনুমতি পেতেও অনেক সময় ব্যয় হয়েছে তার। হাতে গোনা কয়েকটি মাজারকে কেন্দ্র করে ছবি তুলতে তাই প্রায় এক বছর সময় লেগে যায় মোসায়েবের। তার ভাষায় বলতে গেলে, ‘বিপ্লব শুরু হয়ে যাওয়ার প্রাক্কালেই আমার সহকর্মীরা মিসর ছেড়ে চলে যায়। তাদের ছবি তুলতে বাধা দেয়া হয় এবং কোথাও ক্যামেরাও নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আমি মনে করি প্রত্যেকেরই নিজস্ব স্বাধীনতা বোধ রয়েছে। প্রতিবাদ সমাবেশে ছবি তোলা যতটা সহজ হয়ে গেছে ঠিক ততটাই কঠিন হয়ে গেছে দেশের ভেতরে ছবি তোলা।’
SUFI-2 SUFI-4 SUFI-6 SUFI-7



মন্তব্য চালু নেই