আইএসকে হটাতে পারবেন ট্রাম্প?

আইএসকে হটাতে পারবেন ট্রাম্প?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জারি করা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ইসলামিক স্টেটের মতো চরমপন্থী সংগঠনের সন্ত্রাসী হামলার হাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে কতোটা রক্ষা করা সম্ভব তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, ইসলামপন্থী জঙ্গিদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে রাখতেই নির্বাহী আদেশে বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের লোকজনের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ওপর তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। খবর বিবিসির।

সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত সপ্তাহে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তাতে ওই মুসলিম দেশগুলো ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রেই ক্ষোভ এবং উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ চলছে।

প্রেসিডেন্টের এই আদেশের ফলে ঠিক কতোজন সম্ভাব্য সন্ত্রাসীকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে রাখা সম্ভব হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ চরমপন্থী ও তাদের সমর্থকদের জন্যে বড় ধরনের একটি উপহার হিসেবে ইতিহাসে লেখা থাকবে।

যে সাতটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তার মধ্যে ইরানের নামও রয়েছে। প্রতিবেশী ইরাকে ইসলামিক স্টেটকে দমন করতে ইরান তাদেরকে সহযোগিতা করছে।

জারিফ বলেন, ‘এর ফলে আরো সন্ত্রাসীর জন্ম হওয়ার পরিবেশ তৈরি হলো।’

জনসংখ্যার হিসেবে সবচেয়ে বড়ো মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আদেশের নিন্দা করেছেন।

তার মতে, ‘আমরা বিশ্বাস করি এর ফলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের লড়াই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদকে একটি বিশেষ ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেখা ভ্রান্ত ধারণা।’

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ব্রিটেনও এই আদেশের সমালোচনা করেছে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘এই আদেশ বিভেদ সৃষ্টিকারী, বৈষম্যমূলক এবং ভুল।’

আইএসের মতো চরমপন্থী সংগঠনকে দমন করতে ইরান ও ইরাকের মতো যেসব দেশের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সহযোগিতার প্রয়োজন তার ওপরেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

খোদ ইরাকও এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এই দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর জন্যে সন্ত্রাস দমনে বড়ো ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আদেশের জবাব দিতে ইরাকও খুব বেশি দেরি করেনি। তারাও একইভাবে মার্কিন পর্যটকদের ওপর একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে এর প্রতিশোধ নিয়েছে।

ট্রাম্পের এমন আদেশের ফলে মানুষের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে যে মার্কিন সরকার মুসলিমবিরোধী। মধ্যপ্রাচ্যের লোকজনের মধ্যে এই ধারণা খুবই তীব্র। এর ফলে ইসলামিক স্টেট এবং অন্যান্য চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াইটাও কঠিন হয়ে পড়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ফলে যে হৈচৈ আর বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে তার পেছনের যুক্তি হচ্ছে কয়েকজন মানুষের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্যে সব মুসলিমকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করা যায় না।

আল কায়েদা, ইসলামিক স্টেট এবং আল-শাবাবের মতো সংগঠন এবং তাদের সহযোগী সংগঠনের চরমপন্থীরাই ধর্মের নামে সহিংস জিহাদ পরিচালনা করছে। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই চরমপন্থীরা চেষ্টা করছে মুসলমানদেরকে অমুসলিমদের কাছে থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে।



মন্তব্য চালু নেই