আঃ থামুন! মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করে ধমক খেলেন শিল্পপতিরা

জেলার শিল্পপতিদের অভাব-অভিযোগ মেটাতে কোর কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করে দিলেন। জানালেন, নিজেও মাঝেমধ্যে হাজির থাকবেন কমিটির বৈঠকে। কিন্তু যেখানে এই ঘোষণা, সেখানেই ছোট-মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের কথা দু’মিনিটও মন দিয়ে শুনলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!

বৃহস্পতিবার আসানসোলের পোলো মাঠে শিল্প-বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর বণিকসভার আমন্ত্রণে চা-চক্র। জেলার শিল্পোদ্যোগীরা আশা করেছিলেন এই সুযোগে নিজেদের অভাব-অভিযোগের কথা তুলে ধরবেন প্রশাসনের শীর্ষকর্তার সামনে। শাসক দলের মদতে পুষ্ট সিন্ডিকেট-রাজ থেকে রাজ্য সরকারের ইনস্পেক্টরদের বাড়াবাড়ি— এমন হাজারো সমস্যার প্রতিবিধান চাইবেন। কিন্তু তাঁদের কথা বলতেই দিলেন না মুখ্যমন্ত্রী। থামিয়ে দিলেন মাঝপথে। আধ ঘণ্টার চা-চক্র সেরে মুখ্যমন্ত্রী ফিরে যাওয়ার পরে যা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন বহু শিল্পোদ্যোগী।

সব কথা আমাকে কেন!

শিল্পোদ্যোগীরা তাঁদের সমস্যার কথা বলবেন আঁচ পেয়েই মমতা জানিয়ে দেন, অন্ডালে তাঁর হেলিকপ্টার দাঁড়িয়ে রয়েছে। সন্ধ্যা হয়ে গেলে তা উড়বে না। ফলে খুব বেশি জনের কথা শুনতে পারবেন না। সংক্ষেপে দু’এক জনের বক্তব্য শুনেই বেরিয়ে যাবেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেই দু’এক জনের কথাতেও মন দিলেন না তিনি।

এক শিল্পোদ্যোগী বলতে শুরু করেছিলেন— “আমার কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ না পাওয়ায়…।”

থামিয়ে দিয়ে মমতা বলে ওঠেন, “অমিত মিত্রের সঙ্গে কথা বলুন।”

—হ্যাঁ, বলেছি। কিন্তু…

—আঃ, বলছি তো তাঁর সঙ্গে কথা বলতে।

অন্য এক জন বলেন, “রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার তুলনায় ডিভিসি প্রায় অর্ধেক দামে বিদ্যুৎ দেবে। কিন্তু তার জন্য সরকারের নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট চাই। দু’বছর ধরে তা চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।”

—জেলাশাসককে বলুন।

আর এক শিল্পোদ্যোগী বলেন, “সেল্স ট্যাক্স বাবদ সরকারকে দেওয়া টাকার একটা অংশ প্রতি বছর ফেরত পাওয়ার কথা। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সেটা পাওয়া যাচ্ছে না…।”

—শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন।

বণিকসভার এক সদস্য বলেন, “কারখানা গড়তে জমির চরিত্র বদল করার জন্য অনেকেই আবেদন করেছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে ঢিমে তালে। যদি তাড়াতাড়ি করা যায়…”

—এই হচ্ছে মুশকিল! আপনারা সব কিছু আমাকে বলেন কেন? জেলাশাসককে গিয়ে বলবেন।

আমি কি রক্ষাকর্তা!

“আমার জমি মাফিয়ারা দখল করে নিয়েছে,” মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নালিশ করেন বরাকরের এক ব্যবসায়ী। মমতার জবাব, “আপনার জমি আপনি রক্ষা করবেন না তো কি আমি রক্ষা করব? জমি ফাঁকা ফেলে রেখেছেন কেন?”

বিস্মিত শিল্প মহলের প্রশ্ন, জমি-সম্পত্তি বেদখল হয়ে যাওয়া যদি সরকার না-আটকায়, তো আটকাবে কে? খোদ মুখ্যমন্ত্রীর এহেন মন্তব্যের পরে দুষ্কৃতীরা আরও উৎসাহ পেয়ে যাবে বলেও তাদের আশঙ্কা।

 



মন্তব্য চালু নেই