অভিশংসিত হতে পারেন সৌদি বাদশাহ!

দ্বিতীয় অভিশংসনের প্রস্তুতি চলছে সৌদি আরবে। দেশটির রাজ পরিবারের এক সদস্যের বরাত দিয়ে দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ বিন সৌদের জীবিত ১২ ছেলের আটজনই এ অভিশংসনে ইন্ধন যোগাচ্ছেন। তাদের উদ্দেশ্য ৭৯ বছর বয়সী বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজকে সরিয়ে আহমেদ বিন আবদুল আজিজকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সৌদি রাজপুত্র আরও দাবি করেছেন, দেশটির আলেমদের একটি বড় অংশ এ রাজবিদ্রোহে সমর্থন জানিয়েছেন।

সৌদি আরবে আলেমরা শুধু ধর্মসংক্রান্ত বিষয়ে মত প্রকাশ করে থাকলেও সিংহাসনে যেকোনো পরিবর্তনে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এর আগে ১৯৬৪ সালে আলেমদের অনুরোধে দেশটির দ্বিতীয় বাদশাহ সৌদ বিন আবদুল আজিজ তার বৈমাত্রেয় ভাই ফয়সাল বিন আবদুল আজিজের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য হয়েছিলেন। ওটাই ছিল ১৯৩২ সালে সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পর একমাত্র অভিসংশন।

ওই রাজপুত্রের দাবি, এবারও এমন কিছু ঘটতে চলেছে।

তিনি বলেন, সাবেক বাদশাহ সউদের মতো বর্তমান বাদশাহও দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন। এমনটি করলে সৌদি আরব ও অন্যান্য দেশে তিনি ব্যাপক সম্মানিত হবেন। অথবা তিনি ৭৩ বছর বয়সী প্রিন্স আহমেদকে যুবরাজ মনোনীত করবেন। তবে সেক্ষেত্রে আহমেদেই অর্থনীতি, তেলসম্পদ, সামরিক বাহিনী, ন্যাশনাল গার্ড, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থাসহ পুরো দেশের হর্তাকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন।

বাদশাহ সালমান ও সাবেক বাদশাহ ফাহাদের সহোদর প্রিন্স আহমেদ সুদাইরি সেভেন বলে খ্যাত আবদুল আজিজ ও সবার্ধিক প্রিয় স্ত্রী হাসসা বিনতে আহমেদ আল সুদাইরির সাত পুত্রের মধ্যে কনিষ্ঠতম। তিনি ৩৭ বছর উপ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এবং চার বছর মক্কার পবিত্র স্থানগুলো দেখভালের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১২ সালে তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তবে তিনি পাঁচ মাস পরে স্বেচ্ছায় এ দায়িত্ব ছেড়ে দেন।

ভিন্নমতালম্বী রাজপুত্রের দাবি, রাজনৈতিক বন্দীদের চিকিৎসা সুবিধা নিয়ে মতবিরোধের জের ধরে তিনি সরে দাঁড়ান।

তিনি বলেন, প্রিন্স আহমেদ মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিচারব্যবস্থার পুনর্গঠন ও রাজনৈতিক বন্দীদের মু্ক্ত করে দেয়ার মতো সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করার পক্ষে। মত প্রকাশ ও আধুনিক ইসলামের পক্ষ নেয়ার অপরাধে ২০০১ সালের পর থেকে অনেকেই রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে কারারুদ্ধ আছেন। আহমেদ সুযোগ পেলে তাদের সবাইকে মুক্ত করে দেবেন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তরধারী প্রিন্স আহমেদ দেশটির ওলামা ও রাজপরিবারে বেশ জনপ্রিয়। জুয়া, নারী, মদ ও মাদক নিয়ে কোনো বির্তক না থাকা এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার কারণে তার বড় ভাইয়েরাও তাকে পছন্দ করেন।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারিতে অভিষিক্ত বাদশাহ সালমানের সিংহাসনে আরোহণ নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক আছে। তিনি স্মৃতিভ্রষ্ট রোগে আক্রান্ত বলে গুজব রয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক হজ দুর্ঘটনা ও ইয়েমেনে যুদ্ধে জড়িয়ে তিনি যথেষ্ট বিরোধিতার মুখে পড়েছেন। গত সপ্তাহে আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিল এ বলে সতর্ক করেছে যে, ব্যয় না কমালে জ্বালানি তেলের দরপতন ও আঞ্চলিক যুদ্ধের কারণে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সৌদি আরব আর্থিক সম্পত্তিশূন্য দেশে পরিণত হতে পারে।

বর্তমান বাদশাহর আরেকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হলো তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নিয়োগ দেয়া। অভিযোগ রয়েছে, বাদশাহ সালমানের অক্ষমতার সুযোগে তার ছেলেই সৌদি আরব নিয়ন্ত্রণ করছেন। বর্তমান যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফও অতটা জনপ্রিয় নন।



মন্তব্য চালু নেই