অবাক করা আট সাঁকো
পথিকের হেটে চলার মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় পথের। হাজারো বাধা বিপত্তি পেরিয়ে তৈরি করে নিতে হয় পথ। আর সেই পথ যে সব সময়ই সরল তা কিন্তু নয়। অনেক বাধা বিপত্তি এসে পথিকের পায়ে ঠেকে। আর তখনই পথিককে শিখতে হয় বাধা জয় করার উপায়। যে কারণে পানির উপর দিয়ে রাস্তা সংযোগ করতে মানুষ ব্যবহার করেছে সাঁকো কিংবা সেতুর। সেই সেতু তৈরিতে আবার মানুষকে যুগের বিবর্তনে সহযোগিতা নিতে হয়েছে প্রযুক্তির। বিশ্বে এমনই আটটি প্রযুক্তিবান্ধব সাঁকো আছে যা না দেখলে বোঝার উপায় নেই যে যোগাযোগ ক্ষেত্রে পৃথিবীর মানুষ কতটা এগিয়েছে।
লন্ডনের রোলিং ব্রিজ
ইংরেজিতে ‘ব্রিজ’ বলে অনেক কিছু একসঙ্গে বোঝানো গেলেও বাংলায় তা সম্ভব নয়। বাংলায় সাঁকো, সেতু, হাক্কা ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে গুনগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নামকরণ করা হয়েছে এই সংযোগস্থাপনকারী রাস্তার। লন্ডনের রোলিং ব্রিজটিও তেমনি এক সাঁকো। বিখ্যাত প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠান হেথারউইকের তত্ত্বাবধানে ২০০৪ সালে এই সাঁকোটি তৈরি করা হয়। পুরো সাঁকোটিকে বেশ কয়েকটি হইড্রোলিক র্যাম দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যাতে কাজের সময় সাঁকোটিকে গুটিয়ে রাখা যায়।
সিঙ্গাপুরের হ্যান্ডারসন ওয়েভস
সিঙ্গাপুরের দক্ষিণের দুইটি পার্কের মধ্যে সংযোগ রক্ষার্থে এই সাঁকোটি ২০০৮ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। লন্ডনভিত্তিক আরএসপি পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠান এবং সিঙ্গাপুরের প্রকৌশলীদের যৌথ উদ্যোগে এই সাঁকোটি তৈরি করা হয়। সাঁকোটি মোট সাতটি বাকে বিভক্ত। দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে এটা ২৭৪ মিটার। তবে মজার বিষয় হলো, সাঁকোটিতে বেশ কয়েকটি গোপন চেয়ার বসানো আছে, যেখানে চাইলে আপনি কিছুটা সময় বসতেও পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের হাই ট্রেসেটেল ট্রেইল ব্রিজ
যুক্তরাষ্ট্রের আইয়োআ নদীর উপরে এই সাঁকোটি তৈরি করা হয় ২০১১ সালে। মোট ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সাঁকোটির উচ্চতা চল্লিশ মিটার প্রায়। ডেভিড ডাহকুইস্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই সাঁকোটির তলদেশের কাজ করে। যে স্থানে এই সাঁকোটি তৈরি করা হয়েছে সেখানে আগে একটি খনি ছিল। তাই পরিত্যক্ত খনির উপর সাঁকো তৈরির বিষয়টি ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জ। মোট ৪১টি নিরেট স্টীলের ফ্রেম বানিয়ে তার উপর বসানো হয় সাঁকোর মূল কাঠামো।
চীনের লিংজিদি ব্রিজ
প্রকৌশলী জশুয়া বলচেভার এবং জন লিন দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামীন চীনের বিভিন্ন স্থাপত্যকলা নিয়ে কাজ করছেন। তাদের কাজের মূল ক্ষেত্রটি শানসি প্রদেশে। এবং সেখানেই তারা লিংজিদি সাঁকোটি তৈরি করেন। লিংজিদি গ্রামের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতেই এই সাঁকোটি তৈরি করা হয়েছে। এই সাঁকো থেকে ওই দুই প্রকৌশলী কোনো মুনাফা না করলেও গ্রামবাসীর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে এর ফলে।
নেদারল্যান্ডের মোসেস ব্রিজ
সেতু নির্মানে অনেক আগে থেকেই এগিয়ে ডেনিশরা। ১৮শতকের শুরুর দিকে তারাই প্রথম ভাসমান সেতু তৈরি করেছিল। পরবর্তীতে আরও অ্যান্ড এডি নামের একটি কোম্পানি দক্ষিণ নেদারল্যান্ডে মোসেস ব্রিজ নামে একটি সাঁকো তৈরি করে। প্রাচীন মিথকে মাথায় রেখে তৈরিকৃত এই সাঁকোর দুপাশে পানি। একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে পানির মাঝ দিয়ে নির্মিত এই সাঁকোটি দেখা যায় না বললেই চলে। কিন্তু নির্ধারিত পথ দিয়ে গেলে সহজেই সরু সাঁকোটি দেখা যায়, যেখান দিয়ে অনায়াসেই পানির বুক চিড়ে আপনি চলে যেতে পারবেন সামনের ভূমিতে।
লন্ডনের ফ্যান ব্রিজ
লন্ডনের প্যাডিংটন বেসিনের বাসিন্দাদের চাই এমন একটি সাঁকো যা সড়িয়ে রাখা যায়। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রোলিং ব্রিজ তৈরির দশ বছরের মাথায় এই সাঁকোটি তৈরি করা হয়। একটি লেকের উপর তৈরি করা এই সাঁকোটি যেকোনো সময় সড়িয়ে রাখা যায় এবং প্রয়োজন হলে দিক পরিবর্তনও করা যায়। এই সাঁকোর নকশার জন্য ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান নাইট আর্কিটেক্টকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
নেদারল্যান্ডের মেল্কেগব্রিজ
২০১২ সালে এই সাঁকোটি তৈরি করা হয়। একই বছর মোট দুটি অত্যাধুনিক সাঁকো তৈরি করা হলেও মেল্কেগব্রিজটিই মূলত আকর্ষণের কেন্দ্র ছিল। চীনের ড্রাগন কিং কং সাঁকোর সঙ্গে মিল রেখে এটা তৈরি করা হলেও প্রযুক্তির ব্যবহারে এটা এগিয়ে। লেকের যেকোনো প্রান্তে চাইলে সাঁকোকে পরিচালিত করা যায় এমন সেতু তৈরিতে প্রায় ৬ বছর টানা কাজ করতে হয়েছে। তবে এই সাঁকোর উপর দিয়ে কোনো ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারে না। সাইকেল এবং হুইলচেয়ারের জন্যই এই সাঁকোটি উন্মুক্ত থাকে।
প্যারিসের সিমন ডি বেভোয়ার ব্রিজ
অস্ট্রিয়ার প্রকৌশলী দিয়েতমার ফেইটিংজারের নির্মিত সাঁকোগুলোর মধ্যে সিমন ডি বেভোয়ার ব্রিজ অন্যতম। ২০০৬ সালে এর নির্মান কাজ শেষ হয় এবং পরবর্তী বছর থেকে সাধারণের জন্র উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। মোট পাঁচটি রাস্তা বিভিন্ন উচ্চতায় এই সাঁকোটিতে মিলেছে। এই সাঁকোটি মূলত পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য করা হয়েছে বিধায় এর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রাখা হয়েছে অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি।
মন্তব্য চালু নেই