অবশেষে সেই নারী ব্যাবসায়ীর চাঁদার টাকা ফেরত দিলেন জবি ছাত্রলীগ নেতা (অডিওসহ)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়(জবি)শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম এক নারী ব্যাবসায়ীর কাছ থেকে নেয়া চাঁদার টাকা ফেরত দিয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে গত বুধবার সংবাদ প্রকাশের পর নারী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নেওয়া চাঁদার টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন জবি শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির এ নেতা। গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে বসেই ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেছিলেন তিনি।
চাঁদার টাকা ফেরত দিতে ওই নারী ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ করা সিরাজুল ইসলাম ও শাখা ছাত্রলীগের আইন সম্পাদক রফিকের পৃথক তিনটি মুঠোফোন আলাপের রেকর্ড আমাদের হাতে এসেছে।
জানা যায়, গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে সিরাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম, রফিকসহ অন্তত ১৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী ওই নারী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেছিলেন।
এ ঘটনার পর ওই নারী ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে বিষয়টি অবহিত করলে বুধবার সন্ধায় সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হয়।
এসময় সিরাজুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, ‘আমি এরকম কোন মহিলাকে আমি চিনিনা। যদি কোন মহিলা এমন টাকা দাবি করে তাহলে আপনি আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গিয়ে ওই মাহিলাকে দিয়ে দেন। মাত্র দশ-বারো হাজার টাকা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি নেয়না। কত মানুষকেই তো এমনিতেই টাকা দেই, এটাও দিয়ে দিবো’।
অন্যদিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে বুধবার রাতেই সিরাজুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম ও রফিক ওই নারী ব্যবসায়ীকে টাকা ফেরত দিতে একাধিকবার তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। পাশাপাশি সাংবাদিকরা যেন এ ধরণের নিউজ না করে সেজন্যও তাকে অনুরোধ করেন। পরে রাতেই ওই ব্যবসায়ীকে টাকা ফেরত দিয়ে দেন তারা।(রেকর্ডিং)
এব্যাপারে ওই নারী ব্যবসায়ী বলেন, ‘সিরাজ, কামরুল ও রফিক আমাকে রাতে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে। পরে তারা আমার টাকা ফেরত দেয়’।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদও ঘটনা জানতে তাকে ফোন দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের হালিশহরের আল নূর লেডিস টেইলার্স ও রাজধানীর বাসাবোর একটি বোরকা কারখানার মালিক ওই নারী ব্যবসায়ী নূরজাহানের প্রায় ১২ লাখ টাকা আত্নসাৎ করে রাজধানীর পাটুয়াটুলীর কাপড়ের ব্যবসায়ী ও সামিরা বোরকা হাউজের মালিক রাশেদ।
টাকা ফেরত পেতে রাশেদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের হালিশহর থানায় সাধারণ ডায়েরী ও পাহাড়তলী থানায় মামলা করেন তিনি। কিন্তু কোন সুরাহা হয়না। একপর্যায়ে জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সেই টাকা উদ্ধার করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে জবির প্রক্টর অফিসে বসেই ১২ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেন।
এর আগে ২০১৪ সালের ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আলমকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ৫ লাখ টাকার টেন্ডার ছিনতাই করেছিলেন সিরাজুল ইসলাম। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে পরদিনই শিক্ষক সমিতির এক জরুরী সভায় শিক্ষকদের পা ধরে ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি।
তবে ১৫ মার্চ রাতেই কোতয়ালী থানায় শিক্ষককে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হত্যার হুমকির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সিরাজের নামে মামলা করেছিলেন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অশোক কুমার সাহা।
এ ছাড়া সিরাজকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ১৮ মার্চ তাকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগও সাময়িক বহিষ্কার করেছিল। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি তার শাস্তি চেয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। পরে সিরাজের ক্ষমা চাওয়ার প্রেক্ষিতে একই বছরের ৫ জুন সিন্ডিকেট সভায় তাকে শিক্ষক সমিতির কাছে ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ১২ জুলাই শিক্ষক সমিতির কাছে মুচলেকা দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়ে কার্যত তা প্রত্যাখান করে শিক্ষক সমিতি। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলা ও বহিষ্কারাদেশ বহাল রয়েছে।
এদিকে ২০১৪ সালের ২২ জুলাই পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের আল বারাকা পাবলিকেশন্সের সিসি ক্যামেরায় তার চাঁদাবাজির চিত্র ধরা পড়েছিল। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সাংবাদিককে প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলামেইলের সাংবাদিক হেদায়েত বাবু তার বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় জিডিও করেছিলেন
মন্তব্য চালু নেই