ফ্রি স্টাইলে ইলিশে সিল !

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকার ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের ইলিশ প্রতীকে ফ্রি স্টাইলে সিল মারা হচ্ছে। একই ব্যক্তিরা সিল মারছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীকেও।

বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই দক্ষিণের আজিমপুর ও লালবাগ এলাকায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। বিএনপির বর্জনের সংবাদ প্রচারের সাথে সাথে কেন্দ্রগুলোতে পুলিশের পাহারা জোরদার করা হয়েছে।

ভোটের সংখ্যা বাড়াতেই এ পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কয়েকজন পোলিং এজেন্ট।

আজিমপুর গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজ, অগ্রণী স্কুল ও কলেজ, ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকী উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ই আলিয়া কেন্দ্র, বদরুন্নেছা মহাবিদ্যালয়, নাজিরা বাজার এলাকা, বংশাল ও চকবাজার এলাকায় এই চিত্র দেখা যায়।

এ সময় গণমাধ্যম কর্মীদের ক্যামেরাসহ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। তবে দুপুর ১টার দিকে বদরুন্নেছা মহিলা কলেজ ও মাদ্রাসা-ই-আলীয়ার নারী কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে কিছু আনসার সদস্য আর বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বে দুইজন পুলিশ ছাড়া আর কেউ নেই। সবাইকে ভেতরে গিয়ে নিরাপত্তা দিতে দেখা গেছে। এ সময় অনেককেই প্রকাশ্যে সিল মারতে দেখা গেছে।

প্রিসাইডিং অফিসার কোথায়- আনসার সদস্যদের কাছে জানতে চাইলে তারা কেউ কোনো উত্তর দেননি। একজন পোলিং এজেন্ট বলেন, ‘স্যার তো লাঞ্চে আছেন।’

মাদ্রাসা-ই-আলীয়ার পুরুষ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শুধু ইলিশ মাছ প্রতীকের ব্যাজ পরা লোকজন বসে আছেন। সেখানে একজন ভোটারও নেই। বাইরে ৩০ থেকে ৩৫ জন বসে আছে। আর বুথে সিল মারছেন পোলিং এজেন্টরা।

মাদ্রাসা-ই-আলীয়ার পুরুষ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘দুপুরের টাইম, এ জন্য ভোটার একটু কম। এ কেন্দ্রে ১ হাজারের বেশি ভোট পড়েছে। আশা করি, দুপুরের পর আরও ভোটার আসবে। ভেতরে যারা আছেন তারা পোলিং এজেন্ট।’

শুধু মাছ মার্কার পোলিং এজেন্ট ছাড়া অন্য সবাই চলে গেছেন উল্লেখ করে মিজানুর রহমান বলেন, ‘উনারা হঠাৎ করেই চলে গেছেন। এ জন্য মাছ মার্কার লোকজন বেশি মনে হচ্ছে।’

আজিমপুর গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রেও চলছে ফ্রি স্টাইলে ভোটের উৎসব। তবে সেখানে আওয়ামী লীগের দুইজন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় কাউন্সিলর পদে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন একজন পোলিং এজেন্ট।

২৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ওসমান গণির (লাটিম) সমর্থক ছাত্রলীগ কর্মী রুবেল  বলেন, ‘ভাই, এইখান থেইক্যা যান গা। ঝামেলা হইব। বিএনপি তো নির্বাচনেই নাই। ভোটার বাড়াইতে হইব না। তাই ইলিশে তো সিল মারতেই হইব।’

আজিমপুর গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজের ১ নম্বর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘মানুষ তো প্রচুর ভোট দিচ্ছে। এ কেন্দ্রে ২ হাজার ৬৫২ ভোটার। অধিকাংশই ভোট দিয়েছে। আশা করি, বিকেলের মধ্য সবাই ভোট দেবেন।’

জালভোটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভাই, এইসব অভিযোগ আপনারা করেন। আর কেউ তো করে না।’

দুপুর দেড়টার দিকে ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকী উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ভোটার নেই। কিন্তু বাইরে অবস্থান করতে দেখা গেছে ইলিশ মাছ মার্কার ব্যাজ করা সমর্থকদের। আর পোলিং এজেন্টদের মাঝে মাঝেই ভোট দিতে দেখা গেছে।

ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার অনিমেষ ঘোষ বলেন, ‘এখনও তো নির্বাচন সুষ্ঠুই হচ্ছে। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত কোনো ঝামেলা হচ্ছে না।’

লালবাগ, আজিমপুর, বদরুন্নেছা ও চকবাজার এলাকায় সরকারি দলের নেতাকর্মীদের ইলিশ প্রতীকের বিজয় মিছিলও করতে দেখা গেছে। দ্য রিপোর্ট



মন্তব্য চালু নেই