দিনরাত বিরামহীনভাবে আমাকে অসামাজিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে’
আব্বা আমাকে বাঁচাও, আম্মা আমাকে বাঁচাও, আমি আর পারছি না।’ মধ্যপ্রাচ্যের জর্ডান থেকে এভাবেই টেলিফোনে ভেসে আসছে মেয়ে রেহানা খাতুনের কণ্ঠ। রেহানা ফোনে আরো বলেন, ‘রাত দিনে বিরামহীনভাবেই আমাকে ব্যবহার করা হচ্ছে অসামাজিক কাজে। এভাবে আর কিছুদিন গেলে আমার মরা মুখ দেখবে। দেখবেই বা কী করে লাশ তো পাবে না।’
নিজের পায়ে দাঁড়ানো আর স্বামীহীন পরিবারকে চালানোর ইচ্ছাশক্তি নিয়ে কিছু করতে চেয়েছিলেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা গ্রামের মেয়ে রেহানা খাতুন (২৬)। দালালের খপ্পরে পড়ে গত মার্চ মাসে রেহানা পাড়ি দেন জর্ডানে। এরপর বহুদিন রেহানার কোনো খোঁজ খবর পাননি রেহানার বাবা ফজর আলী। ২১ মে মেয়ের কণ্ঠস্বর শুনতে পান ফজর আলী। মেয়ে রেহানা কেবলই কান্নাকাটি করে সাহায্য চাইছেন বাবার কাছে।
ফজর আলী সর্বশেষ রেহানার ফোন পান ২ জুলাই। সেদিনের ফোনেও রেহানার ছিল বেঁচে থাকার আকুতি।
ফজর আলী জানান, রেহানার স্বামী মনিরুল ইসলাম বেঁচে নেই। ছেলে ইব্রাহিম (১১) আর মেয়ে আসমাকে (৯) নিয়ে রেহানার সংসার। ছেলে ইব্রাহিম প্রতিবন্ধী। সড়ক দুর্ঘটনায় মনিরুল মারা গেলে শ্বশুর বাড়িতেও আর জায়গা হয়নি রেহানার। তাঁর কাছে চলে আসে রেহানা। এ বাড়ি, ও বাড়ি কাজ করে উপার্জন করত রেহানা। বোঝা হয়ে থাকতে চাইত না।
ফজর আলী জানান, গ্রামের মসজিদের ইমাম বিল্লাল হোসেন পরিচয় করিয়ে দেন পাশের ভাড়খালী গ্রামের আবদুর রহিমের সঙ্গে। এ দুজনই রেহানাকে বিদেশ যাওয়ার পরামর্শ ও তাগিদ দেন। গত বছর ডিসেম্বর মাসে জমি বন্ধক আর গরু বিক্রি করে ৭০ হাজার টাকা তিনি রহিমের হাতে তুলে দেন।
গত মার্চ মাসে আবদুর রহিম ফোন দিয়ে রেহানাকে ঢাকায় আসতে বলেন। ২০ মার্চ রেহানা ঢাকায় যান। এরপর চেষ্টা করেও মেয়ের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি ফজর আলী। গত ২১ মে রেহানা ফোন করেন জর্ডান থেকে। ফোন করে দেশে ফিরে আসার আকুতি জানান।
মেয়ে রেহানাকে ফিরিয়ে আনতে এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ফজর আলী। গত ২৫ মে সাতক্ষীরায় মানবপাচার প্রতিরোধ দমন ট্রাইবুন্যালে মামলা করেছেন তিনি। আদালত থানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠালেও পুলিশ এখনো কাউকে আটক করেনি।
এ ব্যাপারে সদর থানার উপপরিদর্শক নাজমুল হাসান বলেন, ‘আসামির অবস্থান নিশ্চিত করতে বিলম্ব হচ্ছে। কিন্তু খুব শিগগিরই আমরা দায়ী ব্যক্তিদের আটক করব।’
রেহানার প্রতিবন্ধী ছেলে ইব্রাহীম ইশারায় মাকে খুঁজছে। মেয়ে আসমা দিনরাত মায়ের জন্য কাঁদছে। রেহেনার মা রোকেয়া খাতুন, ভাই মোমিনউল্লাহ ও আল আমিন আর বোন আরজিনা খাতুন শুধুই কাঁদছে। আর বাবা ফজর আলী পুলিশ ও আদালতে ছুটে বেড়াচ্ছেন।
মন্তব্য চালু নেই