পৃথিবীর অন্যরকম দশটি দেশ যেখানে সেনাবাহিনীর কোন অস্তিত্ব নেই!
বর্তমান বিশ্বে সেনাবাহিনী বা সামরিক শক্তিহীন কোন দেশ থাকতে পারে, এ কথা শুনলে অনেকেই অবাক হতে পারেন। দেশ ও জাতির নিরাপত্তার স্বার্থেই সামরিক শক্তির প্রয়োজন হয়। রাষ্ট্রকে বহি:শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করা সেনাবাহিনীর অন্যতম প্রধান কাজ।
অধিকাংশ দেশই তার আর্থিক সামর্থ্যরে চেয়েও বিশালাকারে সেনাবাহিনী গড়ে তোলে। প্রথমত: রাষ্ট্রকে শত্রুমুক্ত রাখতে, বিদেশী আগ্রাসন প্রতিরোধ, শত্রুচিহ্নিত দেশ ও তার মিত্রজোটকে আক্রমণ করতেই সেনাবাহিনী প্রয়োগ করা হয়।
সামরিক বাহিনীর দিক থেকে বিশ্বে এক নম্বর স্থানে রয়েছে পূর্ব এশিয়ার দেশ চীন। এ মুহুর্তে দেশটিতে সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২২ লাখ ৮৫ হাজার। আবার পৃথিবীতে এমন দেশও আছে, যেখানে সামরিক বাহিনীর কোন অস্তিত্ব নেই। এরকম দশটি দেশ রয়েছে যাদের সেনাবাহিনী ও সামরিক শক্তির প্রয়োজন নেই।
ক্যারিবীয় উপকূলে ছোট্ট সুন্দর দেশ গ্রানাডা
গ্রানাডা : ছোট্ট ছোট্ট ছয়টি দ্বীপ নিয়ে গ্রানাডা রাষ্ট্রের উদ্ভব। দক্ষিণ পশ্চিমে ক্যারিবীয় সাগর। উত্তর পশ্চিমে ত্রিনিদাদ এবং টোবাগো। গ্রানাডার আয়তন ৩৪৪ বর্গ কিলোমিটার। লোকসংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার মাত্র। ১৯৭৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী ইংল্যান্ডের কাছ থেকে গ্রানাডা স্বাধীনতা লাভ করে। সে দেশের মানুষ এখন সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করছেন।
দেশটিতে প্রাতিষ্ঠানিক কোন সেনাবাহিনী নেই। ১৯৮৪ সালে গ্রানাডার সরকার জাতীয় নিরাপত্তার স্বর্থে রয়াল পুলিশ ফোর্স গঠন করে। দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পুলিশের উপর অর্পণ করা হয়েছে।
সুন্দর ও মনোরম পরিবেশের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে অ্যান্ডোরাতে
অ্যান্ডোরা : দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের ছোট্ট একটি দেশ অ্যান্ডোরা। দেশটির পূর্বাঞ্চলে পিরনিস পর্বতমালা। আয়তন ৪৬৮ বর্গ কিলোমিটার। লোকসংখ্যা ৮৫ হাজার ৫০০ জন। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ অ্যান্ডোরাতে কোন সেনাবাহিনী নেই। দেশটির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্তে ফ্রান্সসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করা হয়েছে।
সে দেশের আইন শৃংখলা, নিরাপত্তা বজায় রাখতে পুলিশ বাহিনী সার্বিক দায়িত্ব পালন করে। এ জন্য পুলিশ বাহিনীকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে।
অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত গীর্জাটি আজও দেশের মানুষকে আকৃষ্ট করে
লিসেনটেইনস্টেইন : মধ্য ইউরোপের ছোট্ট দেশ লিসেনটেইনস্টেইন। আয়তন ১৬০ বর্গ কিলোমিটার। লোকসংখ্যা ৩৭ হাজার ৫০০ জন। এ দেশটিতেও কোন সেনাবাহিনী নেই।
সেনাবাহিনী যে ছিল না তা নয়। ১৮৬৮ সালে পুরোপুরি সেনাবাহিনী বিলুপ্ত করা হয়। ১৮০৬ সালের ১২ জুলাই স্বাধীনতা লাভ কওে দেশটি। সেনাবাহিনী থাকলে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। এ কারণে শাসকগোষ্ঠী তা বিলুপ্ত করে দেয়।
দেশে যুদ্ধ বাঁধলে অথবা শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হলে তখনই সেনাবাহিনীর প্রয়োজন। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, সে রকম পরিস্থিতি আজও সৃষ্টি হয়নি দেশটিতে। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিষদ দেশটির নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।
ওসেনিয়া সাগরের পূর্বে সলোমন দ্বীপপুঞ্জ। সাগর পাড়ে ঘুওে বেড়ানো আর মাছ ধরে জীবন কাটে এ এলাকার মানুষের
সলোমন দ্বীপপুঞ্জ : ১৯৭৮ সালের ৭ জুলাই ইংল্যান্ডের উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে সলোমন দ্বীপপুঞ্জ। আয়তন ২৮ হাজার ৪০০ বর্গ কিলোমিটার। লোকসংখ্যা ৫ লাখ ২৩ হাজার। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১৮ জন লোকের বসবাস।
কোন সামরিক বাহিনী নেই এ দেশে। উপজাতি গোষ্ঠীর দ্বন্ধ, সংঘাত বন্ধে আধা সামরিক বাহিনী দায়িত্ব পালন করে থাকে। সামরিক বাহিনী না থাকায় পুলিশ পুরো দেশের শান্তি ও শৃংখলার দায়িত্ব পালন করে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নাউরু
নাউরু : প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ছোট্ট একটি দেশ নাউরু। আয়তন মাত্র ২১ বর্গ কিলোমিটার। লোকসংক্যা ১০ হাজার। দ্বীপ দেশ, ফলে এ দেশের মানুষের আয়ের প্রধান উৎস মৎস্য শিকার।
এ দেশে কোন সেনাবাহিনী নেই। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বিভাগ নাউরুর স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা অর্থাৎ আইন শৃংখলা বজায় রাখতে স্থানীয় পুলিশ বেশ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন কওে থাকে।
নয়নাভিরাম ভ্যাটিক্যান সিটি
ভ্যাটিক্যান সিটি : বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র দেশ ভ্যাটিক্যান সিটি। আয়তন মাত্র ১১০ একর। লোকসংখ্যা ৮৪২ জন। বাস্তবিক অর্থে এটা ইটালির রাজধানী রোমের একটা ছিটমহল। পোপ কর্তৃক রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।
সরকারি নিয়মে কোন প্রাতিষ্ঠানিক সামরিক বাহিনী নেই। ১৯৭০ সালে নোবল গার্ড বিলুপ্ত করা হয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা পোপের উপর নির্ভরশীল। তিনি চাইলে ইটালির সামরিক বাহিনীর সাহায্য নিতে পারেন।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে টুভালুতে
টুভালু : ২৬ বর্গ কিলোমিটারের একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ টুভালু। ইংল্যান্ডের শাসন থেকে ১৯৭৮ সালের ১ অক্টোবর স্বাধীন হয় টুভালু। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দেশটিতে কোন সামরিক বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। সামরিক বাহিনীর কোন প্রয়োজনও পড়েনি।
মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে স্থানীয় পুলিশ। কৃষি কাজ আর সমুদ্রে মৎস্য শিকারই সেখানকার মানুষের আয়ের অন্যতম উৎস।
সামোয়ার রাস্তায় নিরাপদে চলছে গাড়ী, যাত্রীরাও নিশ্চিন্তে গন্তব্যস্থলে যাচ্ছে
সামোয়া : ১৯৬২ সালের ১ জানুয়ারী নিউজিল্যান্ড থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে সামোয়া। আয়তন ২ হাজার ৮৪২ বর্গ কিলোমিটার। লোকসংখ্যা ১ লাথ ৯৪ হাজার ৩২০ জন। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৬৩ জন লোক বাস করেন সেখানে। মাথা পিছু আয় ৪ হাজার ২৯৮ ডলার।
স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ছোট্ট এ দেশে কখনও সামরিক বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বড় ধরনের কোন অপরাধ সংগাঠত হয়নি। ছোটখাট অপরাধ পুলিশ বাহিনী দিয়েই সমাধান করা হয়।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় পশ্চিম উপকূলে দ্বীপ রাষ্ট্র প্যালাউ
পালাউ : প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে ২৫০ টি দ্বীপ নিয়ে প্যালাউ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আয়তন ৪৬৬ বর্গ কিলোমিটার। লোকসংখ্যা ১৭ হাজার ৯৪৮ জন। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩৯ জন লোক বসবাস করেন।
দ্বীপ দেশ প্যালাউয়ে কোন সামরিক বাহিনী নেই। দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে পুলিশ। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড থেকে পুলিশ বাহিনীকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় এ দ্বীপ দেশের মানুষ সুখে শান্তিতে রয়েছে
মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ : প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপ দেশ মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ। ১৯৭৯ সালে স্বায়ত্বশাসন লাভ করলেও পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করে ১৯৮৬ সালের ২১ অক্টোবর। মোট আয়তন ১৮১ বর্গ কিলোমিটার। লোকসংখ্যা ৬৮ হাজার। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে আজ অবধি কোন সামরিক বাহিনী নেই সেদেশে। ইউনিট পুলিশ দিয়েই দ্বীপ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
সূত্র: ইয়াহু নিউজ
মন্তব্য চালু নেই