বিশ্বের সবচেয়ে বড় গোরস্থান
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানুষের মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন প্রচলিত ধারণা আছে। এছাড়া দেশ-কাল-পাত্র ভেদে মৃত ব্যক্তিকে সৎকারের পন্থাও ভিন্ন। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে মানুষের মৃত্যু হলে তাদের নদীতে জ্বলন্ত অবস্থায় ভাসিয়ে দেয়া হয়। তাদের বিশ্বাস মতে, নদীর পানির সঙ্গে মৃত ব্যক্তির সব মন্দের হিসাব মিলিয়ে যাবে। মহাকাল জানে আদৌ তা হয় কিনা। আবার ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়। তবে যত্রতত্র এই কবর দিলে চলে না। একটি নির্দিষ্ট স্থানে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে তারপর মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়া হয়। এই নির্দিষ্ট স্থানটিকে বলা হয় গোরস্থান বা কবরস্থান।
তেমনি একটি গোরস্থান ইরাকের পবিত্র নাজাফ শহরের নিকটবর্তী ‘ভ্যালি অব পিস’। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায় ১৪০০ বছর ধরে পাঁচ মিলিয়নের (৫০ লাখ) বেশি মানুষকে এই গোরস্থানে কবর দেয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো গোরস্থান যেখানে এখনও মৃতব্যক্তিকে কবর দেয়া হয়। স্থানীয় ভাষায় এই গোরস্থানটির নাম ‘ওয়াদি আল-সালাম’, যাকে বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘শান্তির উপত্যকা’।
পবিত্র নাজাফ শহরের নিকটবর্তী ইমাম আলী ইবনে আবি তালিবের মাজারের পাশেই এই গোরস্থানটি অবস্থিত। আলী ইবনে আবি তালিব শিয়াদের প্রথম ইমাম এবং চতুর্থ খলিফা। তার এই মাজারকে কেন্দ্র করেই ইরাকের শিয়া মতাবলম্বীদের বসতি। দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিয়া মতাবলম্বী অনেকেই প্রতিবছর এই মাজার পরিদর্শনে আসেন। মাজার নিটকবর্তী গোরস্থানে এখনও প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ মৃতব্যক্তিকে কবর দেয়া হয়। যদিও বর্তমানে দেশটিতে সংঘাতের কারণে প্রায় প্রতিদিনই অনেক মৃতব্যক্তিকে কবর দেয়া হয় এখানে।
গোরস্থানটি মোট ১ হাজার ৪৮৬ একর এলাকার উপর অবস্থিত। এই গোরস্থানটি নিয়ে শিয়া মতাবলম্বীদের মধ্যে অনেক কিংবদন্তি চালু আছে। তার মধ্যে একটি হলো- এই গোরস্থানে তাদেরই কবর দেয়া হয় যাদের আত্মা পবিত্র এবং শান্ত। ইতিহাসের অনেক রাজা, বাদশা, যুবরাজ এবং সুলতানদের কবর আছে এখানে। তবে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে আছে নবী হুদ (আ.), নবী সালেহ (আ.) এবং আয়াতুল্লাহ সায়েদ মুহাম্মদ বাকির আল সদর এবং আলী ইবনে আবি তালিব, যাকে বিশ্বাসীদের যুবরাজ বলা হতো।
গোরস্থানের কবরগুলো পোড়ানো ইট এবং প্লাস্টার দিয়ে তৈরি। ব্যক্তির সম্মান এবং সমাজে আধিপত্য অনুযায়ী কবরের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া কবরের গায়ে তাদের সম্পত্তির হিসাব এবং ভূমি মালিকানার হিসাবও লেখা আছে। মাটির গভীরে সুড়ঙ্গ করে অনেককে কবর দেয়া হতো একটা সময়। ওই কবরগুলো দেখতে সিঁড়ির মাধ্যমে মাটির নিচে নামতে হয়। তবে ১৯২৩ সালের পর থেকে এ পদ্ধতিতে কবর দেয়া বন্ধ হয়েছে।
২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের সময় ইরাকি মিলিশিয়ারা আত্মগোপনের জন্য এই গোরস্থানটিকে ব্যবহার করতো। কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ইরাকের সর্বত্র যেতে পারলেও ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার কারণে এই গোরস্থানে প্রবেশ করতে পারতো না। এছাড়া বিশাল এই গোরস্থানের অসংখ্য সুড়ঙ্গ আর অলিগলি মার্কিন বাহিনীর জন্য ছিল সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতা।
মন্তব্য চালু নেই