জোঁকের তেলের চিকিৎসায় কেন আকৃষ্ট মানুষ ?
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইউনানী শাস্ত্রে, জোঁক দিয়ে চিকিৎসা প্রায় ৫ হাজার বছরের পুরনো।
আধুনিক চিকিৎসার যুগে বাংলাদেশের শহর ও গ্রামের বাজারগুলোতে এখনও ক্যানভাসারদের জোঁকের তেল দিয়ে চিকিৎসা করতে দেখা যায়। ইউনানী শাস্ত্রে জীবন্ত জোঁক দিয়ে চিকিৎসার কথা থাকলেও, তেল দিয়ে চিকিৎসার বিষয়টি প্রশ্নসাপেক্ষ।
কিন্ত বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন এ চিকিৎসার প্রতি কেন ঝুঁকছে নিম্নবিত্ত লোকজন? চিকিৎসকরাই বা তাদের কিভাবে আকৃষ্ট করছে?
রাজধানী ঢাকার মিরপুরে একটি ব্যস্ত সড়কের পাশেই ক্যানভাসিং করছেন আল-আমিন। তার সামনে কয়েকটি পাত্রে রাখা আছে বিপুল পরিমাণ জীবন্ত জোঁক। তবে জ্যান্ত জোঁক নয়, এর তেল দিয়ে চিকিৎসা করছেন তিনি।
আল-আমিনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রায় পঞ্চশজনের একটি জটলা। এই জটলা বা মজমার বেশির ভাগ ব্যক্তিই নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর।
বাংলাদেশে শহরের ফুটপাত এবং গ্রামের বাজারগুলোতে ক্যানভাস করে জোঁক দিয়ে চিকিৎসার এ দৃশ্য নিয়মিত। জোঁক দিয়ে চিকিৎসার এই রীতি বেশ পুরনো।
প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে এই চিকিৎসা বেশ জনপ্রিয় ছিল। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এখন এই চিকিৎসা দেয়া হয় ইউনানী হাসপাতালগুলোতে।
ইউনানী শাস্ত্র অনুযায়ী জ্যান্ত জোঁক ও জোঁকের তেল দিয়ে মানুষের শরীরের নানা ধরণের বাহ্যিক রোগের চিকিৎসা করা হয়। সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদ মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোবারক হোসাইন জানালেন, শরীরের কোনো দূষিত পদার্থ বের করে আনতে জ্যান্ত জোঁক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
আর জোঁকের তেল দিয়ে বাত-ব্যথা-যৌনসমস্যাসহ নানা ধরণের বাহ্যিক রোগের চিকিৎসা করা হয়।
কিন্তু, বাংলাদেশে ক্যানভাসিং করে চিকিৎসা দেয়া অবৈধ। তাদের ঔষধ তৈরির প্রক্রিয়াও প্রশ্নসাপেক্ষ। তারপরও ক্যানভাসারদের কাছ থেকে জোঁকের তেলের চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই। ক্যানভাসার আল আমিন জানালেন দিনে অন্তত দেড় শ’ ব্যক্তি তার কাছ থেকে চিকিৎসা নেয়।
কিন্তু অ্যালোপ্যাথিক-হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার যুগে রোগীরা জোঁক দিয়ে চিকিৎসার দিকে কেন ঝুঁকছে?
জোঁকের তেল কিনতে আসা পঞ্চাশোর্ধ জাহাঙ্গীর হোসেন জানালেন, “অনেক সময় লাখ টাকা খরচ করেও রোগ ভালো হয়না। আবার চার আনার দূর্বা ঘাসেও সেরে যায়। তাই জোঁকের তেল নিলাম।”
যৌনসমস্যা ভোগা আরেকজন রোগীর বক্তব্য, “সবাই নিচ্ছে তাই নিলাম। রোগ সারলে তো ভালো। আর না সারলে তো কিছুই করার নেই?” এসব রোগীদের খুব সহজেই আকৃষ্ট করছেন ক্যানভাসাররা। কিন্তু কিভাবে?
ক্যানভাসার আল-আমিন জানালেন, কোরআনের দোহাই দিয়ে ও নানা ধরণের মুখরোচক কথা বলে রোগীদের আকৃষ্ট করতে হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে জোঁক দিয়ে চিকিৎসার নামে ক্যানভাসারদের এসব অবৈধ ব্যবসা এখনও কীভাবে চলছে?
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমিন জানান, “প্রায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এদের জেল-জরিমানা করা হয়। কিন্তু বিক্ষিপ্তভাবে বসার কারণে পুরোপুরি নির্মূল করা যাচ্ছে না।” রুহুল আমিন মনে করেন, জেল-জরিমানার চেয়ে জোঁকের চিকিৎসার নামে এই অবৈধ চিকিৎসা বন্ধে প্রয়োজন মানুষের সচেতনতা।
সূত্র : বিবিসি
মন্তব্য চালু নেই