গোপন আস্তানায় বিন লাদেনের পড়াশোনা
পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে গোপন আস্তানায় থাকার সময় বেশি কিছু নির্বাচিত বই পড়েন আল-কায়েদার প্রাক্তন প্রধান ওসামা বিন লাদেন। পাঁচ বছর গোপনে থাকার কারণে পড়ার জন্য বেশ সময় পেয়ে যান তিনি।
তার এই পড়াশোনা ছিল বিশ্বে আল-কায়েদার স্টাইলে শাসন কায়েমের বাধা দূর করার চেষ্টা। কিন্তু উগ্রবাদ কখনো টেকেনি। বিন লাদেনের পরে আরো যত নেতা আসুক না কেন, আল-কায়েদা সব সময়ই পরাজিত হবে।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্র লাদেনের আস্তানায় পাওয়া যাবতীয় ডকুমেন্ট প্রকাশ করে। এর মধ্যে ছিল বেশি কয়েকটি বই। বিন লাদেন পড়েছেন, এমন প্রমাণ থাকা বহুল আলোচিত ১০টি বই সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো।
১. নেসেসারি ইলুজন : থট কন্ট্রোল ইন ডেমোক্রাটিক সোসাইটি
বইটির লেখক বিখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক নোম চমস্কি। নিখুঁতভাবে গণতন্ত্রে প্রপাগান্ডা চালানোর ওপর বইটি লেখা।
২. ইমপেরিয়াল হাবরিজ : হোয়াই দ্য ওয়েস্ট ইজ লসিং দ্য ওয়ার অন টেরর
বইটি লেখক মাইকেল স্কেয়ুর। তিনি সিআইএর প্রাক্তন কর্মকর্তা ছিলেন। তার দায়িত্বে ছিল বিন লাদেন ডেস্ক। ২০০৪ সালে প্রকাশিত বইটিতে বিন লাদেনের গুণকীর্তন করা হয়েছে। এতে তাকে ‘সর্বোচ্চ সম্মাননীয়, সুহৃদ্য, বিস্ময়কর গুণের অধিকারী ও রোমান্টিক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইসলামের ইতিহাসের গত ১৫০ বছরে তার মতো মানুষ আর জন্মায়নি।
৩. অক্সফোর্ড হিস্ট্রি অব মডার্ন ওয়ার
বইটির লেখক চার্লস টাউনসেন্ড। ১৪ শতক থেকে এই পর্যন্ত যত বড় বড় যুদ্ধ হয়েছে, সে সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা হাজির করা হয়েছে এই বইয়ে।
৪. দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অব দ্য গ্রেট পাওয়ার
পল কেনেডেটি এই বইয়ের লেখক। ১৫০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বশক্তির উত্থান-পত্তনের বর্ণনা রয়েছে এতে।
৫. ওবামা’স ওয়ার
বব উডওয়ার্ড বইটি লিখেছেন। যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার বর্ণনা দিয়ে বইটি লেখা হয়েছে।
৬. আমেরিকা’স ওয়ার অন টেররিজম
বইটি লেখক মাইকেল চোসুদোভস্কি। লেখক যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, ৯/১১ হামলা যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পিত ঘটনা। এর মাধ্যমে তারা পশ্চিম এশিয়ায় আগ্রাসন চালানোর সুযোগ নিয়েছে। লেখক দাবি করেছেন, বিন লাদেন বলে কেউ নেই। যুক্তরাষ্ট্র এই ‘ভুয়া মানুষটি’ কল্পকাহিনি দিয়ে তৈরি করেছেন।
৭. নিউ পার্ল হারবার : ডিসট্রাবিং কুয়েসচানস অ্যাবাউট দ্য বুশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ৯/১১
এই বইয়ের লেখক ডেভিড গ্রিফিন। মাইকেল চোসুদোভস্কির মতো গ্রিফিনও দাবি করেছেন, নিজেদের স্বার্থে বুশ প্রশাসন ৯/১১ কাণ্ডের জন্ম দেয়।
৮. পপুলার সায়েন্স ম্যাগাজিন
বিন লাদেন ব্যক্তিগত চিন্তার খোরাকের জন্য এবং নতুন উদ্ভাবনী কায়দা আয়ত্তের জন্য বই আকারের এই ম্যাগাজিন পড়তেন।
৯. আল-কায়েদা’স অনলাইন মিডিয়া স্ট্রাটেজিজ : ফ্রম আবু রয়টার টু ইরহাবি ০০৭
হান্না রোগানের গবেষণাধর্মী বই। এতে আল-কায়েদার গণমাধ্যম কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
১০. ব্লাডলাইনস অব দ্য ইলুমিনাটি
ফ্রিৎজ স্প্রিংমেইয়ের এই বইয়ের লেখক। যেসব ঘটনার মধ্য দিয়ে বিশ্বটি একটি কাঠামো পেয়েছে, তা বিশদভাবে এই বইয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর আগ্রাসী ভূমিকার বিপরীতে নতুন আগ্রাসন শুরু করা বিন লাদেনকে নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের শুরু বিন লাদেনকে টার্গেট করে। তিনি নেই, কিন্তু যুদ্ধ এখনো চলছে। সেই সন্ত্রাসী, উগ্রবাদীরা এখনো টিকে আছে। নতুন নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে তারা। তাদের হঠাতে হয়তো সামরিক যুদ্ধের প্রয়োজন আছে, কিন্তু তার চেয়ে বেশি দরকার বিশ্বব্যাপী মানবিক আদর্শের যুদ্ধ জোরদার করা।
মন্তব্য চালু নেই