বরিশালের কিছু খবর

কেতনার বিলে আজো নির্মিত হয়নি স্মৃতিসৌধ ॥ মেলেনি শহীদের স্বীকৃতি

দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ কেতনার বিল গণহত্যা দিবস আজ শুক্রবার। ১৯৭১ সালের এইদিনে বরিশালের উত্তর জনপদের তৎকালীন গৌরনদী ও বর্তমান আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ও কোদালধোয়া গ্রামের মধ্যবর্তী রাংতার উত্তর পাশের সু-বিশাল কেতনার বিলে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আটটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক নিরিহ গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে।

দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় এ গণহত্যার স্থানে স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিসৌধ। ফলে এসব শহীদের শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকু মুছে গেছে। এছাড়া শহীদের তালিকায়ও স্থান পায়নি কেউ। এমনকি দীর্ঘদিনেও সরকারী ভাবে দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে নেয়া হয়নি কোন কর্মসূচী। তবে গত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও স্থানীয় ভাবে রাংতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শুক্রবার বিকেল তিনটায় ‘গণহত্যা দিবস-৭১’ উপলক্ষ্যে স্মরণ সভা, শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া-মিলাদ ও প্রার্থণা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও দিবসটি উদ্যাপন উপলক্ষ্যে এবারই সর্বপ্রথম প্রকাশিত হচ্ছে ‘স্মরণিকা-৭১’।

যা ঘটেছিল সেদিন : ৭১’র সালের ১ জৈষ্ঠ্য দোনারকান্দির বাসিন্দা চিত্ত বল্ল¬¬¬¬ভের নেতৃত্বে স্থানীয় লোকজন ঢাল শুড়কী নিয়ে পাক হানাদারদের মুখোমুখী ঝাঁপিয়ে পড়ে চারজন পাক সেনাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় গৌরনদী কলেজের পাক সেনাদের ক্যাম্পের শতাধিক পাকসেনা ক্ষিপ্ত হয়। তারা স্থানীয় আলবদর ও রাজাকারদের সহযোগীতায় কসবার হযরত মল্লি¬¬¬¬ক দূত কুমার পীর সাহেবের মাজার সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে চাঁদশীর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে জনতার ওপর এলএমজির ব্রাশ মারে এবং গুলি করে পাখির মতো মানুষ মারতে থাকে। পাক সেনাদের ভয়ে সেদিন চাঁদশী, রাংতা, রাজিহার, চেঙ্গুটিয়া, কান্দিরপাড়সহ আটটি গ্রামের ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষ বর্তমান আগৈলঝাড়ার হিন্দু অধ্যুষিত বাকাল, কোদালধোয়া গ্রামের মধ্যবর্তী রাংতার উত্তর পাশের সু-বিশাল কেতনার বিলের ধান ও পাট ক্ষেতের মধ্যে আশ্রয় নেয়। স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগীতায় পাকিস্তানী সৈন্যরা কেতনার বিলে লুকিয়ে থাকা নিরিহ গ্রামবাসীদের ওপর গুলি করতে থাকে। এতে ওইদিন ৫ শতাধিক নিরীহ গ্রামবাসী প্রাণ হারায়।

সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শী রাজিহারের কাশিনাথ পাত্রের পুত্র অমূল্য পাত্র জানান, ওইসময় প্রাণ বাঁচাতে পালানো মানুষের ভীড়ে লাশ সৎকার বা কবর দেয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার পরেও মৃত কুপ নামেখ্যাত পাত্র বাড়ির বেঁচে যাওয়া হরলাল পাত্র ও অমূল্য পাত্রর নেতৃত্বে হরলালের পুত্র সুশীল পাত্র, কেষ্ট পাত্র, রাধা কান্ত পাত্রসহ কয়েকজনে পরেরদিন তাদের হারানো স্বজনসহ প্রায় দেড় শতাধিক লোকের লাশ এনে তাদের পাত্র বাড়ির কয়েকটি স্থানে বড় বড় গর্ত করে একত্রে মাটি চাঁপা দিয়ে রাখা হয়। যার গর্তের সংখ্যা ছিলো ছয়টি। বাকি লাশগুলো কেতনার বিলে শেয়াল, কুকুরের খাবার হয়ে যায়। বেশীরভাগ লাশ পচে গলে পড়ে থাকে বিলের মধ্যেই। শেয়াল, কুকুরে ওইসব লাশের গন্ধ ছড়াতো। কাশীনাথ পাত্রের আরেক পুত্র জগদ্বিশ পাত্র জানান, জীবন বাঁচাতে তার বাবা সেদিন পালাতে চেয়েও পারেননি। তার বাবার গায়ে ৫টি গুলি লেগেছিল।

নিহত যারা : কেতনার বিলের গণহত্যার মধ্যে একমাত্র রাজিহারের “পাত্র” বংশেরই কাশী নাথ পাত্র, বিনোদ পাত্র, বিনোদের স্ত্রী সোনেকা পাত্র, মেয়ে গীতা পাত্র, কানন পাত্র, মঙ্গল পাত্র, মঙ্গলের মা হরিদাসি পাত্র, মেয়ে অঞ্জলী পাত্র, দেবু পাত্রর স্ত্রী গীতা পাত্র, মোহন পাত্র, মেয়ে ক্ষেন্তি পাত্র, কার্তিক পাত্রর স্ত্রী শ্যামলী পাত্র তার ১২ দিনের শিশু অমৃত পাত্র, মেয়ে মঞ্জু পাত্র, মতি পাত্র, লক্ষ্মি কান্তর স্ত্রী সুমালা পাত্র, নিবারন বিশ্বাসসহ একই বাড়ির ১৯ জন প্রান হারিয়েছিলেন। এরমধ্যে ১২ দিনের শিশু অমৃতকে বুটে পৃষ্ঠ করে ও নিবারনকে ব্যানেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে নরপশু পাক সেনারা।

ক্ষোভ প্রকাশ : শহীদের স্বজন ধীরেন পাত্র, জগদ্বিশ পাত্র, চাঁদশী গ্রামের প্রেমানন্দ ঘরামীসহ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের স্বজনরা ওইদিন পাক সেনাদের গুলিতে শহীদ হলেও আজো তাদের পরিবারকে শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। এছাড়া ওইসব শহীদের স্মৃতি চিহ্ন সংরক্ষনে আজো কেতনার বিলে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিসৌধ। কেতনার বিলে পাক সেনাদের নির্মম বুলেটে শহীদ হওয়া পাঁচ শতাধিক শহীদের স্মৃতি চিহ্ন সংরক্ষনের জন্য শহীদ পরিবারসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা প্রধানমন্ত্রী সহ সংশ্লি¬¬ষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করেছেন।

বরিশালে আবাসিক হোটেলে যুবক খুন

নগরীর চকবাজারের একটি আবাসিক হোটেলে বশির হাওলাদার (২৭) নামের এক যুবক খুন হয়েছে। বুধবার রাতে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে। তবে ‘বরিশাল হোটেল’ নামের রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ ঠিকানার সাথে নিহত যুবকের কোন মিল না থাকায় খুন হওয়া যুবকের সঠিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।

হোটেল ম্যানেজার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বুধবার সকালে হোটেলের দ্বিতীয় তলার ১০৩ নম্বর কক্ষ ভাড়া নেয় এক ব্যক্তি। হোটেল রেজিস্টারে তার নাম মো. বশির হাওলাদার ও ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার তালতলী এলাকার মৃত সিরাজ মিয়ার পুত্র বলে লিপিবদ্ধ করেন। ম্যানেজার আরও জানান, রুম ভাড়া নেয়ার এক ঘন্টাপর অপর এক যুবক হোটেলে আসলে বশির ওই যুবক তার পরিচিত বলে রুমে নিয়ে যায়। এরপর থেকে বুধবার রাত নয়টা পর্যন্ত হোটেলের ১০৩ নাম্বার কক্ষ তালাবদ্ধ থাকায় তাদের সন্দেহ হয়।

কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, খবর পেয়ে তারা হোটেলের কক্ষের তালা ভেঙ্গে বশির নামের ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করেন। তিনি আরও জানান, হোটেলের রেজিষ্টারের ঠিকানা অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে কোন মিল পাওয়া যায়নি। ফলে নিহতের সঠিক পরিচয় এখনও মেলেনি। লাশের ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
হারিয়ে যাওয়া ছেলেটিকে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করলো বরিশাল সমাজসেবা অফিস

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সরমহল গ্রামে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সাগর (৯) নামের একটি ছেলেকে পাওয়া গেছে। ছেলেটিকে নলছিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উদ্যোগে বরিশালের সমাজসেবা কার্যালয়ে পাঠানো হয়। বরিশাল সমাজসেবা অফিসের স্টাফ বশীর আহম্মেদ জানান, গত শুক্রবার ঢাকার মোহাম্মদপুরের আদাবর হাউজিং সোসাইটির নবোদয় এলাকার মোহাম্মদপুর তালিমুল কুরআন মাদ্রাসা থেকে হারিয়ে যায় ছেলেটি। সে ওই এলাকার মো. হিরু ইকবালের ছেলে। তাকে নিতে দেরি হওয়াতে সে রাগ করে সদরঘাট গিয়ে ঝালকাঠির লঞ্চে উঠে পরে।

পরে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সরমহল গ্রামের সোহেল ফরাজী ছেলেটিকে পেয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে হস্তান্তর করে। পরে তাকে সমাজসেবার আওতাধীন বরিশাল রূপাতলীতে অবস্থিত শেখ রাসেল দু:স্থ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে হস্তান্তর করা হয়। বাবা হিরু ইকবাল ছেলেকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর বরিশাল রূপাতলীতে অবস্থিত শেখ রাসেল দু:স্থ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে যোগাযোগ করে। বুধবার সকালে বরিশাল সমাজসেবা অফিসের উপ-পরিচালক মনোজ কুমার ঘরামী হারিয়ে যাওয়া ছেলে সাগরকে তার বাবা হিরু ইকবালের কাছে হস্তান্তর করে। এসময় উপস্থিত ছিলেন শেখ রাসেল দু:স্থ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপ-প্রকল্প-পরিচালক মো. আবু জাফর, বশীর আহম্মেদসহ অন্যন্য কর্মকর্তাবৃন্দ।

সেশন চার্জ কমানোর দাবিতে বিএম কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ফরম পূরণে বর্ধিত সেশন চার্জ কমানোর দাবিতে বিএম কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকালে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শেষে তারা কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়ে বর্ধিত সেশন চার্জ কমানোর দাবি করেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, গত বছরের চেয়ে চলতি বছর ৭০০ টাকা বাড়িয়ে সেশন চার্জ করা হয়েছে আড়াই হাজার টাকা। এর সাথে অন্যান্য চার্জও বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেকারণে ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণে সব মিলিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে ২ হাজার টাকা।

কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ফজলুল হক জানান, সেশন চার্জ বৃদ্ধির বিষয়টি তাদের নয়, এটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবী নিয়ে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যলয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই