কীর্তনখোলার ভয়াবহ ভাঙ্গনে হুমকির মুখে স্কুলসহ অর্ধশত পরিবার

কল্যাণ কুমার চন্দ,বরিশাল : কীর্তনখোলা নদীর আকস্মিক ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে নগরীর কালিজিরার উত্তর জাগুয়া এলাকা। গত ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া ভাঙ্গনে ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বিপুল সংখ্যক জমি ও বসতভিটা। এখনো হুমকির মুখে রয়েছে একটি মাধ্যমিক, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার। উপায়অন্তুর না পেয়ে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে বাঁচতে বাড়ি ঘর সরিয়ে নিচ্ছেন ভূক্তভোগীরা।

ক্ষতিগ্রস্থরা অভিযোগ করেন, একটি ওষুধ কোম্পানির অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মানের ফলে নদীর পানি প্রবাহে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। যেকারণে উত্তর জাগুয়ার ওই এলাকায় নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। অপরদিকে অর্থ বরাদ্দ না থাকার অজুহাতে ভাঙ্গন প্রতিরোধে জরুরী কোন পদক্ষেপ নিতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা শুধু নিরব ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

কীর্তনখোলার ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাওয়া ঘর মালিক আব্দুর জব্বার মোল্লা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই নগরীর ২৬নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ জাগুয়া নামকস্থানে কীর্তনখোলা নদীর তীর ভাঙ্গন অব্যাহত ছিলো। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বাঁধ নির্মানের আশ্বাস দেয়া হলেও ভাঙ্গন থেমে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরইমধ্যে গত ১৪ ও ১৫ নভেম্বর আকস্মিকভাবে ওইস্থানে ভাঙ্গন শুরু হয়। দুইদিনের ভাঙ্গণে তিনি (জব্বার মোল্লা) সহ মান্নান মোল্লা, সামছুল হক মোল্লা, রাজ্জাক মোল্লা, হেলাল মোল্লা, জলিল মোল্লা, গফ্ফার মোল্লা, আব্দুল মালেকের ঘর বাড়ি নদী গ্রাস করে নিয়েছে।

২৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ ফরিদ উদ্দিন হাওলাদার জানান, গত ১৪ নভেম্বর থেকে ভাঙ্গন শুরু হলেও ওইদিন রাতে কয়েকটি স্থানে হালকা ভাঙ্গন দেখা দেয়। তবে ভাঙ্গন তীব্রতর হয় ১৫ নভেম্বর সকাল থেকে। প্রথম দফায় বিশাল অংশ নদী গ্রাস করে নেয়। পরবর্তীতে রাত নয়টার দিকে পুর্ণরায় ভাঙ্গন শুরু হয়। ভাঙ্গন তীব্রতর হওয়ায় নদীর তীরবর্তী অধিকাংশ বাসিন্দারা তাদের ঘর বাড়ি ও মালামাল নিরাপদস্থানে সরিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন পর হঠাৎ করে নদী ভাঙ্গনের খবর পেয়ে সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল ১৫ নভেম্বর ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি নদী ভাঙ্গনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথাও বলেছেন। বিসিসি থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র আহসান হাবিব কামাল।

স্থানীয় সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর সেলিনা বেগম বলেন, একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মান করায় নদীর জোয়ার ভাটার পানি দক্ষিণ জাগুয়া এলাকা থেকে সঠিকভাবে প্রবাহিত হতে পারছে না। বাঁধের কারনে বাঁধাগ্রস্থ হয়ে ভাঙ্গন এলাকার ওইস্থানে পানির চাঁপ সৃষ্টি হয়ে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। কাউন্সিলর আরও বলেন, ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ঘিরে একটি মাধ্যমিক এবং একটি প্রাথমিক শিক্ষাসহ একটি মসজিদ, সরকারি পাকা রাস্তা ও প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার এখনও ভাঙ্গণের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা বাবুল আক্তার বলেন, ভাঙ্গন প্রতিরোধে এই মুহুর্তে কোন অর্থ বরাদ্দ না থাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই