মোদি যেভাবে পেলেন মমতার মন

দুজনই প্রধান। একজন দেশের, আরেকজন রাজ্যের। তাঁরা হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুজনের নামই ম দিয়ে শুরু। কিন্তু ম দিয়ে শুরু মনের বেলায় মিল নেই। রাজনীতির মাঠে দুজন দুই প্রান্তে। মোদি কিছু বললে মমতা কটাক্ষ করেন। মমতা কিছু বললে মোদি পাত্তা দেন না। এই যখন অবস্থা, তাহলে পার্লামেন্টে সদ্য পাস হওয়া সীমান্ত বিলে তাঁরা একমত হলেন কী করে?

এ ক্ষেত্রে মোদি কীভাবে মমতার মন পেলেন, তা বিরাট এক রহস্য।

টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের প্রতিবেদনে এই রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, মোদি-মমতার মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সীমান্ত বিল।

আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে, এই চুক্তি বাস্তবায়নে কেন্দ্রের কাছ থেকে বিপুল অর্থসহায়তা পাওয়ার আশ্বাসে দিদির মন গলে।

সীমান্ত চুক্তির ব্যাপারে প্রথম দিকে অনাগ্রহী ছিলেন মমতা। কিন্তু পরে অবস্থান পরিবর্তন করেন তিনি। বিশ্লেষকদের মতে, শেষ পর্যন্ত টাকায় কাজ হয়েছে। বিপুল ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা বিবেচনা করে নিজের মত বদলেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী।

৭ মে ভারতের লোকসভায় সর্বসম্মতিতে সীমান্ত বিল পাস হয়। ওই দিন কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ পার্লামেন্টে আশ্বস্ত করে বলেন, ক্ষতিপূরণ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গকে ৩ হাজার ৯ কোটি রুপি দেওয়া হবে। এই অর্থের মধ্যে ৭৭৫ কোটি রুপি ব্যয় হবে অবকাঠামো নির্মাণ খাতে। আর চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে যাঁরা ভারতে আসবেন, তাঁদের জন্য বাকি ২ হাজার ২৩৪ কোটি রুপি।

মাত্র এক মাস আগেও সীমান্ত চুক্তির ব্যাপারে মমতার মনোভাব অনুকূল ছিল না। গত ৩১ মার্চ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের তিন বিঘা করিডোর পরিদর্শন করেন। এ সময় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান মমতা। এটা রাজনাথ সিংয়ের রাষ্ট্রীয় নাকি রাজনৈতিক সফর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ ছিল, রাজ্য সরকারের সঙ্গে আগেভাগে কোনো আলোচনা না করেই তিন বিঘা করিডোর পরিদর্শনে গেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

রুদ্রমূর্তির এই মমতাই পরে সীমান্ত চুক্তির ব্যাপারে হাসিমুখে কেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিপুল অর্থসাহায্য পাওয়ার আশ্বাসে তাঁর রূপ বদলেছে।
এর পরের ঘটনাবলি আরও নাটকীয়। গত সপ্তাহে দুদিনের সফরে পশ্চিমবঙ্গে যান মোদি। সফরের প্রথম দিন কলকাতার নজরুল মঞ্চে মমতার সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি ঢাকা সফরে তাঁর সঙ্গী হতে মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। সানন্দে সেই অনুরোধ গ্রহণ করেন মমতা।

পশ্চিমবঙ্গ সফরের সময় মঞ্চে পাশাপাশি বসে কেন্দ্র ও রাজ্যের উন্নয়নে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান মোদি। মমতাও বলেন একই কথা। সুযোগ পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নানা দাবি জানান মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যটিকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন মোদি। তিনি মমতার প্রশংসাও করেন।

মোদির মুখে মমতার প্রশংসা! অনেকের কাছে এ এক তাজ্জব ঘটনা। এই তো মাস কয়েক আগেও দুজনের মধ্যে ছিল সাপে-নেউলে সম্পর্ক। অথচ লাভ-ক্ষতির নানা হিসাব-নিকাশের বদৌলতে তাঁরা এখন পরস্পরের কাছাকাছি।



মন্তব্য চালু নেই