সাগরে ভাসছে আরো ৮ হাজার

বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মানবপাচারকারীরা। কোনোভাবেই তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না। সাগর পথে তাদের এই বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের শিকার হয়ে প্রায়শই প্রাণ হারাচ্ছে শত শত মানুষ। গত রবি ও সোমবার মালয়েশীয় ও ইন্দোনেশীয় উপকূলে ১৬০০ অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে দেশ দু’টির পুলিশ। খবর বেরিয়েছে থাই উপকূলের কাছে সাগরে আরো ৮ হাজার অবৈধ অভিবাসী ভাসছে, যারা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নাগরিক।

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) বার্তা সংস্থা বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছে থাইল্যান্ডের উপকূলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ৮ হাজারের বেশি অভিবাসী নৌকায় সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে। এসব অভিবাসীর গন্তব্য থাইল্যান্ড। থাই সরকার পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করায় তারা সেখানে পৌঁছতে পারছে না।

খবরে বলা হয়েছে, সাগর পথে গত ২ দিনে অন্তত ২০০০ অভিবাসী মালয়েশিয়া অথবা ইন্দোনেশিয়া পৌঁছেছে। এদের অনেকে সাঁতরে তীরে উঠেছে। আবার অনেককে পুলিশ উদ্ধার করেছে। পাচারকারীরা তাদের উপকূলের কাছাকাছি জায়গায় নেমে যেতে বাধ্য করেছিল।

এশিয়া প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চলের আইওএম মিশনের প্রধান জেফ ল্যাবোভিৎজ বিবিসিকে বলেছেন, থাইল্যান্ডের দক্ষিণে গভীর জঙ্গলে বিভিন্ন পরিত্যক্ত ক্যাম্পে গত সপ্তাহে বহুসংখ্যক অবৈধ অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনার পর থাই পুলিশ মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। এ কারণেই পাচারকারীরা তাদের নৌকাগুলো সাগরে ভাসিয়ে রেখেছে।

দালালদের প্ররোচনায় ভাগ্যান্বেষণে প্রতি বছরই হাজার হাজার বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা নাগরিক মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য সাগরপথে পাড়ি জমায়। পাচারকারীরা প্রথমে তাদের থাইল্যান্ডে নিয়ে যায়। পরে তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে মালয়েশিয়া কিংবা ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে ছেড়ে দেয়।

গত সপ্তাহে থাইল্যান্ডের দক্ষিণে রাবার বাগানে এক গণকবরের সন্ধান পায় পুলিশ। সেখানে বেশ কয়েকজনের লাশ উদ্ধারের পর টনক নড়ে থাই কর্তৃপক্ষের। প্রধানমন্ত্রী প্রেয়ুথ চান-ওচা পরে নির্দেশ দেন রাবার বাগান এলাকায় অবৈধ অভিবাসীদের আটকে রাখার ক্যাম্পগুলো ১০ দিনের মধ্যে খুঁজে বের করতে।

ল্যাবোভিৎজ বলেন, থাই সরকারের কড়াকড়ির কারণে ধারণা করা হচ্ছে অবৈধ অভিবাসী বোঝাই অনেক নৌকা সাগরে আটকে রাখা হয়েছে। কিছু নৌকা সাগর পথে রয়েছে। আবার কিছু অভিবাসীদের সুবিধামতো নামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু বিভিন্ন দেশে কড়াকড়ির ফলে পরিস্থিতি এখন এমনটা দাঁড়িয়েছে যে, পাচারকারীদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করছে আরাকান প্রকল্প। প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের ধারণা অন্তত ৮ হাজার অভিবাসী এখনো সাগরে ভাসছে। তারা এই সংখ্যাটির সত্যতা যাচাই করতে না পারলেও তা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করেন।

মালয়েশিয়ান কর্মকর্তারা সোমবার জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ১০১৮ জন অভিবাসী ল্যাঙ্গকাভি দ্বীপে অবৈধভাবে অবতরণ করে। পরে তাদের আটক করা হয়। মালয়েশীয় পুলিশ জানিয়েছে, পাচারকারীরা তাদের থাইল্যান্ড নিয়ে যাচ্ছিল।

ইন্দোনেশীয় কর্তৃপক্ষ রোববার আচেহ প্রদেশ থেকে ৬০০ এবং সোমবার আরো ৪০০ জনকে উদ্ধার করে।



মন্তব্য চালু নেই