মমতার বলে মোদির ওভার বাউন্ডারি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সম্পর্ক কয়েক মাস ধরে শীতলই বলতে হবে। সেই শীতল সম্পর্কের কিছুই আঁচ করা গেলো না শনিবার। দুই প্রাজ্ঞ রাজনীতিক পরিস্থিতিকে উপভোগ্য করে তুলেছেন সবার জন্য।

শনিবার মোদি পশ্চিম বঙ্গে নজরুল বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। দুই দিনব্যাপী পশ্চিমবঙ্গ সফরে গতকাল গরিব ও মধ্যবিত্তদের কল্যাণে তিনটি জনকলাণ স্কিম ঘোষণা করেন তিনি।

বিরোধ থাকলেও অনুষ্ঠানে তারা সৌজন্যতা বজায় রেখেছেন ঠিকই। তবে কেউ কাউকে ছাড় দেননি এতোটুকু।

বলটা প্রথম ছুঁড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীই। কিন্তু ক্রিকেটের ভাষায় ‘মারার বল যে মারতেই হবে।’ মোদি সেটি পাঠান মাঠের বাইরে।

ব্যাংকিং সেবাকে প্রতিটি বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়াকে সরকারের অন্যতম মূল লক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। চালু করেন বিনা আমানতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জনধন প্রকল্প। দু’টি বিমা এবং একটি পেনশন প্রকল্পের উদ্বোধনও করেন তিনি।

কিন্তু নজরুল মঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মোদি সরকারের এই লক্ষ্যকে অনেকটা কটাক্ষ করেন মমতা। বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে সাড়ে তিন হাজার গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত এক হাজার পঞ্চায়েতে ব্যাংকিং সেবার সুবিধাই পৌছেনি। প্রতিটি পঞ্চায়েতে ব্যাংকিং সেবা চালুর জন্য কেন্দ্রকে বারবার বলা হলেও কেন্দ্র কোনো পদক্ষেপে নেয়নি।’

মমতার এই বক্তব্য তার প্রতি যে কটাক্ষ করে বলা তা বুঝতে অসুবিধা হলো না রাজনীতিতে অভিজ্ঞ মোদির। সৌজন্য বজায় রেখেই তিনি বললেন, ‘সমস্যাটি অন্তত ৬০ বছরের। এই সময়ে কেন্দ্রে অনেক সরকার এসেছে। তবে মমতার আস্থা আছে কাজটি পারলে নরেন্দ্র মোদিই পারবে। তাই বলা। আসলে আমি তার দুঃখ বুঝি।’

মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মমতার সঙ্গে তার সম্পর্ক শীতল। আগামীতে মোদির লক্ষ্য হলো পশ্চিমবঙ্গ জয়। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও বিভিন্ন সময়ে তার বক্তব্যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। রাজনীতিতে ঝানু খেলোয়ার মমতাও চান না পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে বিজেপি ঘাঁটি গাড়ুক। নির্বাচনী ময়দানে মোদিকে কোমরে রশি পরিয়ে জেলে ভরার হুমকি দিয়েছেন মমতা। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ৯ মাস তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎও করতে যাননি। এখন পর্যন্ত যোগ দেননি প্রধানমন্ত্রীর ডাকা কোনও বৈঠকে। সারদা কেলেংকারি নিয়ে মমতার কয়েকজন বিধায়ককে তো গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই। মমতা মনে করেন, এসবের পেছনে হাত আছে নরেন্দ্র মোদির।

কিন্তু অনুষ্ঠানস্থলে ছিল না এর ছিঁটেফোটা। নজরুল মঞ্চ থেকে শুরু করে রাজভবন পর্যন্ত গতকাল দুই নেতার মধ্যে বজায় ছিল সৌজন্যের সুর। নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থেকেই এটা করেছেন তারা। এক পর্যায়ে মোদির হাতে রাজ্যের দাবিদাওয়া নিয়ে ৭ পৃষ্ঠার চিঠি তুলে দেন মমতা। মোদিও মন দিয়ে মমতার কথা শুনেছেন। আশ্বাস না দিলেও সৌজন্য রেখেই প্রশংসা করেছেন রাজ্যের কিছু কিছু কাজের।

ঠিক ছয়টায় মঞ্চে আসেন প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিংহ, কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। পাশাপাশি বসেন মোদি-মমতা। মঞ্চে কাগজে ছবি আঁকছিলেন মমতা। উঁকি দিয়ে সেটিও দেখে নেন মোদি। তারা যেভাবে কানের কাছে এসে নিচু গলায় কথা বললেন তাতে কারো মনে হবে না বছরখানেক আগেই ভোটের ময়দানে পরস্পরকে তীব্র আক্রমণ করেছেন তারা।

হয়তো একেই বলে রাজনীতি! সূত্র: আনন্দবাজার



মন্তব্য চালু নেই