বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত বিল লোকসভায় পাস

ভারতের রাজ্যসভায় বুধবার বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল পাসের পর এবার দেশটির রাজ্যসভায়ও সেটি পাস হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ লোকসভায় বিলটি উত্থাপন করেন।

বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম, শিবসেনা, সমাজবাদী পার্টিসহ অন্য দলগুলোর ৪০ জন সংসদ সদস্য বিলটির ওপর আলোচনা করেন। তারা ছিটমহলবাসীদের দুর্দশা, বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস ও ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি নিয়ে কথা বলেন।

সুষমা স্বরাজ বিলটি উত্থাপনের সময় তার বক্তব্যে বলেন, আমরা সব সংসদ সদস্য আজ একসঙ্গে ভোট দিয়ে বাংলাদেশকে বার্তা দিতে চাই, বাংলাদেশ ইস্যুতে আমরা সবাই এক। ১৯৭১ সালের মতো বন্ধুত্বের নিদর্শন রেখে আমরা আবারও বাংলাদেশের পাশে থাকতে চাই।

সুষমা স্বরাজের বক্তব্যের সময় উপস্থিত লোকসভার সদস্যরা বার বার হাততালি দিয়ে ধন্যবাদ প্রকাশ করেন।

এর পর কংগ্রেসের সংসদ সদস্য অধির রঞ্জন চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের খাদ্য, ভাষা, সংস্কৃতি সব বিষয়েই আবেগের সম্পর্ক। আমরাও চাই এ বিল পাস হোক।

দার্জিলিংয়ের বিজেপি সংসদ সদস্য এস এস আলুওয়ালিয়া বাংলায় বলেন, আমি বাংলায় ভাষণ দিচ্ছি কারণ দুই বাংলার লাখ লাখ মানুষ মিডিয়ার মাধ্যমে শুনছে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী নিজেদের মাটি রক্ষা করতে নিজেদের জীবন দেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বলেছিলেন, ইতিহাস পরির্বতন করা যায় কিন্তু ভূগোল পরিবর্তন করা যায় না। তাই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভূগোল পরিবর্তন করার প্রশ্ন আসে না, তবুও এনডিএ সরকার আজ ভূগোল পরিবর্তন করছে। এতে আমি সমর্থন করব।

উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য মুলায়ম সিং যাদব বলেন, হিন্দুস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিয়ে একক শক্তি গড়ে তোলা দরকার। তাহলে সীমানায় গণ্ডগোল হবে না। সাধারণ মানুষ সেটাই চায়। কিন্তু একদল কুচক্রী এটা চায় না।

তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য সুগত বসু বলেন, ১৯৪৭ সালের দেশভাগ অনেক বির্তক তৈরি করেছে যা আজও আমরা বয়ে নিয়ে চলেছি। আজ তা মেটানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাতে আমি খুশি।

এর আগে বুধবার বিকেলে ভারতের রাজ্যসভায় বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল পাস হয়। ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বিলটি উত্থাপন করলে ১৭৮ সংসদ সদস্যের সবার সম্মতিক্রমে সেটি পাস হয়। মঙ্গলবার ভারতের মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বিলটির অনুমোদন দেওয়া হয়।

এর ফলে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ছিটমহল বিনিময় সম্ভব হবে। ১৫২টি ছিটমহলের বাসিন্দারা পাবে তাদের দেশ ও নাগরিক অধিকার।

১৯৭৪ সালের ১৬ মে দিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রটোকল চুক্তি সই হয়। চুক্তিতে ভারত ও বাংলাদেশ নিজ নিজ দেশের অভ্যন্তরে ছিটমহল বিনিময়ে সম্মত হয়। ভারতে বাংলাদেশি ছিটমহল রয়েছে ৫১ টি, যার মোট এলাকা প্রায় ৭ হাজার ১১০ একর। অন্যদিকে বাংলাদেশের মধ্যে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে; সেই জমির পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার ১৬০ একর জমি। ছিটমহল হস্তান্তর হলে ভারত পাবে ৭ হাজার একর জমি। বাংলাদেশ পাবে প্রায় ১০ হাজার একর জমি।



মন্তব্য চালু নেই