কার্গো উদ্ধারে গতি নেই

সুন্দরবনের ভোলা নদীর মরাভোলার চরে ডুবে যাওয়া রাসায়নিক সারবাহী কার্গো এমভি জাবালে নূরকে এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বনভিাগের উদ্ধারকারী যান না থাকায় কার্গোটি উদ্ধার করতে পারছে না তারা। সেটি উদ্ধার করতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) সাহায্য চেয়েছে।

এদিকে, জোয়ার-ভাটার টানে সার সুন্দরবনের নদী ও খাল এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় তা ভাসতে দেখা গেছে।

ডুবে যাওয়া কার্গোতে থাকা রাসায়নিক সার যাতে নদীর পানিতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য একটি পাম্প মেশিন ভাড়া করে আনা হয়েছে। তবে তারা কাজ শুরু করতে পারেনি।

গত সোমবার বিকেলে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের মরাভোলার ডুবো চরে ৭০০ মেট্রিকটন সারসহ আটকেপড়া কার্গোটি উদ্ধার করতে গেলে তলা ফেটে তা পানিতে নিমজ্জিত হয়।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ অতুল মণ্ডল বলেন, ডুবে যাওয়া কার্গোর সার অপসারণের জন্য একটি পাম্প মেশিন ভাড়ায় আনা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার সকালে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও পাইপ স্বল্পতার কারণে কাজ শুরু করতে পারেনি। এ ধরনের কার্গো উত্তোলনের সরঞ্জামাদি তাদের কাছে নেই। কার্গোটি উদ্ধার করতে বিআইডাব্লিউটিএ’র সাহায্য চাওয়া হয়েছে।

এদিকে, কার্গোর মালিক পক্ষের খোঁজ না থাকায় গোপনে সার আত্মসাৎ করার জন্য স্থানীয় একটি চক্র তৎপর রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সার পানিতে মিশে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে ছড়িয়ে পড়েছে। সারের লাল পুরু আস্তরণ নদীর পানিতে ভাসছে। ঘটনাস্থলে কার্গোর মালিক পক্ষ বা মাস্টার-নাবিক কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পরপরই তারা পালিয়ে গেছে। শত-শত মেট্রিক টন রাসায়নিক সার মিশ্রিত পানিতে অক্সিজেন কমে দ্রুত লবণাক্ততা বেড়ে পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ছে বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. দিলীপ দত্ত জানান, এমওপি রাসায়নিক সার। এটি পানিতে সহজে দ্রবীভূত হয়। বিপুল পরিমাণ সার এক সঙ্গে দ্রবীভূত হয়ে জলজ প্রাণির ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।

সুন্দরবন স্পশৃকাতর এলাকা মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিষয়টি মাথায় রেখে সুন্দরবন বিভাগে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বাগেরহাটের কৃষি বিভাগের উপপরিচালক (ডিডি) মো. জয়নুল আবেদীন ঘটনাস্থল পরির্দশন করে বলেন, পটাশ সার পানিতে মিশলেও চলন্ত মাছ বা ডলফিনের তেমন ক্ষতি হবে না। তবে, শামুক, ঝিনুকসহ ক্ষুদ্র কিছু জলজ প্রাণির ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ডিএফও মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী দাবি করেন, পটাশ সার জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।

সুন্দরবন বিভাগ বুধবার রাতে শরণখোলা থানায় কার্গো ডুবিতে বনের এক কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে কার্গোর মালিক আমিনুল ইসলাম, চালক মো. হাফিজুর রহমানসহ চারজনকে আসামিকে মামলা দায়ের করেছে। শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা এসিএফ কামাল উদ্দিন আহমেদ বাদি হয়ে মামলাটি করেন। কার্গো ডুবির ঘটনা তদন্তে গঠিত পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।

গত ৯ ডিসেম্বর পূর্বসুন্দরবন বিভাগের বাগেরহাটের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে এমটি টোটাল জাহাজের ধাক্কায় ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামে তেলবাহী জাহাজের তলা ফেটে ডুবে যায়। এতে সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়ে ৩ লাখ ৫৭ হাজার লিটার ফার্নেস অয়েল। ২৮ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৭ জানুয়ারি থেকে শুধু দিনের আলোয় ওই নৌপথে নৌযান চলাচল শুরু হয়। তেলবাহী জাহাজ ডুবির ৫ মাস না যেতেই একই রুটে পটাশ সার বোঝাই কার্গো ডুবল।



মন্তব্য চালু নেই