নেপালে এবার ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ইঙ্গিত!
আরও বড় বিপর্যয়ের ইঙ্গিতই দিল নেপাল, বলছেন বিজ্ঞানীরা। আফটারশক নয়। রোববার দুপুরের কম্পনটি নতুন একটা ভূমিকম্প। ৬.৭ রিখটার-মাত্রার কম্পনটির উৎসও সেই নেপালে কাঠমান্ডুর দেড়শো কিলোমিটার দূরে, কোদরায়। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
বিস্ময়কর তথ্য এই যে, কাঠমান্ডুর ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে শনিবার যে ভূমিকম্পটি তৈরি হয়েছিল, তার জেরে রোববার সকাল পর্যন্ত অন্তত তিরিশ বার কেঁপে উঠেছে নেপালের মাটি। ভূ-বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত, সেগুলো সব আফটারশক। এর একটার মাত্রা ছিল ৬.১।
রোববার দুপুরের কম্পনের পরেও প্রাথমিক ভাবে ধরে নেওয়া হয়েছিল, এটাও আফটারশক। কিন্তু সঠিক অবস্থান, মাত্রা ও উৎসস্থল বিশ্লেষণ করে ভূ-বিজ্ঞানীদের মালুম হয়েছে, এটি একটি নতুন ভূমিকম্প। ঘটনা হল, কোথাও বড় মাপের ভূমিকম্প হয়ে গেলে কয়েক দিনের মধ্যে সেখানে আর একটা বড়-সড় ভূকম্প প্রায় নজিরবিহীন।
এ ব্যাপারে আইআইটি খড়গপুরের ভারতীয় ভূকম্প-বিশেষজ্ঞ শঙ্করকুমার নাথের ব্যাখ্যা, শনিবার ভারতীয় প্লেটটি ইউরেশীয় প্লেটের মধ্যে ঢুকে যাওয়ার সময় দু’জায়গায় ফাটল তৈরি হয়েছে। তখন শক্তি নির্গত হয় কাঠমান্ডুর কাছের ফাটল দিয়ে। চব্বিশ ঘণ্টা বাদে অন্য ফাটলটিও নিজের সঞ্চিত শক্তি উগরে দিয়েছে। আর তাতেই নতুন ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে।
এই ভূকম্প-বিশেষজ্ঞর আরও যুক্তি: আফটারশকের মাত্রা সাধারণত দিন দিন কমতে থাকে। তা ছাড়া মূল ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের দেড়শো কিলোমিটার দূরে হওয়া আফটারশকের মাত্রা কখনওই এতটা বেশি হতে পারে না। শুধু তা-ই নয়, এ দিনের ৬.৭ মাত্রার কম্পনের ওই একই জায়গায় কুড়ি মিনিটের ব্যবধানে দু’টি আফটারশকও ধরা পড়েছে সিসমোগ্রাফে। মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৫ ও ৪.৭ রিখটার।
এসব হিসাব-নিকাশে ভূ-বিজ্ঞানীদের ধারণা, মূল ভূমিকম্পের ধাক্কা কাটলেও কাঁপুনি আগামী আরও ক’দিন নেপালের পিছু ছাড়বে না। শনিবারের ভূমিকম্পের আফটারশকের পাশাপাশি এখন দ্বিতীয় ভূমিকম্পের আফটারশক শুরু হয়েছে। তার মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকলেও আগামী সাত দিন রাত-বিরেতে ছোটখাটো কম্পনে নেপালবাসীকে হয়ত আরও তটস্থ হতে হবে।
যে কারণে আফটারশক : বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, একটা বড় ভূমিকম্পের প্রভাবে ভূগর্ভের বিভিন্ন প্লেট অস্থির হয়ে পড়ে। প্লেটে প্লেটে ঘর্ষণ বাড়ে, তাদের অবস্থান বদলায় ঘন ঘন। ফলে তামাম এলাকা বেশ কিছু দিন পর্যন্ত হামেশা কাঁপতে থাকে। ২০০৪-এর সুনামি বিপর্যয়ের এক মাস পর্যন্ত আন্দামানে ঘন ঘন আফটারশক হয়েছে। তবে সেগুলোর কম্পনমাত্রা রিখটার স্কেলে চার-পাঁচের বেশি ছিল না।
তবে নেপালের ক্ষেত্রে ভূ-বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এখানে শুধু যে আফটারশকের তীব্রতা অনেক বেশি হতে পারে তা-ই নয়, ওই তল্লাটে অদূর ভবিষ্যতে ৯ রিখটারের অতি প্রবল ভূমিকম্পেরও প্রভূত সম্ভাবনা।
এ ব্যাপারে শঙ্করনাথের ব্যাখ্যা: হিমালয়ে ভারতীয় প্লেট ও ইউরেশীয় প্লেটের মধ্যে যে তিনটি ‘খোঁচা’ বা ফাটল রয়েছে, তার মধ্যে প্রধান প্রান্তীয় (মেন বাউন্ডারি) খোঁচাটি সবচেয়ে অস্থির। শনিবারের ভূমিকম্প ঘটেছে সেখানেই, যার দরুণ সেটি আরও অস্থির হয়ে গিয়েছে। ফলে ওখানকার দু’টি প্লেটের মধ্যেকার ছোট ছোট ফাটলগুলোতেও শক্তির বিচ্ছুরণ ঘটতে শুরু করেছে। উপরন্তু আর কোথায় কোথায় ফাটল ধরেছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। ওই সব ফাটলে যত শক্তি সঞ্চিত হবে, ততই বাড়বে ভূমিকম্পের আশঙ্কা।
এমতাবস্থায় এখনও ওখানে তেমন বিপর্যয় ঘটেনি কেন, তা ভেবেই বিশেষজ্ঞেরা কিছুটা অবাক। শঙ্করনাথের মতে, নেপালে শনিবারের ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলে যে পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত ছিল, তাতে ৯ মাত্রার কম্পন হতেই পারত। ২০১১-র সেপ্টেম্বরে সিকিমের যে অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়েছিল, তাতে সেখানেও যে কোনও দিন ৯ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প তৈরি হতে পারে।’
হিমালয় অঞ্চলে এ পর্যন্ত ৯ রিখটার মাত্রার ভূমিকম্পের কোনও রেকর্ড নেই। তা সত্যিই কখনও হলে কল্পনাতীত বিপর্যয় হতে পারে বলে হিমালয় সংলগ্ন সব রাজ্যকে বারবার সতর্ক করেছেন ভূ-বিজ্ঞানীরা। শনিবারের নেপাল আবার তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
মন্তব্য চালু নেই