দুই ঢাকায় প্রচারণায় নেই দুই ডজন মেয়রপ্রার্থী
আসন্ন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করলেও মাঠে দেখা যায়নি প্রায় দুই ডজন মেয়র পদপ্রার্থীকে। তাদের অনেকেই আবার ভোট চাচ্ছেন হেভিওয়েট প্রার্থীদের পক্ষে। নিজেদের ‘পোলিং এজেন্ট’ বিক্রি করে দেয়ারও অভিযোগও রয়েছে কোনো কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে। তবে এসব প্রার্থী নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে কোনো আলোচনা লক্ষ্য করা যায়নি।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দক্ষিণে ২০ জন আর উত্তরে ১৬ জন মেয়র প্রার্থী। এদের মধ্যে দক্ষিণে নির্বাচনী মাঠে প্রচার-প্রচারনায় আছেন পাঁচ জন আর উত্তরে সাত জন। তবে উত্তরের চেয়ে দক্ষিণে নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা কিছুটা বেশি।
দক্ষিণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকন, বিএনপি সমর্থিত মির্জা আব্বাসের পক্ষে তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আলহাজ্ব আবদুর রহমান, সিপিবি-বাসদ সমর্থিত বজলুর রশিদ ফিরোজের প্রচারণা চোখে পড়ছে।
অন্যদিকে উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক, বিএনপির তাবিথ আউয়াল, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মাহী বি. চৌধুরী, জাতীয় পার্টির বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল, সিপিবি-বাসদ সমর্থীত আব্দুল্লাহ আল ক্বাফি, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের আ ন ম মাসুদ হোসাইন আল কাদেরির প্রচারণা চোখে পড়ছে।
আর বাকি প্রার্থীদের তেমন চোখেই পড়ছে না। ভোটগ্রহণের আর মাত্র তিন দিন বাকি থাকলেও এসব প্রার্থী রয়েছেন অনেকটা নির্বিকার। যারা মাঠে নেই তাদের প্রায় সবারই জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া অনেকটা নিশ্চিত। অবশ্য মাঠে তৎপর আছেন এমন অনেকের জামানতও বাজেয়াপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপরও দলের অবস্থান জানান দিতেই অনেকে প্রার্থী হয়েছেন।
এদিকে, অনেকটা দায়সারা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন পটুয়াখালীর সাবেক সংসদ সদস্য ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি। প্রচারণার মাঠে এখনও তাকে জনসমক্ষে দেখা যায় নি। তবে দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকার বিজ্ঞাপনে দেখা মিলেছে। শুধু পত্রিকার পাতায় নয়, অনলাইন মিডিয়াতেও সক্রিয় এই প্রার্থী। আংটি প্রতীকে ভোট চেয়ে ইতিমধ্যে ইউটিউবে ভিডিও প্রকাশ করেছেন। এছাড়া একটি জরাজীর্ণ মাইক্রোবাস তার পক্ষে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছে দক্ষিণ ঢাকার কিছু অংশে। ফেসবুকেও বেশ সরব তিনি।
দক্ষিণের আরেক প্রার্থী বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড.এসএম আসাদুজ্জামান রিপন। কোনো ধরনের প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে না কমলা লেবু প্রতীকের এই মেয়র পদপ্রার্থীকে। বিএনপির সূত্র জানায়, কার্যত দক্ষিণে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী মির্জা আব্বাসকে বিশেষ সুবিধা দিতেই তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মুখপাত্র হিসেবে দলীয় দায়িত্ব নিয়ে বেশ ব্যস্ত।
দক্ষিণের অন্য প্রার্থীরা হলেন- দীলিপ ভদ্র (হাতি), আয়তুল্লাহ আখতার (লাউ), শাহীন খান (জাহাজ মার্কা), শহীদুল ইসলাম (বাস), রেজাউল করিম চৌধুরী (টেবিল ঘড়ি), জাহিদুর রহমান (ল্যাপটপ), আব্দুল খালেক (কেক), আবদুর রহমান (ফ্লাস্ক), মোহাম্মদ শফি উল্লাহ চৌধুরী (ময়ুর), মশিউর রহমান (চিতা বাঘ)।
উত্তরের ‘লাউ’ প্রতীক নিয়ে আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির বহিষ্কৃত সদস্য তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর ছেলে চৌধুরী ইরাদ আহম্মেদ সিদ্দিকী। তাকেও গোলাম মওলা রনির মতো সামান্য কিছু এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। এছাড়া এ এলাকার মেয়র প্রার্থী শেখ শহিদুজ্জামান (দিয়াশলাই), সামছুল আলম চৌধুরী (চিতাবাঘ), জামান ভুঞা (টেবিল ঘড়ি), আনিসুজ্জামান খোকন (ডিশ এন্টেনা), মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ (ফ্লাস্ক), কাজী মো. শহীদুল্লাহ, এ ওয়াই এম কামরুল ইসলামের (ক্রিকেট ব্যাট) প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়েনি। তবে এদের মধ্যে কাউকে কাউকে নিজ নিজ বাসার আশে-পাশে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রতিটি নির্বাচনেই এ ধরনের কিছু প্রার্থী থাকে। তারা মূলত কয়েকটি কারণে প্রার্থী হয়ে থাকে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে-
সমঝোতার মাধ্যমে দলীয় একাধিক প্রার্থী করা হয়; যাতে কোনো এক জনের প্রার্থিতা বাতিল হলে অন্যজন নির্বাচন করতে পারেন। আবার অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী তার সুবিধার জন্য ‘ডামি প্রার্থী’ রাখেন; যাতে করে ওই ডামি প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট, গাড়ি, নির্বাচনী ক্যাম্পসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা হেভিওয়েট প্রার্থী নিজের জন্য নিতে পারেন।
অনেকেই আছেন ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক বা এলাকায় প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে প্রার্থী হয়ে থাকেন। অনেক সময় হেভিওয়েট প্রার্থীরা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ভোটে হানা দিতে প্রার্থী রাখেন।
কোনো কোনো সময় ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকেও নির্বাচনে অনেক প্রার্থীর অংশগ্রহণ দেখাতে প্রার্থী দাঁড় করানো হয়ে থাকে।
আরেক শ্রেণীর লোক আছেন যারা ‘এজেন্ট বাণিজ্য’ করার উদ্দেশ্যেই প্রার্থী হন। ভোটকেন্দ্রে পক্ষের এজেন্ট বাড়ানোর জন্য অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী এসব প্রার্থীর এজেন্ট কিনে নেন। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও এমন কয়েকজন আছেন তারা তাদের এজেন্টদের বিপরীতে মোটা অংকের মূল্যও হাঁকছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।
মন্তব্য চালু নেই