সিটি নির্বাচনে রক্তপাতের শঙ্কা
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের দিন প্রভাব বিস্তার, কেন্দ্র দখলে রাখা বা কেন্দ্রের আশেপাশে প্রভাববলয় তৈরি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন কোনো কোনো প্রার্থী। এতে রক্তপাতের আশঙ্কা করছ্নে ভোটাররা। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা দলীয় প্রভাব এবং দলীয় কর্মীদের ব্যবহার করে ভোটারদের উপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নগরীর বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্যে এসব খবর জানা গেছে।
বিশেষ করে গত কয়েকদিন নির্বাচনী প্রচারণায় নামা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে পরপর তিন দফা হামলার পর এমন আশঙ্কা আরো বদ্ধমূল হয়েছে মানুষের মনে। কারণ এসব হামলায় বারবার ছাত্রলীগ-যুবলীগের নামই উঠে এসেছে।
এরইমধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।এসব সহিংসতার ঘটনা ঘটছে মূলত ক্ষমতাসীনদের দুই গ্রুপ ও আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে। শুধু তাই নয় এসব সহিংসতায় পেশাদার সন্ত্রাসী ও খুনীদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগে উঠেছে।
জানা গেছে, প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীরা শুধুমাত্র একে অপরের উপর হামলার মধ্যেই নিজেদের এখন আর সীমাবদ্ধ রাখছেন না। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে জানে মেরে ফেলতে ভাড়া করা হচ্ছে পেশাদার খুনী। এরকমই একটি চক্রকে সম্প্রতি অস্ত্রসহ আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গত মঙ্গল ও বুধবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ি ও কতোয়ালি থানা এলাকা থেকে আটক করা হয় পুরান ঢাকার ডাকাত সর্দার হিসেবে পরিচিত সাগর, দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন, চাঁন মিয়া ও আল আমিনকে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় অস্ত্র ও গুলি। তারা পুলিশকে জানিয়েছে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
এ বিষয়ে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্রের চাহিদা ও দাম দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। আটককৃতরা স্বীকার করেছে তারা দুইজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে হত্যা করতে চেয়েছিল। তাদের এসব তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।
অন্যদিকে নির্বাচনের দিন কোনো প্রার্থী কেন্দ্র দখল আবার কোনো প্রার্থী কেন্দ্র পাহারা দিয়ে আশেপাশে প্রভাববলয় তৈরির জন্যও ভাড়াতে সন্ত্রাসীদের নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা করছে বলেও খবর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। এজন্য আগাম প্রস্তুতি সেরে রাখছেন অনেকে।
সূত্র জানিয়েছে, পুরান ঢাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত একজন কাউন্সিলর প্রার্থী কয়েকটি কেন্দ্র দখলে রাখতে ধানমণ্ডি এলাকা থেকে এরকমই কিছু ‘মাস্তান’ ভাড়া করে ফেলেছেন। আবার ওই ওয়ার্ডেই তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী কেন্দ্র পাহারা দেয়ার জন্য ঠিক করে রেখেছেন ভাড়াটে ‘লোক’।
সূত্র জানায়, কেন্দ্র দখল বা পাহারায় প্রয়োজনে রক্তপাতের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওইসব প্রার্থী। কেন্দ্র দখল বা পাহারা দেয়ার কাজে নিয়োজিত কর্মী বা ভাড়াটে লোকদের জন্য বেশ আকর্ষণীয় প্রতিশ্রুতিও দিয়ে রাখছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। যেমন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে ছাড়িয়ে আনার নিশ্চয়তা, এলাকা ছাড়া হয়ে ২/৩ বছরের জন্য পলাতক থাকতে হলে থাকা-খাওয়ার গ্যারান্টি, সেইসঙ্গে নগদ অর্থের প্রলোভনতো থাকছেই।
গত কয়েকদিনে রাজধানীতে সিটি করপোরেশন নির্বাচন কেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন যতো ঘনিয়ে আসছে তার মাত্রাও বাড়তে শুরু করেছে।
বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী খাজা হাবিবুল্লাহ হাবিবের গাড়িতে আগুন, নির্বাচনী ক্যাম্প ও বাসায় ভাঙচুর করা হয়। খাজা হাবিবুল্লাহ অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা এসব তাণ্ডব চালিয়েছে।
এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী রয়েছেন অ্যাডভোকেট এমএ হামিদ খান এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাংলামোটরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনার পরপর এই হামলার ঘটনা ঘটে।
বুধবারে অপর একটি ঘটনায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের (সূত্রাপুর-নবাবপুর) কাউন্সিলর প্রার্থী জাকির হোসেনের নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুর চালানো হয়। জাকির হোসেন জানান, তার প্রতিদ্বন্দ্বী ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী আবু আহমেদ মান্নাফ দলীয় ক্যাডারদের নিয়ে ৭৯/৮০ নম্বর নবাবপুর রোডের নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় তিনি সূত্রাপুর থানায় একটি অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, আবু আহমেদ মান্নাফ সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি। অন্যদিকে জাকির হোসেন স্থানীয় মহল্লা কমিটির সাধারণ সম্পাদক।
বুধবার রাত ১০টার দিকে লালবাগে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাঊন্সিলর প্রার্থী মোশাররফ হোসেনের (বি কম) বাসা লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায় হাজি সেলিম সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকরা।
একই দিনে লালবাগের নবাবগঞ্জে ‘সুজন’ আয়োজিত নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠানে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে মারামারির ঘটনায় আহত হন সাবেক কমিশনার হুমায়ুন কবির এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আল আমিন।
এর আগে মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হাজী মো. আফসার উদ্দিনের বাসায় গুলিবর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। খিলগাঁও ভূইয়াপাড়ার ২৪০/এ নম্বরের বাসার সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৮টি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে।
মন্তব্য চালু নেই