ট্রায়াল রুম আতঙ্ক!

এই সময়ে কলকাতার নারীদের অন্যতম আতঙ্কের নাম ‘ট্রায়াল রুম’। শপিং মলে পছন্দের কাপড় কিনে মাপ ঠিকঠাক আছে কি না দেখতে গিয়েই পড়ছেন বিপাকে। এখন সংশয়ে কেউ পা বাড়তে চান না ট্রায়াল রুমের দিকে। কারণ ট্রায়াল রুমের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে গোপনে ওঁৎ পেতে থাকে সিসি ক্যামেরা। আর কিছু দুষ্ট মল মালিক সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবি এমএমএস বা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে বাধাচ্ছে চরম বিপত্তি।

গত শুক্রবার থেকে ভারতের গোয়ার জনপ্রিয় পর্যটনস্থল কালাঙ্গুটে একটি সর্বভারতীয় পোশাক ব্র্যান্ডের দোকানে ‘ট্রায়াল রুমে’ খোদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

অবশ্য এমন অভিজ্ঞতা যে শুধু ভারতেরই আছে তা নয়। ২০১১ সালে বাংলাদেশেও এমন একটি কেলেঙ্কারি বাধিয়েছিল বিউটি পার্লার প্রতিষ্ঠান পারসোনা।

সে বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে বনানীর ১১ নম্বর সড়কের পারসোনা বিউটি পার্লারে ‘স্পা’ করাতে যান একজন নারী চিকিৎসক। সেখানে একটি কক্ষে তিনি পোশাক পরিবর্তনের পর কক্ষের ভেতরে লুকিয়ে রাখা সিসিটিভি দেখতে পান।

এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় দেশের গণমাধ্যমগুলোতে। দেশের শপিংমলগুলোতে তখন থেকে ‘ট্রায়াল রুম আতঙ্ক’ বেশ একটা আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। বিউটি পার্লার বা শপিংমলের ট্রায়াল রুম নিয়ে এখনো সংশয়ে পড়তে হয় এদেশের নারীদের।

গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী স্মৃতি ইরানির ঘটনার পর ভারতের সর্বত্র আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে ‘ট্রায়াল রুম আতঙ্ক’। রোববার কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা এ নিয়ে নাতিদীর্ঘ একটা রিপোর্টও ছেপেছে।

তাতে আনন্দবাজার লিখেছে, শনিবার দুপুরে কলকাতার প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটা শপিংমলে পোশাক ব্র্যান্ড ‘ফ্যাব ইন্ডিয়া’র বিপণীতে পোশাকের মাপ নিয়ে ৩৫ বছরের বহ্নি দাশগুপ্ত নামের এক নারী দ্বিধায় পড়েন। এসময় দোকানের কর্মী তাকে ট্রায়াল রুমে যাওয়ার পরামর্শ দিতেই রীতিমতো আঁৎকে উঠেন তিনি। দোকানের কর্মীদের ফিতে দিয়ে মাপ সেরে নেয়ার আর্জি জানিয়ে বহ্নি বারবার বলতে থাকেন, ‘রক্ষা কর! যা সব হচ্ছে ওখানে, আমি অন্তত ট্রায়াল রুমের ছায়া মাড়াবো না।’

শুধু তাই নয়, দক্ষিণ কলকাতার একটা নামকরা রিটেল চেনে মেয়েকে অন্তর্বাস কিনে দিতে গিয়ে রীতিমতো গোয়েন্দার ভূমিকায় দেখা গেলো আরেক নারীকে। মেয়ে ট্রায়াল রুমে ঢোকার আগে মা নিজেই গম্ভীর মুখে ভেতরটা জরিপ করে দেখে এলেন।

জানা গেছে, শপিংমলগুলোতে নিরাপত্তার কারণেই সিসি টিভির উপস্থিতি এখন প্রায় বাধ্যতামূলক। ৬/৭ বছর আগে থেকে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় এই প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ভারতের নাগরিক জীবনে।

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে ইন্টারনেট জগতে এখন গোপন ক্যামেরার নজরদারি এড়ানোর নানা পরামর্শও ঘুরপাক খাচ্ছে। গোয়ার ঘটনার জের ধরে শনিবার কলকাতা শহরে লালবাজারের বিভিন্ন থানাকে শপিংমলগুলোর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়। ওইদিন বিকেলে কলকাতা পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় বস্ত্র বিপণীগুলোতে হানা দেয়।

পিয়ালী বসু নামের এক নারী দমদম থেকে কেনাকাটা করার জন্য এসেছিলেন সল্টলেকের এক বিপণীবিতানে। তিনি বলেন, ‘এতোদিন গল্প শুনতাম অনেক দোকানে বা হোটেলের ঘরে এই রকম হয়। এবার তো হাতেনাতে প্রমাণ পেলাম। তা হলে কি মেয়েদের ট্রায়াল রুমে ঢোকার আগে ইলেকট্রিশিয়ানকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে?’

বন্ধুর জন্মদিনে বেড়াতে আসা রূপা নামের এক তরুণী জানান, নামী ব্র্যান্ডের দোকানেই যদি ক্রেতাদের সম্মান নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলা হয়, তাহলে অপেক্ষাকৃত ছোট দোকানগুলোতে ট্রায়াল রুমের নামে কী চলছে কে জানে?

অবশ্য একাধিক ছোট দোকানের মালিক দাবি করেছেন, তাদের দোকানে এমন ঘটনা ঘটার আশঙ্কা কম। কারণ সেখানে সিসিটিভি কম থাকে বা থাকেই না। তারা জানান, আসলে অনেক দোকান কর্মীর সংখ্যা না বাড়িয়ে ক্যামেরা দিয়ে কাজ চালাতে চাইছে।

কলকাতার নামী ব্র্যান্ড ‘বাইলুম’র বিপণীবিতান রয়েছে সল্টলেকের ওই মলটিতে। সেখানে মোট চারটি সিসিটিভি বসানো। তবে তিনটি ট্রায়াল রুমের ভেতরে একটিও ক্যামেরা নেই। কর্মীরা জানালেন, সিসিটিভি এখন ‘স্টেটাস সিম্বল।’ কোনো দোকানে তা না থাকলে, সে দোকান জাতে ওঠে না। তা বলে পোশাক-বদলের ঘরে ক্যামেরা বসানোর কথা ভাবাই যায় না। এই মলেও ‘ফ্যাব ইন্ডিয়া’র একটি দোকান রয়েছে। সেখানকার কর্মীদের দাবি, দোকানে কোনো দিন কোথাও কোনো ক্যামেরা বসানো ছিল না, ফলে তা নিয়ে কোনো বিতর্ক কখনও হয়নি।

ওই দোকানে শনিবার জামা কিনতে আসা ছাত্রী সঞ্চারি দে অবশ্য বললেন, ‘কারও কথাতেই আর ভরসা রাখতে পারছি না। আমাদের মেয়েদেরই সতর্ক থাকতে হবে। চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।’



মন্তব্য চালু নেই